প্রচ্ছদ

প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে কাঁদলেন সেই বর্ষীয়ান নায়িকা!

১২ জানুয়ারি ২০১৬, ২৩:৪৫

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

48374প্রধানমন্ত্রী অনুদান আনতে রোববার বিকালে গণভবনে যান ষাটের দশকের অভিনেত্রী রাণী সরকার। এসময় রাণী সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় তাঁকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন। রাণীর কান্নায় প্রধানমন্ত্রীও নিজেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। দু’জনেই কাঁদলেন। প্রধানমন্ত্রী শান্তনা দিলেন রাণী সরকারকে এবং সর্বদা পাশে থাকার আশ্বাস দিলেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী রাণী সরকারের হাতে পাঁচ লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়ার পাশাপাশি নগদ ৫০ হাজার টাকা দেন শেখ হাসিনা। এছাড়াও গণভবন থেকে দুই বস্তা চাল, মাছ ও সবজিও তার বাসায় পাঠানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।
এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে রাণী সরকারকে ২০ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
বাংলা চলচ্চিত্রের এই অভিনেত্রী ১৯৫৮ সাল থেকে অভিনয় করেছেন। ১৯৬২ সালে ‘চাঁন্দা’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ২৫০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনীত সিনেমার মধ্যে ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘তালাস’, ‘বন্ধন’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘দেবদাস’ ‘থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার’ উল্লেখযোগ্য।
তার অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি হচ্ছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’।
অভিনেত্রী রাণী সরকারের প্রথম ছবি দূর হ্যায় সুখ কা গাঁও। এই ছবিটি মুক্তি পায় নি। চলচ্চিত্রে আসার পূর্বে তিনি মঞ্চ, বেতারে কাজ করেছেন। তিনি একজন নৃত্য শিল্পী। এইতো জীবন, মালা, ঘূর্ণিঝড় সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে তিনি নৃত্য পরিচালনা করেছেন। প্রয়াত অভিনেতা ওবায়েদ-উল-হক সরকার তার স্বামী। এই অভিনেত্রী জন্ম সাতক্ষীরার সোনাতলা। এক সময়ের প্রতাবশালী অভিনেত্রীর জীবন কাটছে চরম দৈন্যতা।
বাবা মায়ের দেয়া নাম ছিল মোসাম্মত আমিরুন নেসা খানম। চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তাফিজ তার নাম দেন রাণী সরকার। ১৯৬২ সালে ‘চান্দা’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্র জীবন শুরু তার। এরপর তালাশ, বন্ধন, তিতাস একটি নদীর নাম, দেবদাস কত ছবিতেই না অভিনয় করেছেন তিনি।
ফিল্মের মন্দ চরিত্রে অভিনয় করা এই শিল্পী ব্যক্তি জীবনে খুব সরল মানুষ। নিজের মা ও স্বজনদের কথা ভেবে বিয়ে করেননি তিনি।জন্ম সাতক্ষিরায় হলেও অনেক দিন ধরেই বাস ঢাকায়। শেষ জীবনে যখন তিনি নিজের পেট চালাতে পারেন না তখনো মৃত এক ভাইয়ের স্ত্রী, সন্তানদের আগলে রেখেছেন তিনি।
মোহাম্মদপুরের ভাড়া বাসায় তার সাথে আছেন আরো এক ছোট ভাই।
রঙহীন, প্লাস্টার খসে যাওয়া বাসায় বাস সাদা কালো যুগের এক সময়কার দাপুটে অভিনেত্রী রাণী সরকারের। এখন আর সিনেমায় ডাকা হয় না তাকে। শরীরে নানা রোগ বাঁধায় ঘর থেকেই বের হতে পারেন না তিনি। দু’এক জনের মাসিক অনুদানে সংসার চলে তার।
জীবনের এই পর্যায়ে এসে কারো সম্বন্ধে কোনো অভিযোগ নেই অভিনয়ের ‘রাণী’ এক সময়কার ঢাকাইয়া চলচ্চিত্রের ‘প্যাথোজ কুইন’ খ্যাত রাণী সরকারের। শুধু আবেদন, পাশ্ববর্তী দেশে লাঠি হাতেও অভিনয় করে চলছেন কত বয়োবৃদ্ধ অভিনয় শিল্পী। আর আমাদের দেশে বয়স হলেই তার দিকে তাকান না নির্মাতারা।
অভিনয় জগতের মানুষ রাণী সরকার এখন টিভি, সিনেমা দেখেন না। তবে তা রাগ করে নয়। বরং বলা চলে তিনি দেখতে পান না। কঠিন হলেও সত্যি এই অভিনেত্রীর ঘরে একটি টেলিভিশনও নেই। গত এক বছর যাবত তার পুরনো টিভিটা নষ্ট হয়ে আছে। যা মেরামত করার মত অর্থ নেই তার। মোটা কাপড়, ভাত যোগাতেই তার ত্রাহি অবস্থা। তাই টিভি দেখার বিলাস জন্মায় টিভি, মঞ্চ ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী রাণী সরকারের।
সিনেমায় যখন নারী শিল্পীর অভিনয় ছিল দূরহ ব্যাপার তখন এই রাণী সরকাররাই সাহস করে এগিয়ে এসেছিলেন। তাদের হাত ধরেই এত সমৃদ্ধি পেয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র।

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার