হবিগঞ্জে ৪ শিশু হত্যা মামলার অন্যতম আসামী বাচ্চু বন্দুকযুদ্ধে নিহত
২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১০:৪০
হবিগঞ্জের বাহুবলের সুন্দ্রাটিকিতে দুই পঞ্চায়েতের দ্বন্দ্বের জের ধরে চার শিশু হত্যা মামলার অন্যতম আসামী বাচ্চু মিয়া র্যা বের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ভোর রাত সাড়ে ৪টার দিকে চুনারুঘাট দেওরগাছ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
র্যাব-৯ শ্রীমঙ্গলের কোম্পানি কমান্ডার কাজী মনিরুজ্জামান জানান, বাহুবলে চার শিশু হত্যার ঘটনায় র্যাাব সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায়। এর অংশ হিসেবে সিলেটের বিশ্বানাথ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে শাহেদ নামে এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ জানান, রাতেই দেওরগাছ এলাকা দিয়ে বাচ্চু ভারতে পালিয়ে যাবে। বিষয়টি জানার পরে র্যাপবের আরেকটি দল ওই এলাকায় অভিযান চালায়। এসময় র্যা বের উপস্থিতি টের পেয়ে বাচ্চু বাহিনী গুলি চালালে দুই র্যা ব সদস্য আহত হন। আত্মরক্ষার্থে র্যা বও পাল্টা গুলি চালালে বাচ্চু মারা যান। ঘটনাস্থল থেকে র্যা ব সদস্যরা একটি নাইন এমএম পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে।
বাচ্চুর মরদেহ বর্তমানে চুনারুঘাট হাসপাতালে রাখা হয়েছে, জানান মনিরুজ্জামান।
এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র কিলিং মিশনে অংশ নেওয়া রুবেল মিয়ার (১৭) স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তুলে ধরে বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত আব্দুল আলী ওরফে বাগল মিয়ার নির্দেশে এ কিলিং মিশনে অংশ নেয় ৬ জনের একটি দল।
উল্লেখ্য, ১২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের মো. ওয়াহিদ মিয়ার পুত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), তার চাচাতো ভাই আব্দুল আজিজের পুত্র তাজেল মিয়া (১০) ও আবদাল মিয়ার পুত্র মনির মিয়া (৭) এবং তাদের প্রতিবেশী আব্দুল কাদিরের পুত্র ইসমাঈল হোসেন (১০) নিখোঁজ হয়। ওইদিন বিকেল বেলা তারা উত্তর ভাদেশ্বর গ্রামে ফুটবল খেলা দেখতে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার ওয়াহিদ মিয়া বাদি হয়ে বাহুবল থানায় সাধারণ ডায়রি করেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে বাহুবল মডেল থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা দায়ের করেন নিখোঁজ এক শিশুর পিতা। এই ঘটনার পর পুলিশের একাধিক টিম ও র্যা ব মাঠে নামে ওই শিশুদের অনুসন্ধানে।
১৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার বিকেলে হবিগঞ্জের পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে নিখোঁজ শিশুদের সন্ধানদাতাকে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা করা হয়।
১৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার সকালে সুন্দ্রাটিকি গ্রামের দিন মজুর কাজল মিয়া প্রতিদিনের ন্যায় বাড়ি থেকে বেড় হয়ে নদীর পাশে মাটি কাটতে গিয়ে মাটিচাপা অবস্থায় ৪ মিশুর লাশ দেখতে পান। পরে লাশগুলো উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত শেষে ওই দিন রাতে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আব্দুল আলী বাগাল, তার ছেলে জুয়েল মিয়া ও রুবেল মিয়া, আজিজুর রহমান আরজু, সালেহ আহমেদ ও বশির মিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে আব্দুল আলী ও তার ছেলে জুয়েল মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে অন্য তিনজনকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ডেরও আবেদন করা হয়। সোমবার রিমান্ডের শুনানি হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাতে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কৌশিক আহমেদ খোন্দকারের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদানকালে গ্রেফতারকৃত আসামি রুবেল মিয়া হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি রবিবার বিকেলে একই আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে রুবেলের ভাই জুয়েল।
রুবেলের স্বীকারোক্তিতে জানা যায়- সুন্দ্রাটিকি গ্রামে বাগাল পঞ্চায়েত এবং তালুকদার পঞ্চায়েতের বিরোধকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এক মাস পূর্বে বাঘাল ও তালুকদার পঞ্চায়েতের মাঝে উভয় পঞ্চায়েতের সীমানায় থাকা একটি বড়ই গাছ কাটা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। পরে বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করা হলেও সিএনজি চালক বাচ্চু মিয়া ও গ্রেফতারকৃত আরজু প্রচÐভাবে সামাজিক হেয় প্রতিপন্ন হয়। এর পর থেকেই তারা পরিকল্পনা করে তালুকদার পঞ্চায়েতের শিশুদেরকে ফেলে হত্যা করবে।
১২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিকেলে যখন পূর্ব ভাদেশ্বর গ্রামে ৪ শিশু ফুটবল খেলা দেখতে যায়। বৃষ্টির জন্য খেলা না হওয়ায় যখন শিশুরা মাঠে ঘোরাফেরা করছিল তখন পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা বাচ্চু মিয়া তাদেরকে বাড়িতে নিয়ে যাবে বলে সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে ওঠতে বলে।
৪ শিশু অটোরিকশায় ওঠলে তাদেরকে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে বাচ্চু মিয়ার গ্যারেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরজু ও রুবেলসহ ৬ জন মিলে তাদেরকে গলাটিপে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে। হত্যার পর লাশগুলো গ্যারেজেই লুকিয়ে রাখা হয়। পরে গভীর রাতে যে স্থান থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয় সেখানে গর্ততে পুঁতে রাখা হয়। এদিকে, জুয়েলের জবানবন্দিতে ঘটনায় ৮ জন ছিল বলে স্বীকার করে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন