প্রচ্ছদ

ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিন আবার জনপ্রিয় করতে নতুন উদ্যোগ

০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ২৩:৩৮

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

moslin৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬: ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই মসলিনের বাজার সীমিত হলেও এর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা মন্দ নয়- বলছেন গবেষকরা।
ঢাকার ঐতিহ্যের কথা আসলেই মসলিন কাপড়ের নাম সবার আগে আসে। এখন থেকে চার-পাঁচশ বছর আগে ঢাকাই মসলিনের কদর ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে।
মসলিনের প্রসঙ্গ উঠলে তার সাথে অনেক গল্পও সামনে আসে। জনশ্রুতি আছে যে একটি মসলিন শাড়িকে দিয়াশলাইয়ের বাক্সে রাখা সম্ভব। যদিও এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ মেলেনা।
দিয়াশলাইয়ের বাক্সে রাখা সম্ভব না হলেও, মসলিনের কাপড়ের সূক্ষ্মতা এবং হালকা আরামদায়কভাব নিয়ে কোন বিতর্ক নেই।
এই মসলিন বিলুপ্ত হয়ছে আজ থেকে অন্তত তিনশ বছর আগে। বিলুপ্ত এই মসলিনকে আবার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ঢাকায় মাসব্যাপী মসলিন উৎসব শুরু হয়েছে শুক্রবার। দৃক গ্যালারি , আড়ং এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই মাসব্যাপী উৎসব।
শতশত বছরের পুরনো এই কাপড়কে আয়োজকরা কেন ফিরিয়ে আনতে চাইছেন?

”আমরা তো রোজ মোটা চালের ভাত খাই- তাই বলে আমরা তো বাসমতি ফেলে দেইনি। সে হিসাবে স্পেশাল জিনিস ফেলে দেওয়া উচিত নয়”- বলেন দৃক গ্যালারির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
মসলিন বিষয়ে গবেষক এবং দৃক গ্যালারির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মনে করেন মসলিন শুধু একটি কাপড় নয়, এটিকে দেখতে হবে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে।
মি: ইসলাম বলেন , “আমরা তো রোজ মোটা চালের ভাত খাই। তাই বলে আমরা তো বাসমতি ফেলে দেইনি। সে হিসেবে একটি স্পেশাল জিনিস ফেলে দেওয়া উচিত না।”
মসলিনের অংশ হিসেবে এখনো পর্যন্ত টিঁকে আছে জামদানী শাড়ি।
মসলিনের দাপট এক সময় ইউরোপের বাজারে থাকলেও, ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের পরে মসলিন আর টিঁকে থাকতে পারেনি। কারণ ইউরোপ জুড়ে তখন বস্ত্রশিল্প প্রসার লাভ করায় মসলিন বাজার হারিয়েছিল। তাছাড়া যে তুলা থেকে মসলিনের সুতা উৎপাদন হতো, সেই তুলার বীজও এখন আর নেই।এক কারিগরের মতে আগের মসলিন উৎপাদন পুরোপুরি সম্ভব না হলেও কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব।

মসলিনের একটা বিশেষ বাজার রয়েছে বলে আয়োজকরা মনে করছেন- তারা বলছেন মসলিন কাপড় এখনও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয়।
উৎসবে আসা একজন কারিগর জানালেন আগের মসলিনে হয়তো পুরোপুরি যাওয়া সম্ভব না হলেও কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব।
এই উৎসব দেখতে অনেক দর্শক এসেছিলেন উৎসবস্থল জাতীয় জাদুঘরে। এদের একজন নুরুল ইসলাম বলছিলেন মসলিনকে তিনি উচ্চবিত্তদের কাপড় বলে মনে করেন।
“এই কাপড় আগের দিনেও রাজা-বাদশারাই পরতেন। এখনও যারা শৌখিন তারাই এটা পরবে। এটা সাধারণ মানুষের কাপড় না।”
ভারত খাদি মসলিন হিসেবে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। কিন্তু এগুলোকে সব বলা হয় বেঙ্গল মসলিন। তাহলে নিশ্চয়ই মসলিনের বাজার আছে।
সাইফুল ইসলাম, গবেষক ও দৃক গ্যালারির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
বিশ্বায়নের এই যুগে যখন দেশে-বিদেশে কাপড়ের হাজারো বৈচিত্র্য আছে, সেখানে মসলিন কতটা প্রাসঙ্গিক?
গবেষক সাইফুল ইসলাম মনে করেন সীমিত হলেও বাজার একেবারে মন্দা নয়। মি: ইসলাম তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন ভারতের একটি গ্রাম মসলিনের নামে বছরে ২৫ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি করছে।
“ভারত খাদি মসলিন হিসেবে বছরে প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। কিন্তু এগুলোকে সব বলা হয় বেঙ্গল মসলিন। তাহলে নিশ্চয়ই মসলিনের বাজার আছে।”
মসলিন কাপড় এখনো ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় বলে উল্লেখ করেছন মি: ইসলাম। তবে এটা কোনদিন সাধারণ মানুষের জন্য জনপ্রিয় হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাণিজ্যিক সম্ভাবনার চেয়ে মসলিনকে ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে দেখছেন আয়োজকরা।
সেজন্যই দর্শকদের সামনে আবার মসলিনকে পরিচয় করিয়ে দেবার এই আয়োজন।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার