মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২৬ জুন ২০১৬, ১১:৩০
ঢাকা মহানগরীতে যানজট নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন তিনি।
একই সময় গাজীপুর থেকে শাহাজালাল বিমানবন্দর পর্যন্ত র্যাপিড বাস ট্রানজিটের জন্য একটি বাস ডিপো নির্মাণ কাজেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
জাপানের সাহায্য সংস্থা- জাইকার অর্থায়নে ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্পে জাইকা সহায়তা দিচ্ছে ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
এ প্রকল্পের ফলে ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ, পরিবেশবান্ধব হওয়ার পাশাপাশি যানজট মুক্ত করা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মেট্রোরেল চালু হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াতে সময় লাগবে মাত্র ৩৮ মিনিট। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতি ৪ মিনিট অন্তর ট্রেন ছাড়বে। আর গণপরিবহনের ক্ষেত্রে উন্নতমানের বাসভিত্তিক ব্যবস্থা বিআরটি চালু হলে যাত্রীরা কম সময়ে যাতায়াত করতে পারবেন।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই প্রথম এমআরটি ও বিআরটি সেবা চালু হবে।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ইতোমধ্যে দেড় কোটি ছাড়িয়েছে। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন যাতায়াতে ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে গণপরিবহন ও অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা রয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট। এমন বাস্তবতায় দেশে প্রথম নির্মিতব্য মেট্রোরেলের (এমআরটি-৬) মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় উভয় দিকে ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন সম্ভব হবে। উত্তরা ৩য় পর্ব থেকে শুরু হয়ে পল্লবী-রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে খামারবাড়ী হয়ে ফার্মগেট, এরপর হোটেল সোনারগাঁও-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর হয়ে তোপখানা রোড দিয়ে মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত মেট্রোরেলের রুট অ্যালাইনমেন্ট। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই রুটটি হবে সম্পূর্ণ এলিভেটেড। এর ১৬টি স্টেশন থাকছে। এগুলো হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল।
আজ রোববার প্রকল্পের ডিপো নির্মাণের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে নির্মাণকাজ। মোট ৮টি কন্ট্রাক্ট প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। ২০১৯ সালে উত্তরা ডিপো থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত এবং ২০২০ সালে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
‘ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (ডিএমআরটিডিপি)’ শীর্ষক প্রকল্পের ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল ২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে এ বিষয়ে ২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঋণচুক্তি হয়। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং রাষ্ট্রীয় অর্থ ৫ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।
প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, প্যাকেজ-১ এর আওতায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন, প্যাকেজ-২ এর আওতায় ডিপো এলাকায় সিভিল অ্যান্ড বিল্ডিং ওয়ার্কস; প্যাকেজ-৩ এর অধীনে ডিপো থেকে পল্লবী পর্যন্ত, প্যাকেজ-৪ এর অধীনে পল্লবী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত, প্যাকেজ-৫ এর আওতায় আগারগাঁও থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত, প্যাকেজ-৬ এর অধীনে কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভায়াডাক্ট ও স্টেশন নির্মাণ; প্যাকেজ-৭ এর আওতায় মেট্রো সিস্টেমের সব ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল কাজ এবং প্যাকেজ-৮ এর অধীনে ডিপো ইকুইপমেন্ট ও ১৪৪টি কোচ সংগ্রহ করা হবে। ইতোমধ্যে প্যাকেজ-১ এর দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টোকিও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে গত ২৭ মার্চ চুক্তি হয়েছে। এ ছাড়া প্যাকেজ-২, প্যাকেজ-৩, প্যাকেজ-৪, প্যাকেজ-৭ ও প্যাকেজ-৮ এর দরপত্র প্রক্রিয়ার কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। আর প্যাকেজ-৫ ও প্যাকেজ-৬ এর দরপত্র প্রক্রিয়া এ মাসেই শুরু হওয়ার কথা।
বাস র্যাপিড ট্রানজিট: বাস র্যাপিড ট্রানজিট বা বিআরটি ব্যবস্থায় সংরতি লেনে বাস চলাচল করবে। সারা বিশ্বে বাস র্যাপিড ট্রানজিট সাফল্যের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি একটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে জনবহুল নগরগুলোয় ক্রমাগত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এবারই প্রথম বিআরটি ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। এ ব্যবস্থায় শহরের যানজট কমবে এবং স্বল্প সময়ে তুলনামূলক নিরাপদে চলাচল করা যাবে।
গাজীপুর ও ঢাকা মহানগরীর মধ্যে যাতায়াত সহজ, নিরাপদ ও দ্রুত করতে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ২০১০ সালে গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নির্দিষ্ট লেনে বাসভিত্তিক দ্রুতগামী গণপরবিহন ব্যবস্থার প্রাথমিক সমীা কার্যক্রম পরিচালনা করে। সমীায় প্রকল্পটির উপযোগিতা প্রমাণিত হওয়ায় সড়ক পরবিহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের মিডিয়ান সংলগ্ন উভয়পাশে একটি করে মোট দুটি লেনে শুধু বিআরটি বাস চলাচলের ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। ফলে বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীর সঙ্গে গাজীপুর-টঙ্গী ও উত্তরা এলাকার নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত নির্মিতব্য বিআরটির মূল করিডোরের দৈর্ঘ্য হবে ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৬ কিলোমিটার হবে সমতলে এবং সাড়ে ৪ কিলোমিটার উড়ালপথে। এ করিডোরে থাকবে ২৫টি স্টেশন, ২টি টার্মিনাল, ৬টি ফাইওভার, ৮ লেনবিশিষ্ট টঙ্গী সেতু, ৮টি কাঁচাবাজার, সাড়ে ২০ কিলোমিটার ফুটপাত এবং গাজীপুরে একটি বাস ডিপো। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লিমিটেড। এটি বাস্তবায়নে প্রায় ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে যার অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা ও গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল ফ্যাসিলিটি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিআরটি ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-নির্দিষ্ট সংরক্ষিত লেনে পর্যাপ্ত বাস চলাচল; নির্ধারিত স্থান থেকে যাত্রী উঠানো-নামানো; নির্দিষ্ট সময় পরপর বাস চলাচল; থাকবে অধিক যাত্রী ধারনের ক্ষমতাসম্পন্ন আর্টিক্যুলেটেড বাস; প্রতিবন্ধীদের জন্য র্যাম্প ও হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা; ই-টিকিটিং ও স্বয়ংক্রিয় টিকিট কাউন্টার এবং বাস আসার আগাম তথ্য প্রদর্শনের ব্যবস্থা।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন