আওয়ামীলীগের শাসনামলে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন চিত্র
১৩ জুলাই ২০১৬, ১১:৩২
১৯৭২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ প্রথমে বাংলাদেশের স্থপতি এবং বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে (১৯৭২-১৯৭৫) এবং পরবর্তীকালে তাঁরই সুযোগ্যা জ্যেষ্ঠ কন্যা জননেত্রীখ্যাত, দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬, ২০০৯ ও ২০১৪সহ তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন আছেন।
প্রথমে আওয়ামী লীগ সরকারকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। এ সময় সরকারকে শুরু থেকেই সবকিছু পুনর্গঠন করতে হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলোর মধ্যে ছিল, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন, ১০ মাসের মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল সংবিধান প্রণয়ন, মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সৈন্যদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো, নতুন প্রজাতন্ত্রের জন্য বিশ্বের ১৩০টি দেশের স্বীকৃতি লাভ, ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত এক কোটি শরণার্থী এবং যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সৈন্য দ্বারা ধর্ষিত প্রায় তিন লক্ষ নারীর পুনর্বাসন।
স্বাধীনতালাভের ১৫ মাসের মধ্যে নতুন সংবিধান অনুসারে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান ছিল আওয়ামীলীগের আরেকটি বিশাল অর্জন। ১৯৭৩ সালের এই নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসন লাভের মধ্য দিয়ে বিপুল বিজয় অর্জন করে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশ নামে এই মানচিত্রের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বপ্নের রূপকার। এই একটি সাফল্যই যথেষ্ট বঙ্গবন্ধুর অমরত্বের জন্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কেবল বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বা বাঙালি জাতির জনক নন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি রাষ্ট্র বির্নিমানে ধাপে ধাপে রয়েছে তার বিচক্ষনতা, প্রজ্ঞা ও মেধা। বঙ্গবন্ধুর সাফল্য গাঁথা লিখে শেষ করবার মতো নয়। তারপরও তার উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্যের সার সংক্ষেপ এখানে তুলে ধরছি-
১. অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির পুরোধা পুরুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামলী মুসলীম লীগ থেকে তিনি মুসলিম শব্দ বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক ‘আওয়ামী লীগ’ নামকরণ করেন।
২. বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার প্রণেতা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবজ্ঞা পুরুষ।
৩. মুক্তিযুদ্ধের সফল রূপকার। তাঁর ৭ই মার্চের ভাষনই ছিলো গেরিলা যুদ্ধের কৌশল।
৪. একটি দেশ স্বাধীন হবার মাত্র ৫০ দিনের মাথায় সে দেশ থেকে বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহার ছিলো একটি বিস্ময়কর ঘটনা। বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞায় এবং দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই ১৯৭২ এর ১২ মার্চ ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়।
৫. বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার মাত্র এক বছরের মধ্যে জাতিকে একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক সংবিধান উপহার দেন। ১৯৭২ এর ১৬ ডিসেম্বর সংবিধান কার্যকর হয়।
৬. ক্ষমতায় আসার মাত্র এক বছরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন।
৭. বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে একটি গণমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়নের উদ্যেগ নেন। এলক্ষ্যে ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই ড: মুহাম্মদ কুদরত-এ-খুদাকে সভাপতি করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। কমিশন ১৯৭৪ সালের মে মাসে পূর্ণাঙ্গ রির্পোট পেশ করে।
৮. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে কৃষি ক্ষেত্রে নেয়া হয়েছিল ব্যাপক কর্মসূচী। এর মধ্যে ছিলো ৪০ হাজার শক্তি চালিত লো লিফট পাম্প ২৯০০টি গভীর নলকূপ ও ৩০০০ অগভীর নলকূপ। ১৯৭২ সালের মধ্যেই জরুরী ভিত্তিতে বিনামূল্যে ১৬,১২৫ টন ধান বীজ, ৪৫৪ টন পাট বীজ এবং ১০৩৭ টন গম বীজ সরবরাহ করা হয়। ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা চিরতরে রহিত করা হয়।
৯. যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে শিল্প কারখানা রক্ষায় বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২৬শে মার্চ জাতীয়করণ কর্মসূচী ঘোষণা করেন। এর ফলে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেমে শিল্প-কলকারখানা আবার চালু হয়। ব্যাংক, বীমা জাতীয়করনের ফলে গতি সঞ্চারিত হয়।
১০. প্রথম বাজেটে জনগনের উপর কোন কর আরোপ করা হয়নি।
১১. বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে পূণ:গঠন করেন। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষনের জন্য বাংলাদেশ মিলিটারী একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন।
১২. বঙ্গবন্ধু সিভিল প্রশাসন পূণ: গঠন করেন।
১৩. বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে প্রথম এক বছরেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত ২৮৭টি সেতুর মধ্যে ২৬২টি ২৭৪টি সড়ক সেতুর মধ্যে ১৭০টির মেরামত শেষ হয়। দশ কোটি টাকা ব্যয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূণ: নির্মাণ করা।
বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ১৪২টি দেশের স্বীকৃতি আদায় করেন। জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন, জাতিসংঘ, কমনওয়েলথ এবং ওআইসির সদস্য লাভ করে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু প্রথম বাঙালি যিনি একটি দেশের সরকার প্রধান হিসেবে জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন।
অতীতের ন্যায় আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিজয়ের সে ধারা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বদলে গেছে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার হাতে এখন এক সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। বিশ্ব রাজনীতিতে তিনি এখন এক চ্যালেঞ্জ-গতি-প্রগতির নাম। পৃথিবীর সাথে তথা আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে একটু ফিরে তাকানো প্রয়োজন। ৫ই জানুয়ারি, ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে বিএনপি-জামায়াত জোট সারাদেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা শত শত গাড়িতে আগুন দিয়েছে এবং ভাংচুর করেছে হাজার হাজার গাড়ী। মহাসড়কসহ গ্রামের রাস্তার দু’পাশের হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। পুলিশ-বিজিবি-আনসার-সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ২০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে। তাদের সহিংস হামলা, পেট্রোল বোমা, অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলায় নিহত হয়েছে শত শত নিরীহ মানুষ। সরকারী অফিস, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ফুটপাতের দোকান এমনকি নিরীহ পশুও তাদের জিঘাংসার হাত থেকে রেহাই পায়নি।
রেহাই পায়নি মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম-এর সামনে হাজার হাজার পবিত্র কোরআন শরীফ পুড়িয়ে দিয়েছে। ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলে এবং ফিসপ্লেট খুলে শতশত বগি এবং রেলইঞ্জিন ধ্বংস করেছে। নির্বাচনের দিন ৫৮২টি স্কুলে আগুন দিয়েছে। প্রিসাইডিং অফিসারসহ ২৬ জনকে হত্যা করেছে। নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু এবং আওয়ামী লীগ সর্মথকদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছে, আগুন দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোটের সমর্থকেরা।
নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপির জোটের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য অনেক চেষ্টা করেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার খালেদা জিয়ার সঙ্গে আন্তরিক ফোনালাপও সারা জাতি বিভিন্ন মিডিয়ায় দেখেছে, শুনেছে। সংবিধানের আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আওয়ামী লীগ সব ধরণের ছাড় দিতে সম্মত ছিল। নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় মন্ত্রীসভা গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত ছিল।
বাংলাদেশের সংবিধানে অনির্বাচিত সরকারের কোন ব্যবস্থা নেই। সুতরাং আওয়ামী লীগের শুধু একটাই দাবী ছিল, সংবিধানের মধ্য থেকে নির্বাচন করতে চাওয়া। সেখানে যত ধরণের ছাড় দেওয়া সম্ভব, তা দিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রস্তুত ছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট চেয়েছিল দেশে একটা অরাজক এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পিছনের দরজা দিয়ে তারা ক্ষমতায় যেতে চেয়েছিল।
যা হোক, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে ফিরে আসি। জনগণের সহযোগিতার ফলে উন্নয়নের যে কাজগুলি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুরু করেছিল, তা সমাপ্ত করতে পারছে। পাশাপাশি নতুন নতুন উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভের পর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সরকার গঠন করে পাঁচ বছর দেশ পরিচালনা করেছে। এমন এক অবস্থায় আওয়ামী লীগ, সরকার গঠন করেছিল, যখন সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং চরম খাদ্যাভাব চলছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদী কার্যক্রম এবং দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দমননীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম বিপর্যস্ত ও বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ছিল।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে সমাজের সকল স্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে। মানুষের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাস সঞ্চারিত হয়। নব উদ্যমে দেশ গড়ার কাজে মানুষকে সম্পৃক্ত করেছে আওয়ামী সরকার। সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়। দীর্ঘ মেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরু করা হয়েছে। আজ দেশের মানুষ ভাল আছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত রাখার ক্ষেত্রে ২০১৪ সাল বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল বছর। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য সাফল্যের বছর।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের ফলে গত মেয়াদের পাঁচ বছর এবং এই মেয়াদের প্রথম বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিশ্বের সামনে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের অর্থনৈতিকউন্নয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া পাঁচটি দেশের একটি- বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংক ৬.২ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। চলতি ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাজেটের আকার ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকায় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিএনপি-জামাত জোট আমলের শেষ বছরে মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার যা আজ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৯০ মার্কিন ডলারে। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্য আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে।বিএনপি-জামাতের শেষ বছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১.৫ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার আওয়া তা কমিয়ে ২৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। ২০০৬ সালে অতিদারিদ্র্যের হার ছিল ২৪.২ শতাংশ। তা এখন কমে ১১ শতাংশে নেমে এসেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষজনের আয় বেড়েছে, কর্মসংস্থান বেড়েছে। সরকারী ও বেসরকারী খাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। ২৫ লাখ মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০০৬ সালে রেমিট্যান্স আয় ছিল মাত্র ৪.৮০ বিলিয়ন ডলার। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে তা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৪.২৩ বিলিয়ন ডলারে। ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.৪৮ বিলিয়ন ডলার। তা আজ ছয়গুণ বেড়ে ২২.৩৯ বিলিয়ন ডলার। ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ ছিল মাত্র ০.৭৯ বিলিয়ন ডলার যা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ৬.৮৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রপ্তানি আয় ছিল ১০.৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩০.১৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন রেখে এসেছিল ৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বিএনপি-জামায়াতের সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে। এখন আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১৩ হাজার ২৮৩ মেগাওয়াট।
২০০৬ সালে গ্যাসের দৈনিক উৎপাদন ছিল মাত্র ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে গ্যাস উৎপাদন গড়ে দৈনিক ২ হাজার ৪৫০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।
যোগাযোগ খাতে আওয়ামী লীগ শাসনামলে ব্যাপক উন্নয়নের কাজ হয়েছে এবং কিছু বৃহৎ প্রজেক্ট এগিয়ে চলছে। ঢাকায় হাতিরঝিল প্রকল্প, কুড়িল-বিশ্বরোড বহুমুখী উড়াল সেতু, মিরপুর-বিমানবন্দর জিল্লুর রহমান উড়াল সেতু, বনানী ওভারপাস, মেয়র হানিফ উড়াল সেতু, টঙ্গীতে আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু চট্টগ্রামে বহদ্দারহাট উড়াল সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে। মগবাজার-মালিবাগ উড়ালসেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।
শেখ হাসিনা সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছে। এটি বর্তমান সরকারের এক বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষত এদেশের সরকার প্রধান শেখ হাসিনার। অসংখ্য কষ্ট, অনেক বেদনা সয়ে আর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে একজন যোগ্য নেত্রী হয়ে উঠবার নাম শেখ হাসিনা। ভিন্নমাত্রার মানুষ তিনি। নানা অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতায় জীবনকে সমৃদ্ধ করে চলেছেন। তাঁকে আর নতুন করে চিনিয়ে দেবার প্রয়োজন পড়ে না। বাংলাদেশের জাতির পিতা নিহত হবার পর জননেত্রী খ্যাত শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকার হালটি সঠিকভাবে না ধরলে, এদেশের রাজনীতিতে হয়তো অন্যরকম ইতিহাস লেখা হতো।
পদ্মাসেতু বিষয়ে একটু পিছনে ফিরে না তাকালেই নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে সফল এক প্রধানমন্ত্রীর নাম শেখ হাসিনা। বিশ্বের মানচিত্রে তাঁর অসাধারণ ও বিচক্ষণ নের্তৃত্ব আজ প্রশংসিত-স্বীকৃত। বহুকাল আগে রাজনীতির পরীক্ষা পর্ব পেরিয়ে তিনি আজ অনেককেই রাজনীতি শেখাবার ক্ষমতা রাখেন। বলছিলাম একজন নেত্রীর নের্তৃত্ব ও সাহসের সাথে দেশ পরিচালনার কথা।
এদেশে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শাসনামলে যতবেশি উন্নয়নের ধারা প্রবাহিত হয়েছে এমনটি অন্য সব সরকারের শাসনামলে দেখা যায় কি? এই উন্নয়নের পথে একজন শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেছিলেন জনগণের বহুল আকাঙ্খিত পদ্মা সেতুর। সেই ২০০১ সালের জুলাই মাসে প্রথম এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। ভেবেছিলেন পরেরবার ক্ষমতায় এলে এর নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করবেন। সেবার ক্ষমতায় না আসার দরুন তা আর হয়ে ওঠেনি। শেখ হাসিনার ভিত্তিপ্রস্তরে হাত দেয়নি সেই সময়ের বিএনপি-জামাতী সরকার। অথচ তখন যদি কাজটি করা যেতো তাহলে মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকায় কাজটি সমাপ্ত করা সম্ভব হতো। এখন এই সেতু নির্মাণে খরচ পরবে ২৬ হাজার কোটি টাকা। আবার সেই অর্থের জোগান দেবে স্বয়ং বাংলাদেশ। আর এর পিছনে রয়েছে এক করুণ-বেদনাবিধূর ও এক সাহসী পদক্ষেপের কথা।
২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নের্তৃত্বে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে সর্বাধিক গুরুত্ব পায় পদ্মা সেতু। কেননা এই সেতুটির সাথে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২৩টি জেলার মানুষের স্বপ্ন জড়িত। পদ্মার এপারে বহু মানুষের বসবাস, অসংখ্য মনীষীর জন্মও হয়েছে এখানে, আমাদের জাতির পিতার জন্মও হয়েছিল এই অঞ্চলে। কিন্তু বিএনপি-জামাতের কুনজরে পড়ে এপারের জাতিগোষ্ঠীরা থেকে গেছে তাই তিমিরে। দেশের উন্নয়নে, মানবজাতির উন্নয়নে যাতায়াত ব্যবস্থার বিকল্প নেই। শুধুমাত্র একটি সেতুর কারণে এপারের মানুষগুলোর উন্নয়নের চাকা তাই রয়ে গিয়েছে অধরা। সেসব কথাই বারবার মনে হয়েছে একজন শেখ হাসিনার। যারপরনায় তাকে এদিকে প্রবল মনোনিবেশ করে বিশ্বের বিভিন্ন অর্থসহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ প্রাপ্তির কথা বলতে হয়েছে। সে হিসেবে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছিল বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি ও আইডিবি। কিন্তু বিধিবাম! নানা জটিলতা তৈরি হতে থাকলো।
পদ্মা সেতু নির্মাণে আর্থিক কেলেঙ্কারীর প্রশ্ন উত্থাপন করলো অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বিব্রত হলো শেখ হাসিনার সরকার। মিথ্যা অপবাদে সে সময় মন্ত্রীকে পর্যন্ত সরে যেতে হয়েছিল। কিন্তু এর পিছনে যে ঘটনাগুলো ছিল, তা অনেকের কাছেই থেকে অজানা। মূলত বিখ্যাত এই সেতুকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর মোড়ল রাষ্ট্রগুলো আমাদের ওপর দাদাগিরি করার একটা সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। কৌশলে অনেক দাবি তারা আদায় করে নিতে চেয়েছে এ সময়। যার ফলে তারা নানারকম শর্ত আরোপ শুরু করলো। এছাড়াও এদেশের কয়েকটি রাজনীতিক দল ভিতরে ভিতরে নানা ষড়যন্ত্র করে সেতু প্রকল্পটিকে বাতিল করার চেষ্টা চালিয়েছে। আর সেই নগ্ন কাজটির ফফরদালালী করেছিলেন বিশিষ্ট সুদ ব্যবসায়ী খ্যাত নোবেল পুরস্কার বিজেতা ড. মুহম্মদ ইউনুস। তখন এই মানুষটি নানাভাবে আমাদের দেশটাকে বহির্বিশ্বে বিতর্কিত রাষ্ট্র বানাবার দুর্মর প্রচেষ্টা চালিয়েছে, যা ছিল অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এর বাইরে আরো যে ঘটনা মারাত্মক তাহলো, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যাবে না, গভীর সমুদ্রবন্দর প্রতিষ্ঠা করতে দিতে হবে, গার্মেন্স শিল্প নিয়ে নানামুখী বিতর্কিত প্রস্তাব, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নসহ বিভিন্ন প্রস্তাব দিতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বার্থে বিশ্বব্যাংক ও কতিপয় পশ্চিমা রাষ্ট্রের প্রস্তাবকে দৃঢ়চিত্তে প্রত্যাখ্যান করেন। বদলে যেতে থাকে দৃশ্যপট। এই বিষয়ে দেশি-বিদেশি নানামুখী ষড়যন্ত্রে আওয়ামীলীগের নেত্রী প্রচুর বিরক্তিবোধ করেন। এবং সমস্ত রকম অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করেন।
শেষপর্যন্ত, ২০১১ সালের ২৯ জুন বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতুর অর্থায়ন প্রকল্প স্থগিত করে। এই সময়ে শেখ হাসিনা একাই এক অসম্ভব-অকল্পনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেন। আর তাহলো দেশের টাকা দিয়েই তৈরি হবে পদ্মা সেতু। পৃথিবী এই সিদ্ধান্ত জানার পর অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিল। বহু রাষ্ট্র এ সিদ্ধান্তে হতবাক হলেও অনেক দেশ এ সিদ্ধান্তের প্রশংসাও করে। অবিচল আস্থা নিয়ে শেখ হাসিনা তাঁর গন্তব্যে এগুতে থাকেন। তিনি এ সময় তাঁর ফোন-ইমেইল সাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করে দেন। নানাশ্রেণি-পেশার মানুষ তাদের প্রিয় নেত্রীকে ফোন করে, ইমেইল করে সাহস জোগান। স্কুলের ছোটছোট বাচ্চারা পর্যন্ত তাদের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে টিফিনের টাকা পদ্মাসেতুতে দেবার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। শিহরিত হন তিনি, চোখ বেয়ে অশ্রু নেমে আসে। সাহসভরা জীবনে আরো সাহস সঞ্চারিত করে দেয় তাঁর প্রিয় জনগণ। বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, দেশের কুচক্রীদের মুখ উপেক্ষা করে, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে তিনি একাই দেশের এই বৃহৎ প্রকল্পকে সমর্থন দিয়ে কাজ শুরুর নির্দেশ দিলেন। এবং যথাসময়ে কাজ শেষ করার কথাও বললেন।
পদ্মাসেতুর যাবতীয় পরীক্ষা পর্ব শেষে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। সেতুটির মূল কাজ করছে চীনের ‘চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি’। আর নদী শাসনের কাজ করছে ‘সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন’। আশা করা য়ায় ২০১৮ সালের মধ্যেই স্বপ্নের এই সেতুর কাজ শেষ হবে। সেতুটি নানা কারণে পৃথিবীর ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে থাকবে। এটি একজন মানুষের চ্যালেঞ্জের প্রকৃষ্ট ও জ্বলন্ত উদাহরণ। একজন শেখ হাসিনার দেশমাতৃকার প্রতি দায়িত্ববোধের জ্বলন্ত প্রতিচ্ছবি এটি। দেশের এক বৃহৎ প্রকল্প যা দেশের টাকা দিয়েই তৈরি হচ্ছে, যা বাংলাদেশে প্রথম।
একজন শেখ হাসিনার স্বপ্নের পস্মা সেতুটির সাথে বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষের স্বপ্ন বিজড়িত। নির্মীয়মাণ বিশ্বখ্যাত এই সেতুটি এশিয়ান হাইওয়ের সাথে যুক্ত হবে, যার ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে এক বিশাল ভূমিকা বয়ে নিয়ে আসবে। দীর্ঘকাল অবহেলিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনে আসবে নতুন আলোর বন্যা। প্রিয় রাজধানী ঢাকা আর বহুদূর মনে হবে না তাদের। জ্বালানীতে আসবে আশানুরূপ সাশ্রয়। ঢাকাতে দিনে গিয়ে কাজ শেষে আবার দিনের আলোয় ফিরে আসা, এ এখন এইসব অঞ্চলের মানুষের সময়ের ব্যাপার মাত্র। একজন শেখ হাসিনার স্বপ্ন-কল্পনা আজ বাংলাদেশে বাস্তবতায় রূপান্তরিত। বাঙালি জাতিকে তিনি শুধু স্বপ্নই দেখান না, তার বাস্তব রূপও দেখান এটি আবারও প্রমাণিত হলো। স্বপ্ন-কল্পনা-বাস্তবতায় তিনি এক উজ্জ্বল রাজনীতিক। পদ্মাসেতু শেখ হাসিনার জীবনে এক পরমপ্রিয় চ্যালেঞ্জ। বাঙালি জাতি চ্যালেঞ্জ নিতে জানে। একজন খাঁটি বাঙালি গণতন্ত্রের মানসকন্যা খ্যাত শেখ হাসিনাও তাঁর চ্যালেঞ্জে হারবেন না। আর সে কারণেই বাংলাদেশে পদ্মাসেতুর বাস্তবায়নে সাহসিনী-সাহসিকা এক উজ্জ্বল প্রতিভাসম্পন্ন নারি শেখ হাসিনার নাম এদেশের মাটিতে চিরকাল জাগরূক থাকবে।
যা হোক, সারা বাংলাদেশে ইতিমধ্যে ১৪টি বৃহৎ সেতু, ৪ হাজার ৫০৭টি মাঝারি ও ছোট সেতু, ১৩ হাজার ৭৫১টি কালভার্ট এবং ২১ হাজার কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক ৪-লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্রগ্রাম এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ সড়ক৪-লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ আবারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে খাদ্য-শস্য উৎপাদন ছিল ২ কোটি ৭৮ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য-শস্য উৎপাদন হয়েছে।
২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত সার, সেচ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি বাবদ প্রায় ৪০ হাজার ২৭৮ কোটি টাকার কৃষিসহায়তা প্রদান করা হয়েছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দেশ। আমরা এখন চাল রপ্তানিও শুরু করেছি।
২০০১-এ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছিল। দেশের বর্তমানে শিক্ষার হার ৬৯ শতাংশ।
পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগ সরকার ৬ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ১৫৯ কোটি বই বিতরণ করেছে। এবছরেরপহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মাঝে ৩২ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯২৩টি বই বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুরাও ব্রেইল পদ্ধতির বই পাচ্ছে। প্রথম শ্রেণী থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত ১ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপ- বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। ২৬ হাজার ১৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকুরি জাতীয়করণ করা হয়েছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে সহকারি শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা ৩য় শ্রেণী থেকে ২য় শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে।সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩ হাজার ১৭২ টি কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। ২০ হাজার ৫০০টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ চালু করা হবে। এক হাজার ৪৯৭টি স্কুলে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া, সাউন্ডসিস্টেম ও ইন্টারনেট মডেম সরবরাহ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে আরও ৩ হাজার ৯৩০টি স্কুলে একই ধরণের উপকরণ বিতরণ করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। ১৬ হাজার ৪৩৮টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে ৩০ পদের ঔষধ দেওয়া হচ্ছে।
৭ বছরে সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৬.৫ বছর যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ বছর। দেশের প্রায় সব শিশুকে টিকাদান কর্মসূচী এবং সব মানুষকে নিরাপদ পানি প্রাপ্তি এবং স্যানিটেশনের আওতায় আনা হয়েছে।
গত সাত বছরে আওয়ামী সরকারের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। ৫ হাজার ২৭৫ টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০০ ধরণের ডিজিটাল সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা। বর্তমানে দেশে মোবাইল গ্রাহক ১১কোটি ৯৭ লাখ। ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৩০ লাখ। ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল “জাতীয় তথ্য বাতায়ন” চালু করেছে সরকার। আইটি সেক্টরে বিদেশ থেকে ১২৫ মিলিয়ন ডলার আয় হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কম্পিউটার সামগ্রীর উপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে, যার ফলে এখন স্বল্প মূল্য দিয়ে মানুষ কম্পিউটার ক্রয় করতে পারছেন। মোবাইল ফোন এখন সবার হাতে হাতে। সবাই এখন থ্রিজি গতির ইন্টারনেট ব্যাবহার করছেন। ইন্টারনেট এর মূল্য এই সরকার এতই কম করেছেন যার ফলে প্রায় সকল শ্রেণীর মানুষ এখন দ্রুত গতির ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছেন। সাব মেরিন ক্যাবল সংযোগ কে অপটিক ফাইবার ক্যাবলের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেবার কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আজ আমরা সত্যি মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশের নাগরিক। আমরা পশ্চিমা দেশের চাইতেও তথ্য পপ্রযুক্তিতে কম এগিয়ে নেই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তিনি নিজেই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। আমরা এখন ঘরে বসে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে দ্রুত গতিতে ইউটিউব এবং স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখতে পাচ্ছি।
আওয়ামী লীগ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা ঘোষণা করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাসে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে এই প্রথম নারীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সরকারি কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসিটিভ বাজেট তৈরি হচ্ছে। আজ নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে সপ্তম অবস্থানে বাংলাদেশ।
জাতীয় সংসদকে আওয়ামী লীগ সরকার সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। সংসদীয় কমিটিগুলোর নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। তারা মন্ত্রণালয়ের কাজের তদারকি করছে। সংসদের স্বচ্ছতা আনার জন্য আমরা সংসদ টেলিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। সংসদের কার্যক্রম সরাসরি প্রচারিত হচ্ছে।
গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের ৬০ বছর করা হয়েছে।
সামরিক-অসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন আবারও দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো হচ্ছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে ব্যাপকভাবে পদোন্নতির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ১৯৭৪ সালের প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে আর্মড ফোর্সেস গোল- ২০৩০ নির্ধারণ করা হয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীকে অত্যাধুনিক যুদ্ধসরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদকে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে এবং ইন্সপেক্টর পদকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও সশস্ত্রবাহিনীর ঝুঁকিভাতা বাড়ানো হয়েছে।
শ্রম আইন ও শ্রমনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন করা হয়েছে ৪ হাজার ১৭৫ টাকা। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনবাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার পাটকল বন্ধ করেছিল। বিজেএমসির ২৭টি বন্ধ পাটকলের মধ্যে ২৩টি ইতিমধ্যে চালু করা হয়েছে। আরও ৩টি চালু করা হবে। ২৭ লাখ ২২ হাজার ৫০০ জন বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও বয়স্ক মানুষ প্রতিমাসে ৪০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন। ৪ লাখ প্রতিবন্ধী প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগ সরকার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নিবন্ধন কাজ এগিয়ে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের অনেক বীরাঙ্গনা মা’দের এই সরকার সম্মানিত করেছেন।
আশ্রয়ণ, একটি বাড়ী একটি খামার, ঘরে ফেরা কার্যক্রম, দুস্থভাতাসহ ১২৮টি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর কার্যক্রম থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি সুবিধা পাচ্ছেন। ১ লাখ ২০ হাজার ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে ৫৫ হাজার একর কৃষি জমি বিতরণ করা হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ১ লাখেরও বেশি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
বিজিবি’র মাধ্যমে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার যশোর, সাতক্ষীরা, রংপুর,দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলার সংখ্যালঘু পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত উপাসনালয়, বাড়িঘর ও দোকানপাট পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী দ্বারা রামুর বৌদ্ধবিহার পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, হিজড়া, দলিত, বেদে ও হরিজন সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং সামাজিক নিরাপত্তা দিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার হিজড়া জনগোষ্ঠীকে ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নিয়ে স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনকে শক্তিশালী করেছে। যার ফলে দেশে দুর্নীতি অনেক কমে এসেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ ছিল বাক স্বাধীনতা হরণের দেশ, সাংবাদিক নির্যাতনের দেশ। ১৬ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০০টি মামলা দায়ের এবং ৭৫০টি হুমকি-হামলার ঘটনা ঘটে। অনেক সাংবাদিককে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।
বাংলাদেশে মিডিয়া এখন পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করছে। বর্তমান সময় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার নতুন ৩২টি টেলিভিশন, ২২টি এফএম রেডিও এবং ৩২টি কমিউনিটি রেডিও চ্যানেলের অনুমোদন দিয়েছে।
তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাংবাদিক সহায়তা ভাতা বা অনুদান নীতিমালা, ২০১২-এর আওতায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছে।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হয়েছেন। সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দুইটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাচিত হওয়ায় গণতান্ত্রিক বিশ্বে বাংলাদেশ নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের গণতন্ত্রকামী সকল দেশের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় ও সুসংহত হয়েছে।
গত বছর বাংলাদেশ IMSO, ITU এবং হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলসহ ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। ইউনেসকো শেখ হাসিনাকে ‘শান্তি বৃক্ষ’ পুরষ্কারে ভূষিত করেছে। জাতিসংঘ সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন দপ্তর এবং অরগানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে Visionary Award-2014 প্রদান করেছে। আমরা এমডিজি ১ থেকে ৪ অর্জন করেছি। বাংলাদেশ জাতিসংঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড এবং ITU–এর ‘ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে।
বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জনের ফলে সমুদ্র সম্পদ আহরণের পথ সুগম হয়েছে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে। “সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়” এই পররাষ্ট্রনীতির আলোকে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আমাদের সম্পর্ক উন্নত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সম্মানজনক অবস্থান করে নিতে পেরেছে।
সকলের মিলিত প্রচেষ্টায় দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আবারও অস্থিতিশীলতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারী, রাজাকার-আলবদরদের বিচারের কাজ এগিয়ে চলছে। রায় কার্যকর করা হচ্ছে।
এই বিচার বানচাল করতে, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে অন্ধকারের অপশক্তি যারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, জনগণের মঙ্গল চায় না তারা আবারও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের চেষ্টা করছে। বিএনপি’র নির্বাচনে অংশ না নেওয়াটা ছিল একটি রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত। তাদের এই রাজনৈতিক ভুলের খেসারত কেন জনগণকে দিতে হবে? বিএনপির রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্তের মাশুল তাদেরকেই গুনতে হবে, জনগণকে নয়।
“বিএনপি নেত্রীকে আমি আহ্বান জানাচ্ছি- নাশকতা, মানুষ হত্যা, বোমা-গ্রেনেড হামলা, অগ্নিসংযোগ, জানমালের ক্ষতি করা বন্ধ করুন। আপনার ভুল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের কারণে আজ আপনি ও আপনার দল সংসদে নেই। আপনি কাকে দোষ দেবেন? আপনার নিজেকেই দোষ দিতে হবে। নাশকতার পথ পরিহার করে শান্তির পথে আসুন। দেশের মানুষের আর্থ- সামাজিক উন্নয়নের জন্য কী কী করতে চান তা মানুষকে জানান। নিজেরদলকে গড়ে তুলুন। তাহলেই হয়ত ভবিষ্যতে সম্ভাবনা থাকবে। যে পথে আপনি চলছেন তা জনগণেরকল্যাণ বয়ে আনবে না। বরং মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা আরও হারাবেন। মানুষ নিরাপত্তা চায়, শান্তি চায়, উন্নতি চায়। আমরা অসুস্থ রাজনীতির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। যে রাজনীতি দেশের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য সেই রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই”। (-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা)
২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছিল, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করবে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আশা করছে, ইনশাআল্লাহ তার পূর্বেই তারা সেটা করতে পারবে। আমরা জানি যে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশকে আর গরীব দেশ বা আমেরিকার ভাষায় তলাবিহীন ঝুড়ি বলা যাবে না।
বর্তমানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, রায় ও ফাসি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। যা ছিল আপামোর বাঙালির বহুদিনের চাওয়া। এদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। জঙ্গিবাদ দমনে আওয়ামীলীগ সরকার সফলতার পরিচয় দিয়ে পৃথিবীব্যাপী আজ প্রশংসিত।
এখন আমরা বাংলা ভাই দেখিনা, কোন জঙ্গি তৎপরতা দেখিনা, দেখিনা ১০ ট্রাক অস্ত্র নিয়ে ধরা পরেছে কেউ। রাস্তায় এখন কোন বিরোধী দলের উপর হয়না গ্রেনেড হামলা। এই সরকার ধর্ম নিয়ে নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। ভেঙ্গে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির কালো হাত।
আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭১ এ যারা যুদ্ধ অপরাধের সাথে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় এনেছেন। এই বিচার কাজ করতে গিয়ে সরকারের অনেক চাপ সইতে হচ্ছে বিদেশী শক্তির কাছে। তবুও আওয়ামীলীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৈরি করে এইসব যুদ্ধ অপরাধীর বিচার কাজ পরিচালনা করে যাচ্ছেন সাহসি পদক্ষেপের মাধ্যমে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে কৃষিবান্ধব সরকার হিসেবে পরিচিত। কৃষিব্যবস্থায় পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ এখন এক অনন্য দেশ। কৃষিতে প্রচুর ভর্তুকি প্রদান করে, কৃষিব্যবস্থায় নতুন অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ এক দেশ। শেখ হাসিনার উর্বর মস্তিষ্কের সার্থক প্রয়োগে আজ বাংলাদেশের কৃষক সোনার ফসল ফলিয়ে মুখে হাসি নিয়ে ঘরে ফেরে।
বাংলাদেশে একসময় বিদ্যুতের খুটি ছিল, তাতে বিদ্যুত প্রবাহের তার ছিল না। এখন তাতে তার আছে, বিদ্যুৎও আছে। মানুষ আর অন্ধকার থাকে না। বাংলাদেশে বিদ্যুত ব্যবস্থায় এদেশের যেকোনো সময়ের চেয়ে বহুগুণ বিদ্যুত ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে।
আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই আমরা জয় করেছি আমাদের সমুদ্রসীমা। বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশ পেয়েছে।
ছিটমহলবাসীর দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান খুব দ্রুতই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে এই আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজাকারদের গাড়িতে এখন আর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যায় না। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে এই সরকারের কারনেই এখন নতুন প্রজন্ম চিনতে পারছেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এখন জানতে পারছেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃতেই যে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো এখন সেই ঘটনা নতুন প্রজন্ম জানতে পারছেন।
আওয়ামীলীগ সরকার মানুষের কল্যাণ ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বাসী। বাংলাদেশের বৃহৎ সফলতার ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ ও তাদের সরকারের অবদান অনস্বীকার্য। যোগাযোগ থেকে শুরু করে তথ্য প্রযুক্তি, সন্ত্রাস নির্মূল সব দিক দিয়েই সফলতা অর্জনের একমাত্র দাবীদার বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার। কিন্তু বারবারই আওয়ামী সরকার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। ষড়যন্ত্র এখনো আছে, চলবে। তাহলে বিএনপি-জামায়াত জোট কেন বার বার নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে? কেন তারা আবার দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নষ্ট করে দেশকে পিছনের দিকে এবং অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে চায়? দেশ ও জাতির ক্ষতি সাধনই কি তাদের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য? জাতির বিবেকের কাছে আজ আমাদের এ প্রশ্ন রইলো।
পরিশেষে, আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরের মতোই দিন বদলের ঘোষণা দিয়ে সরকার গঠন করেন এবং এই আওয়ামীলীগ সরকার একদিন দেশকে আরও উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে আমাদের সকলের বিশ্বাস। সুতরাং আমাদের বলতে বাধা নাই, যতদিন শেখ হাসিনার হাতে চলবে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।