বালাগঞ্জের শীতল পাটি শিল্পকে বাঁচাতে নেয়া হয়েছে উদ্যোগ
১২ মার্চ ২০১৬, ১০:৩০
ব্রিটিশ রাজ প্রাসাদে স্থান পাওয়া বালাগঞ্জ শীতল পাটি শিল্পটি আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এক সময়ে বালাগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী এই শীতল পাটিকে প্রাচীন মসলিন কাপড়ের সঙ্গে তুলনা করা হতো। বালাগঞ্জ বাজারে পাটি বিক্রির জন্য আলাদা ‘পাটি বাজার’ বা ‘পাটির গলি’ ছিল। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটি নানা কারণে আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সিলেট অঞ্চলে নতুন বর-কনেকে শীতল পাটিতে বসিয়ে বরণ করা হয়, কিংবা দেশী-বিদেশী ভিআইপি মেহমানসহ সরকারের কর্তা ব্যক্তিরা প্রয়োজনীয় সফরে আসলে তাদের শীতল পাটি উপহার দেয়ার রেওয়াজ এখনো চালু আছে। কারুশিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে অর্জন করে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। শীতল পাটির সেই সোনালী অতিতকে ফিরিয়ে আনতে সরকারিভাবে উদ্যোগে নেয়া হয়েছে। এই শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের সহযোগিতায় নতুন করে শীতল পাটি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় শীতল পাটির অন্যতম কাঁচামাল মুর্তা উৎপাদন, পাটি তৈরির কারিগরও ব্যবসায়ীদের নিয়ে সমিতি গঠনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে বালাগঞ্জ উপজেলা সমবায় অফিসে পাটি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে শীতল পাটির কাঁচামাল মুর্তা উৎপাদনকারী ব্যক্তিরা, শীতল পাটির কারিগর, ব্যবসায়ী ও পাটি শিল্পের উদ্যোক্তারা শীতল পাটি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার বিষয়ে বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। মুর্তার বাগান তৈরি, উন্নত কারুকাজ সম্পর্কে ধারণা প্রদান, সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, বাজার সৃষ্টি, উদ্যোক্তা তৈরির বিষয়ে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান, স্থানীয়ভাবে কারখানা তৈরি ও বিভিন্ন মেলায় সরকারিভাবে শীতল পাটির স্টল দেয়ার দাবি জানানো হয়। কর্মশালায় শীতল পাটি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান মো. খোর্শেদ আলম সংশ্লিষ্টদের দাবি বাস্তবায়ন ও পাটি শিল্পকে স্থায়ীভাবে রূপদানের লক্ষ্যে স্থায়ীভাবে কারখানা করার পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন।
একেকটি পাটির বিভিন্ন নামও রয়েছে। যেমন- সিকি, আধূলি, টাকা, নয়নতারা, আসমান তারা, জোড়া ও ছিড়া প্রভৃতি। নকশা করে বুননে বিভিন্ন কারুকাজ ফুটিয়ে তুলে এ ধরনের একটি পাটি সমবেতভাবে তৈরি করতে ৫-৬ মাস সময় লেগে যায়। ফলে একেকটি পাটির বিক্রি করা হয় ৭-৮ হাজার টাকা মূল্যে। এছাড়া বিশেষ চহিদা অনুয়ায়ী তৈরি পাটিগুলোর মূল্য ১৫-২০ হাজার হয়ে থাকে। মূলত বাড়ির মহিলারাই পাটি তৈরি করে থাকেন।