‘বিএনপি-জামায়াত উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না’
১২ জানুয়ারি ২০১৬, ২৩:৪২
‘আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিতে চাইলেও তাতে বাধা দিচ্ছে বিএনপি। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিএনপি-জামায়াত সহ্য করতে পারে না।’ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের দুই বছর পূর্তিতে জাতির উদ্দেশে ভাষণকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রী এই ভাষণ দেন। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে তা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে উপর্যুপরি দ্বিতীয় মেয়াদে ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামাত জোট সারাদেশে যে ঘৃন্য ও পৈশাচিক সন্ত্রাস চালায়, তা কোনোদিন বিস্মৃত হওয়ার নয়। তাদের এই নৃশংসতা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসরদের নির্মমতার সাথেই কেবল তুলনা করা যায়।’
তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস-বোমাবাজি উপেক্ষা করে সেদিন আপনারা গণতন্ত্রকে বিজয়ী করেছিলেন। কিন্তু গণতন্ত্র ও উন্নয়ন বিএনপি-জামাত নেতৃত্ব সহ্য করতে পারে না। মানুষ শান্তিতে থাকবে, হাসিমুখে জীবনযাপন করবে, তা ওদের সহ্য হয় না।’
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের এক বছর পূর্তিতে ২০১৫ সালে লাগাতার অবরোধ ডেকেছিল বিএনপি জোট। তিন মাসের ওই অবরোধে নাশকতায় শতাধিকত মানুষের মৃত্যু হয়, পোড়ানো হয় বহু গাড়ি, স্থাপনা। উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করতেই ওই কর্মসূচি ডাকা হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা এবং বিএনপি নেত্রী আদালত হাজিরায় অনুপস্থিত থাকার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামাত অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শুরু করে সারাদেশে তাণ্ডব ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পেট্রোলবোমায় ২৩১ জন নিহত এবং ১ হাজার ১৮০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া ২ হাজার ৯০৩টি গাড়ি, ১৮টি ট্রেন ও ৮টি লঞ্চে আগুন দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘জনগণকে ভোগান্তিতে রেখে, অমানবিক কষ্ট দিয়ে তাদের জীবন বিপন্ন করে বিএনপি নেত্রী নাটক করে ৬৮ জনকে নিয়ে আরাম আয়েশে ৯২ দিন অফিসে থাকেন। হত্যাযজ্ঞ ও তাণ্ডবের হুকুম দেন।’
‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জনসমর্থন পায়নি বলে ব্যর্থতার বোঝা নিয়ে’ আদালতে হাজিরা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ‘নাকে খত দিয়ে’ বাড়ি ফিরেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নাশকতায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নে বিশ্বে রোল মডেল বাংলাদেশ। দেশ এখন উন্নয়নের ঐতিহাসিক দিকসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দল-মত ও বিভক্তির ঊর্ধ্বে উঠে এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বানও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৮ সালে বলেছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করব। ইতিমধ্যেই আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ইনশাআল্লাহ ২০২১ সালের আগেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ খাতে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু এবং চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। মগবাজার-মালিবাগ উড়ালসেতুর নির্মাণকাজ অচিরেই শেষ হবে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে।
পদ্মা সেতু বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ চলছে। ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করবে। পদ্মা সেতু জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ১.২% হারে অবদান রাখবে। দারিদ্র্য বিমোচন হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যসহ শিল্প স্থাপনা বাড়বে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মাওয়া ও জাজিরাকে ঘিরে আধুনিক স্যাটেলাইট শহর গড়ে তুলব। শিবচর, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও কেরাণীগঞ্জ জেগে উঠবে নতুন উদ্যমে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন