রোয়ানুর আঘাতে নয়জনের প্রাণহানি
২১ মে ২০১৬, ১৯:১৯
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ শনিবার বেলা দেড়টায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রাম উপকূলের সন্দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, সীতাকুণ্ডু ও ফেনী উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে এসেছে।’
তিনি জানান, উপকূলের কাছাকাছি আসার পর এ ঘূর্ণিঝড় দ্রুত স্থলভাগের দিকে এগোতে শুরু করে। ঝড়ের পুরো পরিধি স্থলভাগে উঠে আসতে বিকাল পেরিয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে বইছে ঝড়ো বাতাস, সেই সঙ্গে চলছে বৃষ্টি।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর বলছে, পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে উপকূলীয় এলাকার ৫ লাখ বাসিন্দাকে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি নয়জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, শনিবার ভোরে ও আগের রাতে এই ঝড়ে চট্টগ্রামে তিনজন, ভোলায় দুইজন, কক্সবাজারে দুইজন, পটুয়াখালীতে একজন ও লক্ষ্মীপুরে একজন প্রাণ হারিয়েছেন।
এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ শনিবার বেলা দেড়টায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল অতিক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রাম উপকূলের সন্দ্বীপ, হাতিয়া, কুতুবদিয়া, সীতাকুণ্ডু ও ফেনী উপকূল দিয়ে স্থলভাগে উঠে এসেছে।’
চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড়ের সময় ষোলশহরে এক পথশিশু ও সীতাকুণ্ডে মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সাড়ে ১২টার দিকে পাঁচলাইশে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের কাছে একটি বাসার ছাদ থেকে আসা ইঁটের আঘাতে রাকিব (১১) নামে ওই শিশু গুরুতর আহত হয়। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কতব্যর্রত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক জাহাঙ্গীর আলম। এর আগে ভোরে উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুরের পাহাড়ি এলাকা কালাপানিয়া লোকমানের ঘোনা এলাকায় ঘড়ের উপর গাছ ভেঙ্গে পড়ে মা-ছেলের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- স্থানীয় মোহাম্মদ রফিকের স্ত্রী কাজল বেগম (৪৮) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন বাবু (১০)। সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘গাছ ভেঙে পড়লে ঘরের খুঁটি ভেঙে যায়। এতে ঘরের মধ্যেই চাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়।’
ভোলায় শুক্রবার শেষরাতের দিকে ভোলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হলে তজুমদ্দিনে ঘর ও গাছ চাপা পড়ে দুজনের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- চাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)।
কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলায় দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও ১০ জন। শনিবার বেলা তিনটার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন। এরা হলেন, উপজেলার উত্তর ধুরুং এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে মো. ইকবাল (২৫), উত্তর কৈয়ার বিল এলাকার ফয়েজুর রহমানের ছেলে ফজলুল হক (৫৫)। ইকবাল দেয়াল চাপায় এবং ফজলুল নৌকার ধাক্কায় নিহত হয়েছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
সকালে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর গ্রামে নয়া বিবির (৫২) মৃত্যু হয়। ঝড়ে ওই এলাকার ১০-১২টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় গাছ উপড়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও একজন। শনিবার উপজেলার উত্তর তোওয়ারিগঞ্জ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আনোয়ার উল্লাহ (৫৫) ওই এলাকার বশির উল্লাহর ছেলে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন