প্রচ্ছদ

বাহুবল ট্রাজেডি : ‘ছোট ছোট ৪টি কবর পার হয়ে এই স্কুলে আসাটা বেদনার’

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৪:০৩

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

file (3)হবিগঞ্জ সংবাদদাতা : উপজেলার কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ক্লাস্টার ট্রেনিং চলছে সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তাই মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) স্কুল বন্ধ। সরকারি ছুটির বন্ধ ছিল গত দু’দিনও।
এর আগের শনিবারে ৪র্থ শ্রেণিতে রোল কল করছিলেন শিক্ষিকা নাজমুন নাহার। রোল ৪০, তাজেল, রোল ৪০, তাজেল। কোনো সাড়া নেই। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন বলে উঠলো, ‘ম্যাডাম তাজেল তো নেই। মারা গেছে’।
শিক্ষিকা নাজমুন নাহার বলেন, ‘এ কথাটি আমার কাছে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। গত সপ্তাহেও আমার সামনে বসা ছিল তাজেল। খাতায় এখনও তার নাম, রোল। এই খাতায় প্রতিদিনই ওর নাম থাকবে এ বছর’। চোখ ভিজে আসে নাজমুন নাহারের।
স্কুলের ১০০ মিটারের মধ্যেই কবর দেওয়া হয়েছে সুন্দ্রাটিকি হত্যাকাণ্ডে নিহত ৪ শিশুকে। তারা হলো- সুন্দ্রাটিকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া শুভ (৮), তার চাচাতো ভাই প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির মিয়া (৭), চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাজেল মিয়া (১০) ও তাজেলদের প্রতিবেশী সুন্দ্রাটিকি মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাইল মিয়া (৯)।
শিক্ষিকা বলেন, ‘এই পথ দিয়েই আমরা স্কুলে আসি। আসার পথে নিজের ছাত্রদের কবর দেখে বুকের ভেতর হু হু করে কান্না আসে। যতোক্ষণ স্কুলে থাকে আমরা প্রাইমারির শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের নিজের সন্তানের মতোই দেখি। এটা সন্তান হারানোর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়’।
২য় শ্রেণির ছাত্র শুভ’র রোল ছিল ২। নাজমুন নাহার বলেন, ‘বেশ ভালো ছাত্র ছিল। সব কিছু একবারেই শিখতে পারতো। ম্যাডাম, ম্যাডাম বলে এমনভাবে ডাকতো যেন এখনও শুনতে পাই, চোখে ভাসে’।
স্কুলের আরেক শিক্ষিকা নূরে জান্নাত বলেন, ‘ছোট ছোট ৪টি কবর পার হয়ে এই স্কুলে আসাটা যে কতোটা বেদনার সেটা বোঝাতে পারবো না। নিজের ছাত্রদের কবর!’
তিনি জানান, এই স্কুলে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের শিক্ষার্থীই বেশি। এছাড়াও বাগানের (চা বাগান) কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে। সব শিক্ষকরাই সব শিক্ষার্থীদের চেনেন। স্কুলে বর্তমানে ৩৭০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও সবাই রেগুলার নয়। যারা নিয়মিত, তাদের সঙ্গে সবারই খাতির আছে।
মনির মিয়া ভর্তি হয়েছিলো এ বছরই ১ম শ্রেণিতে। খুব মিষ্টি ছিল বাচ্চাটা। ছোট ছোট শব্দে কথা বলতো। মাত্র শুরু করেছে পড়াশোনা। এমন ফুলের মতো শিশুকে কেউ খুন করতে পারে, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় শিক্ষকদের!
দুই শিফটে এই স্কুল চলে। সকাল ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ১ম, ২য় শ্রেণি ও শিশু-১ শ্রেণি এবং ২য় শিফট দুপুর সোয়া ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম শ্রেণির ক্লাস চলে।
সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন এই শিক্ষিকারা। নাজমুন নাহার বলেন, ‘স্থানীয় একটি দৈনিকে আমার বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে, ছাত্রদের স্কুলে আসতে বাধা দেওয়া হতো। এ ধরনের কিছুই আমি বলিনি কাউকে। আমরা অন্য গ্রাম থেকে এসে শিক্ষকতা করি। এসব জানারও কথা নয়’।
অপহরণের ৫ দিন পর বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রাম থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরের ইছারবিল খালের পাশে বালু চাপা দেওয়া অবস্থায় ওই শিশুদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গ্রামের পঞ্চায়েতের দ্বন্দ্বেই শিশুদের হত্যা করা হয় বলে গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দিতে বের হয়ে এসেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার