দড়ি লাফে ৭ উপকার!
০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ২২:০৬
স্কিপিং বা দড়ি লাফ আবহমান কাল থেকে বাংলার গ্রাম-গঞ্জ, মফস্বল শহর বা শহরতলির সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাগুলোর একটি। তবে বড় শহরগুলোতে দড়ি লাফ ততোটা জনপ্রিয় নয়। দড়ি লাফ অ্যারোবিক ব্যায়াম হিসেবে অপ্রতিস্থাপনীয়। বড় শহরগুলোতে খেলার মাঠ প্রায় না থাকা যেমন একটি সমস্যা, একই সঙ্গে অভাব রয়েছে পিতামাতাদের সচেতনতার। তবে দড়ি লাফের জন্য মাঠের প্রয়োজন নেই। বাড়িতে সামান্য একটু জায়গাই দড়ি লাফের জন্য যথেষ্ট।
ছেলেমেয়েরা এখন কম্পিউটারের প্রতি এতোটাই ঝুঁকে পড়ছে যে, স্বাভাবিক খেলাধুলোর চর্চা প্রায় বিদায় নিতে বসেছে। খেলা বিনোদনের পাশাপাশি দারুণ ব্যায়াম। শারীরিক পরিশ্রম হয় ও বেশ ঘাম ঝরে, সারা জীবন অন্তত এ ধরনের একটি খেলা নিয়মিত খেলা উচিত। সেটা হতে পারে ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, লন টেনিস, টেবিল টেনিস বা অন্য কোন খেলা। অনুষঙ্গ হিসেবে থাকতে পারে স্কিপিংয়ের মতো হালকা ব্যায়াম। হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং, সাঁতার, দৌড়ানো এগুলো তো আছেই।
তবে একসঙ্গে বেশি নয়। শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে সুস্থ রাখতে যোগব্যায়ামও অপরিহার্য। সঙ্গে মেডিটেশনটা যোগ করে নেয়া যেতে পারে। দিনে আধ থেকে ১ ঘণ্টার চর্চাই শরীর সুস্থ ও সবল রাখার জন্য যথেষ্ট। আর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খেলা ও ব্যায়ামের মাত্রাটাও কমিয়ে আনতে হবে। বয়স অনুযায়ী কতোটুকু ব্যায়াম করতে হবে, তা নির্ধারনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অভিজ্ঞ ক্রীড়াবিদ বা ব্যায়াম প্রশিক্ষকের পরামর্শ নিতে হবে।
আজকের বিষয় যেহেতু দড়ি লাফ, তাই চমৎকার এই ব্যায়ামটির প্রধান ৭টি উপকারিতা নিচে উপস্থাপন করা হলো:
১) অতিরিক্ত ওজন ও পেট কমাতে: মাত্র ৩০ মিনিট দড়ি লাফিয়ে আপনি ৪৫০ ক্যালোরি পোড়াতে পারেন। শুনলে অবাক হবেন যে, ১০ মিনিট দড়ি লাফাতে আপনার যে শারীরিক পরিশ্রম হয়, তা মাত্র ৮ মিনিটে ১ মাইল দৌড়ানোর সমান। পুরো শরীরের অতিরিক্ত ওজন বা পেট যেটাই কমাতে চান, সেটা নিয়মিত স্কিপিংয়ের মাধ্যমে সম্ভব। তাই আজই একটি স্কিপিং রোপ বা লাফানোর দড়ি বানিয়ে নিন বা কিনে নিন। তবে প্রথমদিকে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে যতোটা স্কিপিং করা সম্ভব, ততোটা স্কিপিং করুন। দম অনুযায়ী আস্তে আস্তে সময়টা বাড়ান।
২) সুস্থ-সবল হার্ট ও ফুসফুসের জন্য: হার্ট ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বহুগুণে বাড়িয়ে দেবে নিয়মিত দড়ি লাফের অভ্যাস। দম বাড়াতে, শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া ও ছাড়ার ক্ষেত্রে দড়ি লাফ বেশ কার্যকরী। হার্টও সারা শরীরে বেশি রক্ত সরবরাহ করবে, যা আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশের টিস্যুগুলোতে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও পুষ্টি-উপাদান পৌঁছে দেবে।
৩) মাংসপেশীর গঠন সুন্দর ও বলিষ্ঠ করতে: নিয়মিত স্কিপিংয়ের ফলে আপনার শরীরের ওপরের ও নিচের অংশ অর্থাৎ কোমর থেকে পায়ের পাতার মাংসপেশীর গঠন সুন্দর ও দৃঢ় হয়। ওপরের অংশও বলিষ্ঠ হয় যেহেতু আপনি দড়ি লাফানোর জন্য আপনার হাত ও কাঁধ ব্যবহার করছেন।
৪) নমনীয়তা, ভারসাম্য, সমন্বয় ও মনোযোগ বাড়াতে: দড়ি লাফের অভ্যাসে আপনার শরীর আগের চেয়ে অনেক বেশি নমনীয় হবে এবং আপনার শরীরের ভারসাম্য ও সমন্বয় রাখতে সাহায্য করবে। স্কিপিংয়ের সময় যেহেতু আপনার মস্তিষ্কের দুটি অংশই সমানভাবে সক্রিয় থাকে, সেজন্য যে কোন কাজে আপনার মনোযোগও বাড়তে থাকে।
৫) অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে: স্কিপিংয়ের ফলে আপনার শরীরের হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়, হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং অস্টিওপোরোসিস জাতীয় মারাত্মক সমস্যা থেকে দূরে রাখে।
৬) মসৃণ, উজ্জ্বল ও সজীব ত্বকের জন্য: দড়ি লাফের সময় আপনার ক্যালোরি খরচ হয় এবং অল্প সময়ে পর্যাপ্ত পরিশ্রম হয়। শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে বিষাক্ত উপাদানগুলোর অনেকটাই বেরিয়ে যায়। এতে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা, মসৃণতা ও সজীবতা বৃদ্ধি পায়।
৭) রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও ইতিবাচক মানসিকতার জন্য: যে কোন ব্যায়ামই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্কিপিংটা হতে পারে যে কোন খেলার বেশ সহজ বিকল্প। বেশি সময়েরও প্রয়োজন নেই এতে। কিন্তু, নিয়মিত দড়ি লাফের চর্চাতে আপনার শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যাবে এবং মনও থাকবে স্বতঃস্ফূর্ত, চাঙ্গা, প্রাণবন্ত ও ফুরফুরে। মানসিকতা নেতিবাচক থাকলে, তা হয়ে উঠবে ইতিবাচক। তাই আজ থেকেই স্কিপিংটা আপনার নিত্যদিনের চর্চার তালিকায় যোগ করে নিন এবং সুস্থ থাকুন।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন