প্রচ্ছদ

মালয়েশিয়ায় বৈধতা পাচ্ছে সাড়ে ৩ লাখ বাংলাদেশী

৩০ জানুয়ারি ২০১৬, ২২:৪৫

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

৩০ জানু ২০১৬ঃ 1-114-500x330মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে অবস্থানরত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ বাংলাদেশীসহ বিদেশী শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। এমন ঘোষণার পরই মঙ্গলবার বন জঙ্গলসহ নানা স্থানে লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের সাথে গতকাল বৃহস্পতিবার যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রবাসীর দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক গতকাল তাদের সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ যত শ্রমিক রয়েছে তাদের বৈধতা দেয়া হবে। তবে কত দিনের মধ্যে অবৈধরা বৈধ হতে পারবে, সে ব্যাপারে দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন, এখানে দুষ্ট লোকের সংখ্যা বেশি। এর আগে মালয়েশিয়া সরকার অবৈধদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। তখন বহু শ্রমিকের পাসপোর্ট, টাকা নিয়ে দালালেরা সটকে পড়ে। এবার যাতে তারা যোগাযোগ না করে সরাসরি হাইকমিশনে যোগাযোগ করে, সে ব্যাপারে তিনি সাধারণ শ্রমিকদের কাছে অনুরোধ জানান।
প্রসঙ্গত ২০০৮ সালে হঠাৎ মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয়। এমন ঘোষণার পর অর্ধলক্ষাধিক শ্রমিকের নামে ঢাকায় কলিং ভিসা আসার পরও তারা আর বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়নি। এ অবস্থায় মালয়েশিয়ায় লোক পাঠানোর নামে মানবপাচারকারী চক্র গড়ে উঠে দুই দেশে। ওই চক্রের সদস্যরা গ্রামের সহজ সরল লোকজনকে স্টুডেন্ট, ট্যুরিস্ট, ভ্রমণ ভিসার নামে মালয়েশিয়া পাঠানো শুরু করে। একপর্যায়ে টেকনাফ দিয়ে ট্রলারে অসংখ্য মানুষকে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেয়। এতে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটে। থাইল্যান্ড আর মালয়েশিয়ার সীমান্তে পাওয়া যায় মানুষের গণকবর। এসব ঘটনার পর মালয়েশিয়া সরকার পেশাভিত্তিক ভিসা ইস্যু শুরু করে। এ ভিসায় শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্টসহ দক্ষ লোক যাওয়ার কথা থাকলেও দেশ থেকে গণহারে অদক্ষ শ্রমিক মালয়েশিয়া যাওয়া শুরু করে, যা এখনো অব্যাহত আছে। এতে অনেকেই সেখানে গিয়ে ঠিকমতো কাজ পাচ্ছেন না। আবার অনেকেই দেশটির বিভিন্ন জেলখানায় আটকে থেকে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব বিষয় ছাড়াও মালয়েশিয়ায় এ মুহূর্তে শ্রমিক সঙ্কট রয়েছে। যার কারণে দেশটিতে থাকা কয়েক লাখ অবৈধ শ্রমিককে বৈধ করার ঘোষণা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা মুকুল আহমেদ প্রবাসীর দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় লাখ লাখ অবৈধ বাংলাদেশী আবারো বৈধ হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে এবার যাতে সবাই বৈধ হওয়ার সুযোগ পান সে ব্যাপারে মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ কমিউনিটির পক্ষ থেকে হাইকমিশনকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে মালয়েশিয়া হাইকমিশনের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে প্রবাসীর দিগন্তকে বলেন, হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম আট মাস আগে এখানে যোগ দেন। এরপর থেকেই তিনি মালয়েশিয়া সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবৈধ শ্রমিকদের কিভাবে বৈধ করা যায় সেই প্রক্রিয়া চার মাস আগে থেকেই তিনি শুরু করেছেন। সেই লক্ষ্যে দেশটির জাহিদ হামিদির সাথে ঘরোয়া বৈঠক করে বাংলাদেশী অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করে নেয়ার প্রস্তাব দেন। এরপরই এ প্রস্তাব গ্রহণ করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরুর কথা জানান। এরই ফল হচ্ছে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বৈধতা দেয়ার ঘোষণা। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি মালয়েশিয়াতে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ অবৈধ শ্রমিক রয়েছে। এখন কোন কোন ক্যাটাগরির শ্রমিক বৈধ হওয়ার সুযোগ পাবেন সেটি বিস্তারিত জানার পরই বলতে পারবে বলে জানান তিনি। তবে সবার আগে দেখতে হবে মালয়েশিয়া সরকার অবৈধদের বৈধ করার জন্য কত দিন সময় বেধে দেয়।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ হাইকমিশনার এ প্রতিবেদককে বলেন, এবার বৈধ করার প্রক্রিয়ায় যেসব কোম্পানিকে দায়িত্ব দেয়া হবে তাদের সাথে আমি ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছি। কারণ বিগত সময়ে মালয়েশিয়া সরকারের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণায় দুই লাখ ৬৪ হাজার অবৈধ শ্রমিক বৈধ হলেও বাকি অনেকেই পাসপোর্ট ও টাকা ঠিক জায়গায় দিতে না পারায় বৈধ হতে পারেনি। অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। এবার দালালেরা সেই সুবিধা যাতে না নিতে পারে সেজন্য বাংলাদেশী কমিউনিটিকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটি এখন চিন্তাভাবনা করছি। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে সবাইকে অনুরোধ জানাব, কেউই যাতে দালালদের শরণাপন্ন না হয়। যেকোনো সমস্যার জন্য সরাসরি হাইকমিশনে যোগাযোগ করে। নতুবা এবারো বৈধ হওয়ার নামে অনেকেই প্রতারিত হতে পারেন বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার