২৬ বছরের সাম্রাজ্য হারালেন রাগীব আলী!
১৬ মে ২০১৬, ১২:১২
১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছেলে আবদুল হাইয়ের নামে তারাপুর চা বাগানটি ইজারা নেন তিনি। প্রায় হাজার কোটি টাকার দেবোত্তোর সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছিলেন তিনি।
কিন্তু ২৬ বছর ৪ মাস পর গতকাল রোববার (১৫ মে) তারাপুর চা বাগানের দখল সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্তের নিকট ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। রোববার সকালে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে থেকে সেবায়েত পংকজ রাগীব আলীর দখলে থাকা জায়গা বুঝে নিয়েছেন।
রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ, হাসপাতাল, ছাত্রাবাস, মদনমোহন কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ক্যাম্পাসসহ অন্যান্য স্থাপনা আগামী ৬ মাসের মধ্যে তুলে নেয়ার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। এ সময়ের ভেতর স্থাপনা তুলে না নেয়া হলে সরকার এ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে দিবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেবায়েত পংকজ গুপ্তকে আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
রবিবার রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ এলাকা থেকে সকাল ১১টায় কাজ শুরু করেন সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন, বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছুল আলমসহ র্যাব কর্মকর্তারা। এসময় বাগানের সেবায়েত পংকজ গুপ্তও উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ৮ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইলিয়াছুর রহমান ইলিয়াস, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক বিজিৎ চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা জগদীস চন্দ্র দাস, তপন মিত্র, সুদীপ দে প্রমুখ।
এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, তারাপুর চা বাগান, বাগান সংলগ্ন সকল খালি জায়গা আদালতের নির্দেশনা অনুয়ায়ী পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে চা বাগানের ভেতরে গড়ে ওঠা রাগিব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেলায় ৬ মাস সময় রয়েছে। নির্দিষ্ট ওই সময়ের পরে স্থাপনাগুলো বুঝিয়ে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
পংকজ কুমার গুপ্ত বলেন, ‘আদালতের নিদের্শনায় প্রশাসন আন্তরিকতার সাথে তারাপুর চা বাগান দখলমুক্ত করে তার কাছে হস্তান্তর করেছে। হস্তান্তরের পর তিনি বাগানের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করেছেন।’ এছাড়াও আগামীকাল চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে মিটিং করবেন বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে হাজার কোটি টাকার এই সম্পত্তি সেবায়েত পংকজ কুমারকে বুঝিয়ে দিতে সিলেটের জেলা প্রশাসনকে ছয় মাসের সময়সীমা বেধে দিয়েছে উচ্চ আদালত। রায়ের প্রায় দুই মাসের মধ্যে বাগানের দখল সেবায়েতকে বুঝিয়ে দিল জেলা প্রশাসন।
প্রায় হাজার কোটি টাকার এই দেবোত্তোর সম্পত্তি দীর্ঘদিন ধরে রাগীব আলীর দখলে ছিল। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের এক রায়ে বলা হয়, রাগীব আলী প্রতারণার মাধ্যমে তারাপুর চা বাগান দখল করেছেন। আদালত ছয় মাসের মধ্যে চা বাগানটি দখলমুক্ত করতে সিলেটের জেলা প্রশাসককে নির্দেশ প্রদান করেন। একইসাথে চা বাগান ধ্বংস করে গড়ে ওঠা সকল স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনাও দেন আদালত।
শিল্পপতি রাগীব আলীর ছেলে আবদুল হাইয়ের দায়েরকৃত এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চার বিচারক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ১৯ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের রায়ে তারাপুর চা বাগানে গড়ে তোলা আবাসিক প্রকল্প, এ সম্পত্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে অবৈধ, এ বাগানকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়াসহ ১৭টি নির্দেশ দেয়া হয়। রায়ে বাগানের সকল অবকাঠামো ছয় মাসের মধ্যে সরিয়ে সেখানে চা বাগান করার নির্দেশনাও দেয়া হয়।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন