বিল গেটস সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য
০৫ এপ্রিল ২০১৬, ০১:৩২
বিল গেটস। বিশ্বের ধনীদের মধ্যে শীর্ষস্থানে আছেন তিনি। তার সম্পদ নিয়ে রয়েছে নানা চমকপ্রদ তথ্য। চলুন জেনে নেয়া যাক মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যানের সম্পদবৃত্তান্ত।
জন্ম ও শৈশব
উইলিয়াম হেনরি গেটস বা বিল গেটসের জন্ম ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে। তার বাবা উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র- যিনি একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী (অবসরপ্রাপ্ত)। মা মেরি ম্যাক্সওয়েল গেটস। শৈশবে বাবা-মা তাকে আইনজীবী বানাতে চেয়েছিলেন। ১৩ বছর বয়সে তিনি লেকসাইড স্কুলে ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি স্যাট পরীক্ষায় ১৬০০-এর মধ্যে ১৫৯০ পান এবং ১৯৭৩-এর শরতে হার্ভার্ড কলেজে ভর্তি হন। এরপর এখান থেকে ড্রপআউট হন।
সংসার ও সম্পদ
বিল গেটস বিয়ে করেন ১৯৯৪ সালের ১ জানুয়ারি। তার স্ত্রীর নাম মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ। তার সাফল্যের সূচনা হয় ১৯৮৫ সালের ২০ নভেম্বর মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ১.০ সংস্করণ প্রকাশ করার মাধ্যমে। বর্তমানে উইন্ডোজ পৃথিবীর একটি অন্যতম কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেম। তিনি বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। মজার ব্যাপার হল সে তালিকায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট। আর এ মাইক্রোসফটই বদলে দিয়েছে তার জীবন। তার ধনসম্পদের মোট মূল্যমান ৭৬ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার। গত এক বছরে তার ধনসম্পদের মূল্য বেড়েছে ৯০০ কোটি ডলার।
বিল গেটসের চমকপ্রদ তথ্য
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস। তার অর্থ-বিত্তের পরিমাণ এতই বেশি যে, এ নিয়ে মজার সব তথ্য উপস্থাপন করা যায়। অবিশ্বাস্য সে তথ্যগুলো এখানে দেয়া হল-
* বিল গেটস যদি একটি দেশ হতেন তাহলে তিনি পৃথিবীর ৩৭তম ধনী দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতেন।
* তার হাত থেকে যদি এক হাজার টাকা পড়ে যায় তবে তার সেই টাকা তোলার কোনো দরকারই পড়বে না। কারণ যে ৪ সেকেন্ডে তিনি টাকা তুলবেন সে সময়ের ভেতর তার চেয়ে অনেক বেশি আয় হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে বাস্তবে বিল গেটস এক হাজার ডলারের নোট তুলে নেন না, এমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। এটি একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব মাত্র।
* তিনি তার ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষককে নিজের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন তার বয়স যখন ৩০ বছর হবে তখন তিনি মিলিয়নেয়ার হবেন; কিন্তু তিনি বিলিয়নেয়ার হন ৩১-এর আগে।
* যদি বিল গেটসের সব টাকাকে এক ডলারের নোট করা হয় তাহলে সেই টাকা দিয়ে চাঁদ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত ১৪টি রাস্তা বানানো যাবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এমন রাস্তা তৈরি করতে হলে একনাগাড়ে ১ হাজার ৪০০ বছর কাজ করতে হবে।
* প্রতি সেকেন্ডে তিনি প্রায় ২৫০ ইউএস ডলার আয় করেন। মানে এক দিনে ২০ মিলিয়ন আর এক বছরে ৮ বিলিয়ন।
* তিনি পৃথিবীর প্রত্যেক মানুষকে যদি ১৫ টাকা করে দান করেন তবু তার পকেটে ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার পড়ে থাকবে।
* তিনি যদি প্রতিদিন ১০ লাখ ডলার করে খরচ করেন তবে তার সম্পদ শেষ হতে লেগে যাবে ২০০ বছরের বেশি।
* তিনি যদি ৭৭ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকেন তার মৃত্যুর আগে সব সম্পদ শেষ করতে চাইলে তাকে ৬.৭৮ মিলিয়ন ডলার প্রতিদিন খরচ করতে হবে।
বিল গেটসের বাড়ি
বিল গেটসের বাড়িটি ঐতিহ্য আর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বাড়ি হিসেবেই পরিচিত। ১৯৮৮ সালে ২০ লাখ ডলারে ওয়াশিংটন এস্টেট কেনেন গেটস। এরপর ৬.৩ কোটি ডলার খরচ করে দীর্ঘ সাত বছর ধরে গড়ে তোলেন তার স্বপ্নের বাসভবন। বিল গেটসের বাড়ির নাম ‘জানাডু ২.০’। শুধু বিত্তের আস্ফালন নয়, বিল গেটসের বাড়ির সর্বত্র রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির চমক।
* বাড়িটির বর্তমান মূল্য ১২.৩৫৪ কোটি ডলার। বছরে ১০ লাখ ডলার সম্পত্তি কর দেন গেটস।
* এর প্রতিটি রুমে হাইটেক সেন্সরের সাহায্যে পছন্দসই তাপমাত্রা এবং আলো সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ বাড়িতে থাকতে এলে অতিথিদের নিজস্ব পিন নম্বর দেয়া হয়। নম্বর উল্লেখ করলেই মেলে অত্যাধুনিক সব সেবা। ঘরের ওয়ালপেপারের পেছনে লুকানো স্পিকার থেকে বাড়ির সর্বত্র পছন্দ অনুযায়ী গান শোনার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
* ৬৬ হাজার বর্গফুটের বাড়িটি তৈরি হয়েছে ৩০০ নির্মাণ শ্রমিকের সাহায্যে।
* বাড়িটির আনাচে-কানাচে ৮০ হাজার ডলার অর্থমূল্যের কম্পিউটার স্ক্রিন বসানো রয়েছে। কয়েক হাজার কোটি ছবি রাখতে ব্যবহার করা হয় দেড় লাখ ডলার মূল্যের স্টোরেজ ডিভাইস।
* পুরো বাড়িতে রয়েছে ২৪টি বাথরুম। এর মধ্যে ১০টি অভিনব পরিষেবাযুক্ত।
* বাড়িতে রয়েছে ছয়টি রান্নাঘর।
* ২৩টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা রয়েছে এ বাড়ির বিভিন্ন গ্যারেজে। এর মধ্যে রয়েছে স্টেনলেস স্টিল ও কংক্রিটের তৈরি একটি কৃত্রিম গুহা। সেখানে ১০টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা আছে।
* বিল গেটস বৃক্ষপ্রেমী। তবে তার সবচেয়ে প্রিয় গাছ একটি ৪০ বছরের প্রাচীন মেপল গাছ।
* বাড়ির একপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মিষ্টি জলের নালা। সেখানে বসবাস করে স্যামন ও কাটথ্রোট ট্রাউট মাছের ঝাঁক। তার ইচ্ছে হলে, খাবারের মেনুতে জায়গা করে নেয় এসব টাটকা মাছ।
* বিল গেটসের বাড়িতে অতিথি হতে গেলে অংশগ্রহণ করতে হবে মাইক্রোসফটের বার্ষিক নিলামে। তথ্য বলছে, জানাডু ২.০-এর অতিথি হতে এক মাইক্রোসফট কর্মী খরচ করেছিলেন ৩৫ হাজার ডলার। নিলামের সব অর্থ জমা পড়ে সংস্থার ত্রাণ তহবিলে।
বিল গেটসের কিছু আলোচিত উক্তি
* যখন তোমার পকেট ভর্তি টাকা থাকবে তখন শুধু তুমি ভুলে যাবে যে তুমি কে। কিন্তু যখন তোমার পকেট ফাঁকা থাকবে তখন সমগ্র দুনিয়া ভুলে যাবে তুমি কে!
* একবার পরীক্ষায় কয়েকটা বিষয়ে আমি ফেল করেছিলাম কিন্তু আমার বন্ধু সব বিষয়েই পাস করে। এখন সে মাইক্রোসফটের একজন ইঞ্জিনিয়ার আর আমি মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা।
* পৃথিবী পরিবর্তন করে ফেলতে চাইলে বিয়ের আগেই করুন। বিয়ের পরে পৃথিবী পরিবর্তন তো পরের কথা, টিভির চ্যানেলই পরিবর্তন করতে পারবেন না।
* মানুষ সবসময় পরিবর্তনে ভয় পায়। তা আমরা দেখতে পাই যখন বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়। তখন মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভয় পেত। তারা কয়লা এবং গ্যাসচালিত ইঞ্জিন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ভয় করত। যারা অজ্ঞ থেকেছে তারা সব সময় নতুনকে বরণ করে নিতে ভয় পেয়েছে। একটু সরাসরি বলতে গেলে, অজ্ঞতাই ভয়ের জন্ম দেয়।
* পুঁজিবাদ একটি বিস্ময়কর ব্যাপার যা মানুষের মাঝে প্রেরণা জোগায়। এর কারণে কিছু উদ্ভাবন হতে পারে, কিন্তু এ পৃথিবীর সব এলাকার জন্য এটা মঙ্গলজনক নয়।
* আগামী দিনগুলোতে ইন্টারনেট হবে সারা পৃথিবীর জন্য টাউন স্কয়ার।
* একটি কঠিন কাজের জন্য আমি একজন অলস মানুষ খুঁজি। কারণ এ কঠিন কাজটি করতে তিনি একটি সহজ উপায় খুঁজে বের করবেন।
* সাফল্য উদযাপন করা ভালো তবে ব্যর্থতার দিকেও নজর দিতে হবে।
* আপনি যদি কোনো কিছু ভালোভাবে করতে না পারেন অন্তত চেষ্টা করুন।
* আমাদের এমন কিছু মানুষ প্রয়োজন যারা তাদের মতামত জানাবে, এভাবেই আমরা উন্নতি করতে পারব।
* সবচেয়ে অসুখী মানুষের প্রতি লক্ষ্য করুন, অনেক কিছু শিখতে পারবেন।
* যদি আপনি গরিব হয়ে জন্মগ্রহণ করেন, সেটি আপনার দোষ নয়। কিন্তু যদি আপনি গরিব হয়ে মারা যান, তাহলে সেটি আপনার দোষ।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন