ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল সারকারখানায় নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার ইউরিয়া সার
৩১ মে ২০১৬, ১০:৩৪
ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল সারাকারখানা কর্তৃপক্ষের গাফলতির কারনে খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভিজে পানির সাথে গলে নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ইউরিয়া সার। ২০১২ সালে শাহজালাল সারকারখানার নির্মাণ কাজ শুরূ করে চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্টান মেসার্স কমপ্লান্ট লি: ৩৮ মাসে কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তারা কাজ শুরূ করে।গত ২০১৫ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে পরীক্ষামূলক ভাবে কারখানাটি চালু করে কর্তৃপক্ষ। দৈনিক ১৭৬০ মে:টন ইউরিয়া উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হলেও সেই লক্ষ্য মাত্রা এখনো অর্জিত হয়নি ।
কারখানা চালুর প্রথম দিকে দৈনিক ১০০০-১১০০মেট্রিকটন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসলেও এখনো পরোপুরি লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হয়নি । তার পর ও প্রতিদিন উৎপাদিত ইউরিয়া সার বেগিং হয়ে গোডাউনে এখন আর তিল ধরনের ঠাই নেই। তাই বেশ কয়েক মাস থেকে কারখানার ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে মূল্যবান ইউরিয়া সার।
গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে বিসিআইসির নির্দেশে শাহাজালাল সারকারখানার বিপনন বিভাগ দেশের উওরবঙ্গ ও সিলেটের আংশিক অঞ্চলে ইউরিয়া সার বিতরন শুরূ করে বলে জানান সারকারখানার মাকের্টিং (জিএম ) এম সোলায়মান আহমদ, তিনি জানান গত ২০১৫ সালের শেষের দিকে (বিসিআইসি) বাংলাদেশ ক্যামিক্যল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশন লি: এর চেয়ারম্যান উদ্বোধন করেন । এরই মধ্যে সড়ক পথে ও রেল পথে প্রায় ৮৫-৯০ হাজার মে:টন সার ডেলিভারী হয়ে গেলেও এখনো লোজ ও বেগিং গোডাউনে সার রয়েছে ৬৫-৭৫ হাজার মেট্রিকটন।
এর মধ্যে প্রায় ১৫-২০ হাজার মে:টন ইউরিয়া সার এই বর্ষার সময় খোলা আকাশের নিচে কারখানার ইয়ার্ডে রোদ ও বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে সার গুলো কেন ? জানতে চাইলে কারখানার এই কর্মকর্তা জানান এখন বর্ষাকাল, এমনিতেই এই সময় সারের চাহিদা কম থাকে। সিলেটে এখন অফ সিজন তাই সার কম যাওয়াতে জমে আছে। সার গুদামে না রেখে খোলা আকাশের নিচে কেন ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান ১৫ হাজার মে:টন ক্ষমতা সম্পন্ন গুদামে এত জায়গা নাই তাই সার গুলো এখানে রাখা হয়েছে। দৈনিক ১৭৬০ মে: টন হিসেবে বছরে ৫,৮০,৮০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের জন্য বেগিং গুদাম রয়েছে ১৫ হাজার মেট্রিকটনের। রোদ বৃষ্টির মধ্যে কোটি কোটি টাকার ইউরিয়া সার নষ্ট দেখে সত্যি বাদশা মিয়ার মতো অনেকেরই প্রশ্ন এত বড় সারকারখানা হলো অথচ সার রাখার জায়গার অভাবে কেন কোটি কোটি টাকার সার খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে ? এগুলো কি দেখার কেউ নেই?
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেল বেশ কয়েকটি বড় বড় পিল করে রাখা সারের পিল গুলো পলি কাপড়ে মোড়ানো। বেশ কয়েক মাস আগে হওয়াতে কাপড়গুলো নষ্ট হয়ে গেছে । গত কয়েক দিন থেকে ভারী বৃষ্টি হওয়াতে সার গলে ড্রেনে পড়ে খালি শত শত বস্তা গুডাউনের পাশে পড়ে আছে। লেবার সর্দার ময়নুল বল্লেন প্রায় ৪০০ শ টনের মতো সার নষ্ট হয়েছে গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে । সারকারখানার গাড়ী চালক রাসেল জানালেন কয়েক শ টন সার নষ্ট হয়েছে। এখন নষ্ট সার গুলো এনে এনজিএফএফ এর গোডাউনে রাখা হচ্ছে , শোনা যাচ্ছে চেয়ারম্যান সাহেব আসবেন যাতে তার নজরে না পড়ে।
আর বেশ কয়েক জন শ্রমিক ও লেবার এসব কথা জানালেন কয়েক কোটি টাকার সার নষ্ট হয়েছে শুধু বৃষ্টিতে ভিজে। সারকারখানার ডিলার মেসার্স করিম এন্ড ব্রাদার্সের সাথে কথা প্রসঙ্গে বলেন কারখানার ইয়ার্ডে রাখা কোটি কোটি টাকার সার বৃষ্টিতে ভিজে গলে হাওর ও নদীর পানিতে মিশে অনেক মাছ মারা গেছে।
আর কিছু দিন পর এই সার আমাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে, তখন এই সার শক্ত হয়ে যাবে। কৃষকেরা সার নিতে অনিহা প্রাকাশ করবে বলে জানান।
এদিকে কারখানার প্রকল্প পরিচালক কামরূজ্জামানের সাথে ফোনে কথা বললে তিনি জানান অক্টোবরের শেষের দিকে বিসিআইসির চেয়ারম্যান এসে সার ডেলিভারীর আনুষ্টানিক উদ্ধোধন করেন। এত গুলো সার কারখানার ভিতরে কেন নষ্ট হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প কর্মকর্তা জানালেন এখন সারের চাহিদা কম তাই সার ডেলিভারী কম হওয়াতে বেগিং গোডাউনে জায়গা না থাকায় সার গুলো এখানে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন আগামীতে এগুলো ঠিক হয়ে যাবে। ৪ শ টন সার নষ্ট হয়ে গেল আপনি কি ভূমিকা রেখেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন হঠাৎ করে এত বৃষ্টি তাই কোন কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই কিছু সার নষ্ট হয়ে গেছে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন