প্রচ্ছদ

নেলসন ম্যান্ডেলা জীবনী।

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০০:৩২

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

Nelson_Mandela-2008_(edit)রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
দক্ষিণ আফ্রিকার ১৯৪৮ এর নির্বাচনে আফ্রিকানারদের দল ন্যাশনাল পার্টি জয়লাভ করে। এই দলটি বর্ণবাদে বিশ্বাসী ছিলো, এবং বিভিন্ন জাতিকে আলাদা করে রাখার পক্ষপাতি ছিলো।  ন্যাশনাল পার্টির ক্ষমতায় আসার প্রেক্ষাপটে ম্যান্ডেলা সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের ১৯৫২ সালের অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫৫ সালের জনগণের সম্মেলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই সম্মেলনে মুক্তি সনদ প্রণয়ন করা হয়, যা ছিলো দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের মূল ভিত্তি। এই সময় ম্যান্ডেলা ও তাঁর বন্ধু আইনজীবী অলিভার টাম্বো মিলে ম্যান্ডেলা অ্যান্ড টাম্বো নামের আইনী প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। এই প্রতিষ্ঠানটি উকিল নিয়োগ করার মতো টাকা নেই, এমন দরিদ্র কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের স্বল্প মূল্যে আইনগত সাহায্য প্রদান করতো।

ম্যান্ডেলার রাজনৈতিক জীবনের প্রথমভাগে তিনি মহাত্মা গান্ধীর দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী কর্মীরা আন্দোলনের প্রথম দিকে গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের নীতিকে গ্রহণ করে বর্ণবাদের বিরোধিতা করেছিলো।  ম্যান্ডেলাও প্রথম থেকেই অহিংস আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকার ১৯৫৬ সালের ৫ই ডিসেম্বর তারিখে ম্যান্ডেলা সহ ১৫০ জন বর্ণবাদ বিরোধী কর্মীকে দেশদ্রোহিতার মামলায় গ্রেপ্তার করে। এই মামলাটি সুদীর্ঘ ৫ বছর ধরে (১৯৫৬-১৯৬১) চলে, কিন্তু মামলার শেষে সব আসামী নির্দোষ প্রমাণিত হন।

১৯৫২ হতে ১৯৫৯ এর মধ্যে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (এএনসি) এর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে উগ্রপন্থী আফ্রিকানিস্ট উপদলের কৃষ্ণাঙ্গ কর্মীরা বাধা দিতে শুরু করে। আফ্রিকানিস্টরা বর্ণবাদী শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে চরমপন্থী আন্দোলনের পক্ষপাতী ছিলো।  এএনসির নেতা অ্যালবার্ট লুথুলি, অলিভার ট্যাম্বো, ও ওয়াল্টার সিসুলু অনুভব করেন, আফ্রিকানিস্টরা এই আন্দোলনে খুব তাড়াহুড়া করছে, আর তাঁদের নেতৃত্বকে অস্বীকার করছে।

বর্ণবাদ বিরোধী সংগ্রাম
১৯৬১ সালে ম্যান্ডেলা এএনসির সশস্ত্র অঙ্গসংগঠন উমখোন্তো উই সিযওয়ে (অর্থাৎ “দেশের বল্লম”, সংক্ষিপ্ত নাম MK) এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন এই সংগঠনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বর্ণবাদী সরকার ও তার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতী ও চোরাগোপ্তা হামলা পরিকল্পনা ও সমন্বয় করেন। এতে বর্ণবাদী সরকার পিছু না হটলে প্রয়োজনবোধে গেরিলা যুদ্ধে যাবার জন্যও ম্যান্ডেলা পরিকল্পনা করেন।  এছাড়া ম্যান্ডেলা বিদেশে এমকে-র জন্য অর্থ জোগাড় ও সামরিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য কাজ শুরু করেন।

ম্যান্ডেলার সহকর্মী উলফি কাদেশ ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই সশস্ত্র আন্দোলনের ব্যাপারে বলেন, “When we knew that we [sic] going to start on 16 December 1961, to blast the symbolic places of apartheid, like pass offices, native magistrates courts, and things like that … post offices and … the government offices. But we were to do it in such a way that nobody would be hurt, nobody would get killed.” উলফির ব্যাপারে ম্যান্ডেলা বলেন, “His knowledge of warfare and his first hand battle experience were extremely helpful to me.

ম্যান্ডেলা নিজে তাঁর এই সশস্ত্র আন্দোলনকে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে নিতান্তই শেষ চেষ্টা বলে অভিহিত করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা নিপীড়ন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন সফল হবে না বলে তিনি উপলব্ধি করেন এবং এ জন্যই সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নেন।

পরবর্তীকালে ১৯৮০র দশকে এমকে বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করে। এতে অনেক বেসামরিক লোক হতাহত হন।  ম্যান্ডেলা পরে স্বীকার করেন, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাতে গিয়ে এএনসি অনেক সময় মানবাধিকার লংঘন করেছে। বর্ণবাদের অবসানের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন (সত্য ও আপোস কমিশন) এর রিপোর্ট থেকে এএনসির অনেক নেতা এই বিষয়ের তথ্য অপসারণ করতে চেয়েছিলো — ম্যান্ডেলা এর তীব্র সমালোচনা করেন।

২০০৮ এর জুলাই পর্যন্ত ম্যান্ডেলা ও এএনসি কর্মীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা থেকে নিষিদ্ধ ছিলো। কেবল মাত্র নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদরদপ্তরে তাঁদের আসার অনুমতি ছিলো। এর কারণ ছিলো ম্যান্ডেলার ষাটের দশকের সশস্ত্র আন্দোলনের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার তদানিন্তন সরকার ম্যান্ডেলা ও এএনসিকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ঘোষণা করেছিলো। ২০০৮ এর জুলাইতে এসেই কেবল ম্যান্ডেলাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারে প্রণীত সন্ত্রাসবাদীদের তালিকা হতে সরিয়ে নেয়া হয়। চলবে——–

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
18Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার