প্রচ্ছদ

ফেসবুক এবং গুগল হ্যাঙ্গআউটে লাইভে পলক: তরুণ উদ্যোক্তাদের ২৫ লক্ষ টাকা অর্থ সহায়তা দিবে সরকার

১৭ এপ্রিল ২০১৬, ২৩:৫৫

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

plokপুরো ১ ঘন্টা ধরে ফেসবুক এবং গুগল হ্যাঙ্গআউটে লাইভে থেকে জনগণের তথ্য-প্রযুক্তি সম্বন্ধীয় বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিলেন বাংলাদেশ সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। ডিজিটাল বাংলাদেশে হিসেবে কি দেখতে চান? এবং ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে ডিজিটাইজেশনে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিচ্ছে বা নিয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলেন মন্ত্রী।

লাইভ ভিডিওর শুরুতে বিডব্লিউআইটি সভানেত্রী লুনা শামছুদ্দোহা প্রতিমন্ত্রীকে তরুণদের সাথে অনলাইন প্লাটফর্মে লাইভ ভিডিওর মতো একটি উদ্যোগ চালু করার জন্য সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম আপনার সাথে ভবিষ্যত ডিজিটাল বাংলাদেশে নিয়ে কথা বলবে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ।

প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে অর্ক চৌধুরী নামে এক ফেসবুক ইউজার তরুণ উদ্যোক্তাদের দিকে আলোকপাত করার জন্য মন্ত্রীকে অনুরোধ রাখেন। দীপু রাজশাহী থেকে প্রশ্ন রাখেন, তরুণ উদ্যোক্তা তথা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের লোন দেওয়ার বিষয়ে। প্রশ্নের উত্তরে বেসিসের প্রেসিডেন্ট শামীম আহসান জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইইএফ ফান্ড, এসএমই ফাউন্ডেশন তরুণ উদ্যোক্তাদের লোন দিচ্ছে। তিনি বলেন, মন্ত্রীকে ধন্যবাদ তিনি প্রত্যেকটা আইসিটির উদ্যোগে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিমন্ত্রী জানান, সরকারের এলআইসিটি প্রকল্প, ইইএফ এবং বেসিসেস কানেক্টিং স্টার্টআপের তরফ থেকে তরুণ উদ্যোক্তাদের ১ বছরের ফান্ডিং প্রদান করা হবে। তাছাড়া এখান থেকে প্রথম ১০টা স্টার্টআপকে কালিয়াকৈর হাইটেক ফার্মে বিনামূল্যে স্থান দেওয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী তরুণ উদ্যেক্তাদের অনলাইন এবং সরাসরি ফান্ড চেয়ে আবেদন পত্র জমা দেওয়ার জন্য আহবান জানান। এসময় সব প্রকল্পের ওয়েবপেজগুলো ফেসবুকে শেয়ার করা হয়। তাছাড়া সারা বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের এক প্লাটফর্মে আনার প্রয়া্স থেকে তৈরি শপআপে আসার জন্যও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহবান জানান পলক।

বাংলাদেশে গেমিং শিল্পের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত বাংলাদেশী গেম ‘হিরোজ অব ৭১’ নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। এসময় ‘হিরোজ অব ৭১’-এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পোর্ট ব্লিজের পরিচালক মাশা মোস্তাকিম লাইভে যোগ দেন। তিনি বলেন, গেমিংয়ের মতো একটি শিল্পে আমাদেরকে সহযোগিতা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানাই আমরা। হিরোজ অব ৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে চিত্রায়িত করেছি আমরা। পলক বলেন, গুগল প্লে স্টোরে ‘হিরোজ অব ৭১’ লিখে সার্চ দিলেই গেমটি পাওয়া যাবে। এটি লক্ষ লক্ষা বার ডাউনলোড হচ্ছে। এন্টারটেইনমেন্টকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অর্থবহুল করে উপস্থাপনের লক্ষেই এই গেমটি সৃষ্টি করা হয়েছে।’

শহীদুল ইসলাম নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ইএফএ ফান্ড সম্বন্ধে জানতে চান। মন্ত্রী প্রত্যুত্তরে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রনালয়ের সমন্বয়ে ইকুইটি অ্যান্ড এন্ট্রপ্রেনরশিপ ফান্ডটি তরুণ উদ্যেক্তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য চালু করা হয়েছে। বেসিসের পরিচালক শামীম আহসান বলেন, ফান্ডটি পেতে কোন জামানত দেওয়া লাগে না। এটি সুদমুক্ত। প্রাইভেট এবং সরকারের রিপ্রেজেন্টেটিভরা একসাথে আলোচনার মাধ্যমে এই ফান্ড পাশ করে থাকে।

এসময় টাঙ্গাইল থেকে তপু তার আইপি ভিত্তিক টেলিভিশনের উদ্যোগের কথা জানান। কমেন্টটি দেখে মন্ত্রী বলেন, এরকম অসাধারণ উদ্যোগের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফান্ড দিতে প্রস্তুত আইসিটি ডিভিশন। আপনারা অনলাইন এবং সরাসরি এই ফান্ডে আবেদন করতে পারবেন।

এসময় বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক এস এম আশরাফুল ইসলাম লাইভ ভিডিওতে যোগ দেন। তিনি বাংলাদেশে আউটসোর্সিংয়ের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ ২০ লাখ আউটসোর্সিং আউটপুট দেওয়ার মাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ।

বেসিসের পরিচালক শামীম আহসান বলেন, এলআইসিটির মতো স্কিল এনহ্যাঞ্চমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ২৩ হাজার তরুণকে ৩-৬মাস মেয়াদে আইটি ট্রেনিং দেওয়া হবে।

ন্যাশনাল ডাটা সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক তারেক বরকতুল্লাহ আইডিয়া প্রজেক্ট সম্বন্ধে কথা বলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা নতুন নতুন প্রোডাক্ট ডেভেলপ করছে কিন্তু তারা এর সঠিক বাণিজ্যিকিকরণ করতে পারছে না। আমরা এই বাণিজ্যিকিকরণে তাদের পাশে দাঁড়াব। নতুন উদ্ভাবনে উদ্ভাবকদের পাশে থেকে তাদেরকে মেন্টরিং করব।

অন্যদিকে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইক্যাব) প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে হাজারখানেক ই-কমার্স সাইট আছে। এর মধ্যে ৪০০টি সাইট ইক্যাবের সদস্য। তাছাড়া ফেসবুকে ৭-৮ হাজার এফ কমার্স সাইট বিদ্যমান। প্রতিমন্ত্রী পলক জানান, সরকার ই-কমার্স গাইডলাইন তৈরি করছে।

মালয়েশিয়া থেকে অনিক বসাক প্রতিমন্ত্রীর কাছে অটোমেশেন এবং রোবোটিকসের উপর কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন রাখেন। প্রতুত্ত্যরে মন্ত্রী জানান, রোবোটিকসের উপর কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বুয়েটে রোবোটিকস ল্যাব তৈরি করছে সরকার। তাছাড়া, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সফটওয়্যার টেস্টিং ল্যাবসহ প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।

দেশ বরেণ্য সাংবাদিক মুন্নী শাহ কোয়ালিটি কানেকশন জোরদার করার জন্য মন্ত্রীর প্রতি আহবান জানান। মন্ত্রী জানান, কানেকটিং বাংলাদেশের আওতায় বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাইস্পিড ইন্টারনেট পৌছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে সরকার। ইনফো সরকার ২ প্রকল্পের আওতায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ইন্টারনেট স্পিড ১ এমবিপিএস থেকে বাড়িয়ে ৫ এমবিপিএস করেছেন।

উপজেলা লেভেলে উচ্চমানের ইন্টারনেট সেবা পৌছে দিতে ১ হাজার ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক লাইন গেছে। তাছাড়া ২০১৩ সালে  থ্রিজি প্রযুক্তি উন্মোচন করা হয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে জিজিটাল কান্টেভিটি আওতায় বাংলাদেশের সকল এলাকাকে যুক্ত করা হবে বলেও জানান প্রতিমমন্ত্রী মহোদয়।

কম্পিউটার প্রকৌশল পড়ুয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের চাকরির ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা সম্বন্ধে প্রশ্ন রাখেন হৃদয় তাকাওয়াত। প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাদের জন্য চাকুরীর অগ্রাধিকার আছে। বিসিসির ওয়েবসাইট থেকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে। তাছাড়া তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা আছে। অটিস্টিটিক বাচ্চাদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্যও নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে কম্পিউটার কাউন্সিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালে থেকে লাইভ ভিডিওতে যোগ দেন মোহাম্মদ কাউসার। তিনি বাংলাদেশের ডিজিটাইজেশনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এনআরবিকে সংশ্লিষ্ট করা যায় কিনা এ ব্যাপারে প্রশ্ন রাখেন। পলক বলেন, বর্তমানে সরকার কানেক্টিভিটি, হিউম্যান রিসোর্স উন্নতিকরণ, চাকুরী, উদ্যোক্তা এসব বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিচ্ছে। আগামী ৫ বছরে সরকার ৭ হাজার দক্ষ কর্মী তৈরি করবে। কালিয়াকৈরসহ প্রায় ১২টি উপজেলাতে হাইটেক পার্ক তৈরির পরিকল্পনা আছে সরকারের। পলক যশোরের ২ লক্ষ ৩২ হাজার একরের হাইটেক পার্কের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সিলেটে ইলেক্ট্রনিক সোসাইটি করার পরিকল্পনা পাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পাবলিক-প্রাইভেট চুক্তির মাধ্যমে হংকংস্থ একটি প্রতিষ্ঠান এটি বাস্তবায়নে কাজ করছে। আমার ইন্ডাস্ট্রির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংযোগ করার চেষ্টা করছি। পলক জানান, পুরো বাংলাদেশকে একটি সিঙ্গেল উইন্ডো করার জন্যও কাজ করার পরিকল্পনা করছে সরকার। অর্থাৎ, একটি স্থান থেকে শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষিসহ বাংলাদেশের সব ধরণের তথ্য পাবে জনগণ। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে তরুণদের যুক্ত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। তরুণরাই গড়বে বাংলাদেশ, ডিজিটাল হবে বাংলাদেশ।’

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার