সক্রিয় রাজনীতিতে আসছেন জয় ও ববি
১৯ এপ্রিল ২০১৬, ১৬:০৪

আসন্ন ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে চমক দেখাবে আওয়ামী লীগ। ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নকে টার্গেটে রেখে মূল্যায়ন করা হবে ত্যাগী তরুণ ও নারী নেতাদের। এমন খবর ফাঁস হওয়ায় দলটির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডির ৩ নম্বর কার্যালয়ে বাড়ছে নব্য আওয়ামী লীগের আনাগোনা। আগামী ১০ ও ১১ জুলাই আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হওয়ার কথা রয়েছে।
জানা গেছে, গঠনতন্ত্র সংযোজন-বিয়োজনসহ কেন্দ্রীয় নের্তৃত্ব ঢেলে সাজানোর মধ্যদিয়ে আগামী কাউন্সিলে দলের ত্যাগি, তরুণ ও নারী নের্তৃত্বের প্রাধান্য দেয়ার কথা ভাবছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি মনে করেন, আগামী দিনের নের্তৃত্বে মেধাবী, সৎ, ত্যাগী, তরুণ ও নারীদের সুযোগ দিলে দলের পাশাপাশি জাতি উপকৃত হবে। তাই দলের জাতীয় কাউন্সিলে এমন নের্তৃত্ব আনা হবে বলে দলটির সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছেন। আর নিজের পুত্র ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহেনার পুত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববির রাজনীতিতে আসার বিষয়টি তাদের উপর ছেড়ে দিয়েছেন বলে দলের নেতাদের একাধিকবার জানিয়েছেন।
আরো জানা গেছে, বিশ্ব রাজনীতির প্রতি নজর রেখেই আওয়ামী লীগকে ঢেলে সাজাতে চান শেখ হাসিনা। উন্নত বাংলাদেশ গঠন ও বিশ্ব পরিমন্ডলে নিজেদের জানান দিতে তরুণ রাজনীতিবিদদের সামনে কাতারে নিয়ে আসতে চান তিনি। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসার পর দলের প্রবীণ সদস্যদের পাশাপাশি সরকার পরিচালনায় মন্ত্রিসভা ও বিভিন্ন দফতরে তরুণদের জায়গা করে দেন। এরই অংশ হিসেবে শেখ হাসিনা এবারের কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে মন্ত্রিসভার মতোই আগামী দিনের দলে প্রবীণদের পাশাপাশি দক্ষ, যোগ্য, ত্যাগী, মেধাবী, পরিশ্রমী তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দেবেন বলেও দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। দলের মধ্যে এমন খবর ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দলের ধানমন্ডির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে বাড়ছে নব্য ও হাইব্রিড নেতাদের আনাগোণা। এরমধ্যে রয়েছে দলটি ক্ষমতায় আসার আগে আন্দোলন সংগ্রাম তো দুরে থাক, যাদের ছায়া পড়তো না কোনো কর্মকাণ্ডে। এরাই এখন দলটি কান্ডারি বলেও দাবি করছে। তারা বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড লাগিয়ে আর তোরণ দিয়ে রাজধানীর সাজিয়ে ফেলেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ওই নেতাদের অনেকেই সরগরম রাখছেন ধানমন্ডির সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। নের্তৃত্বে আসতে পারেন বঙ্গবন্ধুকণ্যা শেখ রেহেনার পুত্র রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী ববি। তিনি স্বপরিবারে অনেক দিন ধরেই দেশে স্থায়ী বসবাস ও বিভিন্ন ধরণের কর্মকা-ে সক্রিয় রয়েছেন। তবে অনেকেই বলছেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা আপাতত রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন না। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির পরীক্ষিত, ত্যাগী, প্রবীণ ও প্রয়াত নেতাদের উত্তরসূরিরা ঠাই পাবেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে। ঠাঁই হবে রাজপথ দাবড়ানো একঝাঁক প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতার। এর মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক পুত্র নাহিম রাজ্জাক এমপি, প্রয়াত আবদুল জলিলের পুত্র ব্যারিস্টার নিজামউদ্দীন জলিল জন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের পুত্র প্রকৌশলী তানভির শাকিল জয়, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির ছেলে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈমসহ আরো অনেকে।
এদিকে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন দলটির উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মাহবুবুল হক শাকিল, মঞ্জুরুল হক লাভলু, বাহাদুর বেপারী, লিয়াকত শিকদার, ইসহাক আলী খান পান্না, সাইফুজ্জামান শেখর, ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ, মিহির কান্তি ঘোষাল, ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, গোলাম সারোয়ার কবির। এদের মধ্যে সবাই সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আসছেন বলেও জানান তারা।
অপরদিকে, আগামী ১০ ও ১১ জুলাই কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীদের আরো একধাপ সামনে আনার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দলের একাধিক সভাপতিম-লীর সদস্য নিশ্চিত করেছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মূল তরীতে নতুন করে যোগ হতে পারে একডজন নারী। প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিনের মৃত্যুর পর বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটিতে শেখ হাসিনাসহ ৯ জন নারী নেত্রী আছেন। এদের মধ্যে বাদ পড়তে পারেন অন্তত ৪ নারী নেত্রী। তবে নতুন করে নেয়া হতে পারে আরো একডজন নারী সদস্য।
জানা গেছে, পরিবর্তন আসবে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে। বাড়ানো হবে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কয়েকটি সম্পাদকীয় পদ। কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা হতে পারে ৮১ কিংবা ১০১ জন। যা বর্তমানে রয়েছে ৭৩ জন। সভাপতিমন্ডলীর সদস্য করা হতে পারে ১৫ জন। বর্তমানে রয়েছে ১৩ জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ ৩টি থেকে ৫-এ আনা হতে পারে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদ বাড়িয়ে করা হতে পারে ১০টি। বর্তমানে রয়েছে ৭টি। এ সাত সাংগঠনিক সম্পাদক দায়িত্ব পালন করছেন সাত বিভাগের। নতুন করে ময়মনসিংহ বিভাগের জন্য প্রয়োজন পড়বে আরেকজন সাংগঠনিক সম্পাদক। অনুমোদনের অপেক্ষায় ফরিদপুর এবং কুমিল্লা ও নোয়াখালী নিয়ে গঠিত বিভাগের কথা মাথায় রেখেই এ পদ বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
এ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিটি কাউন্সিলে সংযোজন-বিয়োজন হয়, এটাই নিয়ম। আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক দলই নয়, একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানও। কাজেই এখানে যোগ্য ও পরীক্ষিতরাই স্থান পাবেন। কোনো বিতর্কিত কিংবা উড়ে এসে জুড়ে বসা হাইব্রিড ব্যক্তিরা স্থান পাবেন না বলেও সাফ জানিয়ে দেন তিনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় তারুণ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। বর্তমানে জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ ও দলে তরুণ নের্তৃত্ব রয়েছে। আগামীতেও যোগ্যতা অনুযায়ী কেন্দ্রীয় কমিটিতে মেধাবী, ত্যাগি ও তরুণ নেতারাই আসবে। এখানে হঠাৎ গজিয়ে উঠাদের স্থান হবে না বলেও জানান তিনি।
২০তম জাতীয় কাউন্সিল প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, দলের অনেক নেতাই এখন বয়সের ভারে নুহ্য। তাদের অনেকেই আগের মতো দলে সময় দিতে পারছেন না। ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে দলকেই মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর তরুণ নের্তৃত্ব প্রয়োজন। আর নতুন কমিটিকে ঢেলে সাজাতে বিতর্কিত, দুর্নীতি ও পদবাণিজ্যে জড়িত, অযোগ্য ও সুবিধাবাদী কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে বাদ দেয়া হবে। তারা বলেন, ২০তম কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দলকে ঢেলে সাজানোর কথা উঠতেই এক শ্রেণীর নব্য আওয়ামী লীগের উত্থান হয়েছে। তাদের জন্য এখন আর দলের কার্যালয়ে জায়গা পাওয়া যায় না। যারা দীর্ঘদিন দলের জন্য ত্যাগ ও আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদের পাত্তাই দেয় না এরা। তারাই যেন দলের কা-ারি সেজে বসেছেন।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ডিসেম্বরেই। গত ৯ জানুয়ারি মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধি করা হয়। পরবর্তীকালে গত ২০ ফেব্রুয়ারি এক বৈঠকে কাউন্সিলের তারিখ ১০ ও ১১ জুলাই নির্ধারণ করা হয়।