প্রচ্ছদ

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের সুনাম সমুন্নত রাখতে সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ২৩:৫৫

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

12713896_1552745268386015_953719493_nপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দেশের সুনাম সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, তাঁর সরকার এক্ষেত্রে কোন রকম অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ড বরদাশত করবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হয় এমন কোন অনাকাঙ্খিত কর্মকান্ড আমরা বরদাশত করবো না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম অক্ষুন্ন থাকবে। যে
যেখানেই নিয়োজিত থাকুন না কেন নিজেদের দায়িত্ব মর্যাদার সঙ্গে পালন করবেন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) ২০১৫-’১৬ কোর্সের গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে এই অনুষ্ঠানে তিনি গ্রাজুয়েটদের মাঝে সনদ বিতরণ করেন।

ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজের কমান্ডডেন্ট মেজর জেনারেল সাজ্জাদুল হক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

মন্ত্রীবর্গ, জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, তিন বাহিনীর প্রধানগন, সংসদ সদস্যবৃন্দ, কূটনীতিক, জ্যেষ্ঠ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত সদস্যদের সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘কোনভাবেই সশস্ত্র বাহিনীর সুনাম প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেয়া হবে না।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতা শুধু দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও অনেক সুনাম কুড়িয়েছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জল করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের শান্তিরক্ষীরা শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষার পাশাপাশি কর্মরত দেশগুলোতে গণতন্ত্রের বিকাশ, আর্থ-সামাজিক, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন ও পুনর্গঠনে ব্যাপক সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি মুন’র উদ্বৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করে বলেছেন, এই কার্যক্রমে বাংলাদেশ নেতৃত্বের স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ।

তিনি বলেন, বিশ্বে মোট শান্তিরক্ষীর ১০ জনের ১ জন বাংলাদেশের। ১৯৮৮ সালে এ মিশন শুরুর প্রথম বছর ‘পর্যবেক্ষক’ থেকে পরবর্তীতে পরিচালিত মোট ৬৬টি মিশনের মধ্যে বাংলাদেশ ৪৫টিতে অংশ নেয়। বর্তমানে পরিচালিত ১৬টি মিশনের ১১টিতে বাংলাদেশের ৮ হাজার ৫০১ শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন ।

সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের জাতীয় সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনী
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় ক্ষমতা কাঠামোর অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান।

জাতির পিতা এই উপলব্ধি থেকে স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে সুশৃঙ্খল ও পেশাদার একটি সশস্ত্র
বাহিনী গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর
অফিসারদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য এই কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয় ।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই স্টাফ কলেজে সেনাবাহিনীর ৪০টি , নৌ বাহিনীর ৩৪টি এবং বিমান বাহিনীর ৩৬টি কোর্স সম্পন্ন হয়েছে। বন্ধুপ্রতীম ৩৮টি দেশের ৯২৭ জন অফিসার এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন।

স্টাফ কলেজটি আন্তর্জাতিক পরিম-লে সামরিক প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে অনন্য এক প্রতিষ্ঠানের সুনাম অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী কলেজের কমান্ড্যান্ট, অনুষদ সদস্য
এবং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।

সামরিক বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণে সরকার ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্টাফ কলেজের বহুতল একাডেমিক ভবনসহ আরও কিছু উল্লেখযোগ্য স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, যা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করবে।

এ বছর মোট ১১ জন মহিলা অফিসার এই কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন,‘ প্রতিবছর মহিলা অফিসারদের সংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। সশস্ত্র বাহিনীতে নারীদের অংশ গ্রহণ বর্তমান সরকারের ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ নীতির সাফল্যের আরেকটি স্বাক্ষর।’

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারী সৈনিকদের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে তাঁর সরকারই প্রথম বারের মতো সেনাবাহিনী এবং পুলিশ প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়।’

গ্রাজুয়েট অফিসারদের সহধর্মিনীগণ প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে বিভিন্ন গঠনমূলক সামাজিক কর্মকা-ে অংশ নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী তাদের প্রশংসা করে বলেন,‘পি এস সি’ ডিগ্রি অর্জনকারীদের স্ত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং উৎসাহের ফলশ্রুতিতে আজ গর্বিত মিরপুরিয়ান।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় দেশের বিভিন্ন দুর্যোগে সেনা সদস্যদের সাহসিকতাপূর্ণ ভ’মিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার মহান দায়িত্ব পালনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি দেশপ্রেমিক এই বাহিনী সিডর ও আইলার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাজরিন ফ্যাশনে অগ্নিসংযোগ ও রানা প্লাজার ধ্বংসযজ্ঞ মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

দেশে বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মায়ানমারের সঙ্গে আইনী লড়াইয়ে আমরা সমুদ্রসীমা বিজয় অর্জন করেছি। ভারতের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় ও স্থল সীমানা নির্ধারণ হয়েছে। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ চলছে।

তিনি বলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জনের পর তাঁর সরকার এখন জনগণের পুষ্টি চাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে।

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার