ইডেনে আজ রোমাঞ্চের ম্যাচ
১৬ মার্চ ২০১৬, ০৮:০৭
শিকারিকে নিয়ে অনিশ্চয়তা। শিকারকে নিয়েও!
সন্ধ্যা নাগাদ দ্বিতীয়টির উত্তর পাওয়া গেলেও প্রথমটি নিয়ে ধাঁধা থেকেই গেল।
সকালে পাকিস্তানের প্র্যাকটিসে নামা দূরে থাক, মাঠেই আসেননি শহীদ আফ্রিদি। জানা গেল, পাকিস্তান অধিনায়ক জ্বরে কাহিল। সেটি না খেলার মতো কি না, এই প্রশ্নটা গুঞ্জরিত হতে হতে ঘণ্টা কয়েকের মধ্যে মিলিয়ে গেল। সন্ধ্যায় পাকিস্তান দলের মিডিয়া ম্যানেজার জানিয়ে দিলেন, আফ্রিদি খেলছেন।
বিকেলে বাংলাদেশের নেটে অনেকক্ষণ বোলিং করলেন মুস্তাফিজুর রহমান। চোটের কারণে ১৪ দিন বিশ্রামে থাকার পর গত পরশু ধর্মশালায় ছোট্ট রানআপে কিছুক্ষণ বোলিং করেছেন। কালও সেভাবেই শুরু। একটু পরই অবশ্য পুরো রানআপে তেড়েফুঁড়ে বোলিং করলেন। মুস্তাফিজ কি তাহলে আজ খেলছেন?
কাল সারা দিন ইডেন গার্ডেনে এটি ‘কোটি টাকার প্রশ্ন’ হয়ে উড়ে বেড়াল। এর আগে কখনো বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার খেলছেন কি খেলছেন না, এ নিয়ে বিশ্ব মিডিয়ার এমন আগ্রহ কি দেখা গেছে? মনে পড়ছে না।
প্রশ্নের উত্তরটা অবশ্য ম্যাচের আগের রাত পর্যন্তও অজানাই থেকে গেল। মাশরাফি মনেপ্রাণে এই ম্যাচে পেতে চাইছেন মুস্তাফিজকে। কোন অধিনায়কই না তা চাইবে! কিন্তু মুস্তাফিজের ফিটনেস নিয়ে সুনির্দিষ্ট উত্তর নাকি কালকের নেটেও পাওয়া যায়নি। আজ ম্যাচের আগে মাঠে আবার তাঁকে দেখে তার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। সংশয় জাগছে, দল থেকে দেওয়া এই অফিশিয়াল ভাষ্যই সত্যি, নাকি হিথ স্ট্রিকের ওই কথাটা! গত পরশু ধর্মশালায় বিমানে ওঠার আগে বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ ওই যে হাসতে হাসতে বলেছিলেন, ‘মুস্তাফিজ খেললেও আমি তা আগে বলব না। পাকিস্তান ভেবে মরুক না!’ গত এপ্রিলে এই পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতেই বিশ্ব ক্রিকেটে আবির্ভূত হয়েছিলেন ‘বিস্ময় বালক’। শহীদ আফ্রিদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর প্রথম শিকার। লেখার শুরুতে ‘শিকারি’ ও ‘শিকার’ লেখার অর্থ পরিষ্কার হলো তো! সেই ম্যাচের পর আফ্রিদির সঙ্গে মুস্তাফিজের আর দেখা হয়নি। আজও হবে কি না অনিশ্চিত। হলে তা রোমাঞ্চকরই হবে।
বাংলাদেশের জন্য আসলে এই ম্যাচটাই রোমাঞ্চকর। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর বিশ্বের বড় বড় সব মাঠেই খেলা হয়ে গেছে, অথচ ঘরের পাশে ইডেন গার্ডেনটাই বাদ ছিল। যেখানে বাংলাদেশের সর্বশেষ এবং একমাত্র ম্যাচটি প্রায় ২৬ বছর আগে। ১৯৯০ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচ একটা কারণে স্মরণীয়ও হয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। বাংলাদেশ যে হেরেছিল, এটা উল্লেখ করার মতো কিছু নয়। বড় দলের বিপক্ষে হার-জিত নিয়ে তখন কে মাথা ঘামায়! তার পরও ম্যাচটা স্মরণীয়, কারণ ওই ম্যাচেই বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার ওয়ানডেতে প্রথম ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন।
সেই ক্রিকেটার এখনো ক্রিকেটের সঙ্গেই আছেন। ধারাভাষ্যকার হয়ে। গত পরশু ধর্মশালা থেকে এক দিনের জন্য হংকং উড়ে গেছেন। বেঙ্গালুরু হয়ে আজ কলকাতায় আসার কথা। ধর্মশালা বিমানবন্দরে সেই সুখস্মৃতি রোমন্থন করতে করতে আতহার আলী খান বলছিলেন, ‘আমি লাকি ছিলাম, তাই ওদিন ওটা হয়ে গেছে। এই দল যেভাবে খেলছে, দেখুন না এবার ওরা কী করে ফেলে!’
বাংলাদেশ কিছু একটা করে ফেলতে পারে, এটা শুধু আতহারেরই কথা নয়। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই এমন একটা রব উঠে গেছে। মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সেমিফাইনাল খেলার সম্ভাবনা নিয়ে একাধিকবার প্রশ্ন হলো। সেটিও করলেন বিদেশি সাংবাদিকেরা।
আফ্রিদির অনুপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন কোচ ওয়াকার ইউনিস। ম্যাচের আগের দিন প্রতিপক্ষ সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলা মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। সেটি ভুলে গিয়ে ওয়াকার বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন। এমনও বললেন, শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এই উত্থান বিশ্ব ক্রিকেটের জন্যও ভালো।
পাকিস্তানের জন্য অবশ্য মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে নামা একটু কঠিনই। সীমিত ওভারের সর্বশেষ ৫টি ম্যাচেই বাংলাদেশের কাছে হারতে হয়েছে। এর মধ্যে দুটি টি-টোয়েন্টিও আছে। একটা কথা অবশ্য বারবারই বললেন ওয়াকার। এটা বিশ্বকাপ এবং এখানে খেলাটা হবে ভিন্ন কন্ডিশনে। মাশরাফিও যা বিনা বাক্যে মেনে নিচ্ছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে সাম্প্রতিক রেকর্ডের কথা তুলে যতবারই তাঁকে দিয়ে বাংলাদেশ ফেবারিট বলানোর চেষ্টা হলো, ততবারই তিনি বললেন, ‘ওতে কিছু আসে যায় না। ইতিহাস দেখুন, পাকিস্তান আমাদের চেয়ে অনেক ভালো দল।’
সেই ‘ভালো দল’কে যে হারানো যায়, গত এপ্রিলের আগে সেটিই অজানা ছিল বাংলাদেশের। একবার হারানো শুরু করার পর ছুটে চলা জয়রথ আর থামেনি। মাঠে শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, সুপার টেনে প্রথম প্রতিপক্ষ বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকলে বাংলাদেশ হয়তো পাকিস্তানকেই নিত।
মাশরাফির মতো সাকিবও অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বিশ্ব ক্রিকেটে অনেক ওলটপালটের মধ্যেও একটা ব্যাপার কখনো বদলায়নি। পাকিস্তান সেই আগের মতোই অননুমেয় দল হয়ে আছে। বিতর্ক যে এই দলের জ্বালানি, এটাও মাশরাফির খুব ভালো জানা। তা বিতর্ক তো এবারও কম হয়নি। এই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসা নিয়ে নাটক, এরপর শহীদ আফ্রিদির কথা নিয়ে তোলপাড়। সংবাদ সম্মেলনে আফ্রিদি বলেছিলেন, পাকিস্তানের চেয়ে ভারতেই নাকি তিনি বেশি ভালোবাসা পান। যেটিকে ভারতীয় দর্শকদের সমর্থন পাওয়ার জন্য বুদ্ধিদীপ্ত এক চাল বলে আফ্রিদির পিঠ চাপড়ে দিয়েছেন সুনীল গাভাস্কার।
কিন্তু পাকিস্তানিরা তা মানলে তো! একটা কিছু হলেই ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেওয়ার ‘রীতি’টা শুধু পাকিস্তান ক্রিকেটেই আছে। শহীদ আফ্রিদির বিরুদ্ধেও আদালতে দেশদ্রোহিতার মামলা হয়ে গেছে এরই মধ্যে। ওটা পাকিস্তানিদের সমস্যা, ওরা সামলাক। বাংলাদেশের একটাই চাওয়া, ইডেন যেন আজ ‘মিরপুর’ হয়ে যায়!
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন