উচ্চ আদালতের নির্দেশ : সিলেটে বন্ধ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা
২৩ জানুয়ারি ২০১৬, ০১:১৮
নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে প্রায় ৪ বছর পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে সিলেট বন্ধ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। সেই সাথে সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল সংক্রান্ত রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ব্যাটারিচালিত রিকশা মোটরযান আইন কিংবা সিটি করপোরেশনের আইন অনুযায়ী রুট পারমিট পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ যান্ত্রিক এ যানবাহনের পারমিট একমাত্র বিআরটিএ দিতে পারে। সিটি করপোরেশন কিংবা পৌরসভা এ ধরণের যান্ত্রিক রিকশার পারমিট দিতে পারে না।
২০১২ সালে সিলেট সিলেট ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক যুবলীগকর্মী মো. ওলিউর রহমান সিলেট নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। এরপর অনুমতি পেয়ে ওই সংগঠন রিকশার প্লেইট তৈরি করে সেগুলো বিক্রি করে ৪ বছরে প্রায় ৩-৪ কোটি টাকার বাণিজ্যও করেছেন। বর্তমানে সিলেট নগরীতে প্রায় ৫০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা আছে বলে সিলেট রিকশা মালিক সমাজকল্যাণ সমিতি সূত্রে জানা যায়।
অভিযোগ রয়েছে- ব্যাটারিচালিত মালিক সমিতি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগসহ উচ্চপদস্থ কিছু কর্মকর্তা, সিলেট সিটি করপোরেশনের অসাধু কিছু কর্মকর্তাকে মাস শেষে মোটা অংকের টাকা প্রদান করতো। যার জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগ এদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে কোন ধরনে ব্যবস্থা নেয়নি।
জানা যায়- গত ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের যৌথ বেঞ্চ শুনানী শেষে সিলেট ব্যাটারিচালিত রিকশ মালিক সমিতির রিট খারিজ করে দেন। ফলে সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা আর চলাচল করতে পাররে না।
২০১২ সালে সিলেট সিলেট ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক যুবলীগকর্মী মো. ওলিউর রহমান সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন। রিটের প্রেক্ষিতে আদালত স্থানীয় সরকার সচিব, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র, সিলেটের জেলা প্রশাসক ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের প্রতি রুল জারি করেন।
পরবর্তীতে মামলায় পক্ষ হন সিলেট ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা মালিক-শ্রমিক কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, সিলেট অটোরিকশা ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু তাহের ও সিলেট রিকশা মালিক সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি এমএএম শাহজাহান। সচেতন সিলেটবাসী মনে করেন- দেশের অন্যান্য বিভাগে ব্যাটারিচালিত রিকশাটি বন্ধ রয়েছে। উচ্চ আদালত যখন এগুলো বন্ধ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তখন এগুলো সিলেটে বন্ধ করা হোক। এছাড়াও শহর ও শহরতলীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চার্জ দেয়ার কারণে সরকারের কয়েক কোটি টাকা প্রতিমাসে গচ্ছা যাচ্ছে। আর বিদ্যুতের বিড়ম্বনার কারণেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সিলেটের বাসিন্দাদের।
সূত্রে আরো জানা যায়- ২০১৫ সালের ২১ মে সিলেটে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে জোরালো অভিযানের নির্দেশ দেন প্রশাসনকে কিন্তু প্রশাসন ছিলো নীরব দর্শক। এর আগে ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিলেট সফরে এসে বিমানবন্দর সড়কে ও চণ্ডিপুলে ১০টি অটোরিকশা আটক করে এই যানটি নিষিদ্ধ করেছিলেন। এছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশনের (সাময়িক বরখাস্তকৃত) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
সিলেট রিকশা মালিক সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি এমএএম শাহজাহান বলেন- গত ১৯ জানুয়ারি শুনানী শেষে হাইকোর্টের যৌথবেঞ্চ সিলেট ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতির রিট খারিজ করে দেন। ফলে সিলেটে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে পারবে না।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মো. মোস্তাক আহমদ জানান- সিলেট ব্যাটারিচালিত রিকশা মালিক সমিতির ২০১২ সালে করা রিট পিটিশন নং-১৩৯৯৬ শুনানী শেষে সিলেটে ব্যাটারিচালিত চালিত রিকশা চলাচলে স্থগিতাদেশ খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে সিলেটে এ ধরণের রিকশা চলাচলের কোনো বৈধতা রইলো না।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন- ব্যাটারিচালিত রিকশা সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে একাধিক রিট রয়েছে। আদালত থেকে রিট খারিজের কোনো কাগজ এখনো আমরা পাইনি। আদালতের নির্দেশনা পেলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী এনামুল হাবীব বলেন- এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আমরা এখনো পাইনি।
সিলেট রিকশা মালিক সমাজকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইজার উদ্দিন আহমদ জানান- ব্যাটারিচালিত রিকশার গঠন ও গতিতে সামাঞ্জস্য না থাকায় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষ আহত হন।
গত ৯ জানুয়ারি সিলেট নগরীর কুমারপাড়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সকালের খবরের স্টাফ রিপোর্টার দিপু সিদ্দিকী ও বাংলাভিশনের ক্যামেরাপার্সন বদরুর রহমান বাবরের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দিলে তারা গুরুতর আহত হন। একইভাবে প্রতিদিনই ব্যাটারিচালিত রিকশা নগরীতে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। সমিতির ব্যানারে সিলেট নগরীতে প্রায় ৪ হাজার রিকশা ছাড়া হয়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মুহাম্মদ রহমত উল্লহ বলেন- ব্যাটারিচালিত রিকশা সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে একাধিক রিট রয়েছে। আদালত থেকে রিট খারিজের কোনো কাগজ এখনো পাইনি। আদালতের নির্দেশনা পেলে আমরা সাথে সাথে অ্যাকশনে যাবো।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী এনামুল হাবীব বলেন- এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আমরা এখনো পাইনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ মে সিলেটে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ব্যাটারিচালিত রিকশার বিরুদ্ধে জোরালো অভিযানের নির্দেশ দেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৭ নভেম্বর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সিলেট সফরে এসে বিমানবন্দর সড়কে ও চন্ডিপুলে ১০টি অটোরিকশা আটক করে এই যানটি নিষিদ্ধ করেছিলেন। এছাড়াও সিলেট সিটি করপোরেশনের (সাময়িক বরখাস্তকৃত) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও ব্যাটাারিচালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন