প্রচ্ছদ

পূর্ণাঙ্গ রায়ের পরই নিজামীর মৃত্যু পরোয়ানা জারি

১৬ মার্চ ২০১৬, ০৭:৪৭

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

 

মুক্তিযুদ্ধকালীনFB_IMG_1458092739342 অপরাধের দায়ে একাত্তরের আলবদরপ্রধান মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি গতকাল সন্ধ্যায়ই আপিল বিভাগ থেকে পাঠানো হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনাল রাতেই মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারাগারে পাঠিয়েছেন। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর এর রিভিউ বা পুনর্বিবেচনা চাইলে সে জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন নিজামী। নিয়ম অনুযায়ী এ সময়ের মধ্যে নিজামী রিভিউ আবেদন করলে ফাঁসির দণ্ড কার্যকর স্থগিত থাকবে। আর রিভিউ আবেদন খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন আসামি। রিভিউ ও প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর করবে সরকার।

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ গত ৬ জানুয়ারি নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় দিয়েছিলেন। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এই বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে নিজামীর ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেছিলেন। গতকাল পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হলো।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিষ্ঠুর ও বর্বর অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন নিজামী। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকালীন আলবদর বাহিনীর নৃশংসতার দায় ওই বাহিনীর নেতা হিসেবে মতিউর রহমান নিজামী এড়াতে পারেন না। সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে আদালত মনে করেন, আলবদর বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ ছিল নিজামীর হাতে। এ কারণে তিনি আলবদর বাহিনী দ্বারা সংঘটিত বুদ্ধিজীবী হত্যা, গণহত্যার মতো অপরাধের দায়ে দোষী এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই তাঁর প্রাপ্য।

পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, রায় পুনর্বিবেচনার জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন মতিউর রহমান নিজামী। আগামী ৩০ মার্চের মধ্যে রিভিউ আবেদন করা হলে রায়ের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ১৫ দিনের মধ্যে রায় কার্যকর করা যাবে না। রিভিউ খারিজ হলে যেকোনো সময় ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করবে সরকার।

রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে : রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে আপিল বিভাগ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। ট্রাইব্যুনাল রাতেই মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারাগারে পাঠিয়েছেন। রাতেই এ পরোয়ানা পূর্ণাঙ্গ রায়সহ লাল কাপড়ে মোড়ানো অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে দেওয়া হয়। গতকাল রাতে পরোয়ানা পাওয়ার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। নিজামী রয়েছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে। তবে রাত ১১টা পর্যন্ত পরোয়ানা সেখানে পৌঁছায়নি বলে সংশ্লিষ্ট কারা কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন।

আলবদরের প্রধান ছিলেন : পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, প্রমাণিত সত্য যে, আলবদর বাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে। প্রসিকিউশনের হাজির করা সাক্ষীদের জবানবন্দি, জেরা প্রমাণ করে মতিউর রহমান নিজামী ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি ছিলেন। আলবদর বাহিনী প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনিই এই বাহিনীর প্রধান হিসেবে যুদ্ধাকালীন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই বদর বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে যেসব দালিলিক সাক্ষ্য ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে তা প্রমাণ করে নিজামী একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা ছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে সভা-সমাবেশ করে ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মী ও আলবদর বাহিনীর নেতাকর্মীদের পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করতে উজ্জীবিত করেন। স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের বিশ্বাসঘাতক হিসেবে অভিহিত করেন।

বুদ্ধিজীবী হত্যা আলবদরের কাজ : একাত্তরে জামায়াতে ইসলামী, আলবদর, আলশামস ও রাজাকারদের ভূমিকা তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, ডা. আলীম চৌধুরীসহ বুদ্ধিজীবীরা অপহৃত হন এবং তাঁদেরসহ আরো বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে ফেলে দেওয়া হয়। অনেকের লাশ চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও সিরাজ উদ্দীনসহ অনেকের লাশ চিহ্নিত করা যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। আর এঁদের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে আলবদর বাহিনী জড়িত ছিল বলে সাক্ষ্য-প্রমাণে পাওয়া গেছে। এ ছাড়া স্বাধীনতার মূল্যবান দলিলপত্রেও এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায়।

রায়ে আরো বলা হয়, স্বাধীনতাযুদ্ধের শেষ দিকে ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর মতিউর রহমান নিজামীর একটি কলাম প্রকাশিত হয়। তিনি লেখেন, কিছু বিশ্বাসঘাতক পাকিস্তানকে দুর্বল করতে ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। এদের রুখতে আলবদর বাহিনীর প্রশংসা করেন তিনি। একই সঙ্গে আলবদর বাহিনীকে উসকানি দেন গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করতে। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিশ্বাসঘাতক, সন্ত্রাসী, দেশের শত্রু ও ভারতের দালাল হিসেবে আখ্যায়িত করে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেন। মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের শত্রু আখ্যায়িত করে এসব শত্রুকে প্রতিরোধ করতে তিনি আলবদর ও রাজাকার বাহিনীকে নির্দেশ দেন।

 

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার