প্রচ্ছদ

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

১৯ জুলাই ২০১৬, ১৭:১৮

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

imageসন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সব বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে রাষ্ট্রের সকল নিরাপত্তা বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতা অর্জনের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন,‘আমরা লক্ষ্য করছি যে-সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এর ধরন বদলেছে। যে কারণে আমি প্রত্যেক বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি এই অশুভ শক্তিকে দমনে প্রশিক্ষণ গ্রহণের আহবান জানাব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে এসএসএফ’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. শফিকুর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এমন কিছু সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ঘটনা ঘটেছে যা সত্যই ঘৃণিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের ঘটনা যে শুধু বাংলাদেশেই ঘটছে তা নয়, উন্নত বিশ্বের ঘটে চলেছে, এগুলো সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তির আবিস্কার এক দিকে যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করছে, অপরদিকে ধ্বংসাত্মক কাজে এগুলোর ব্যবহার মানুষের জীবনমানকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সে কারণেই আমি মনে করি- প্রত্যেক বাহিনীরই আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের পাাশাপাশি এগুলো ব্যবহারের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজনীয় সকল কিছুই তাঁর সরকার করবে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই বাংলাদেশ কোন ক্ষেত্রেই যেন পিছিয়ে না থাকে.. আমরা প্রত্যেক বাহিনীকেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেব।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জনগণের শক্তিকেই পুনরায় মূলশক্তি উল্লেখ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিভিন্ন ঘটনাবলীর তদন্ত করে এসব ঘটনায় সম্পৃক্তদের গ্রেফতার করছি.. তবে, এই সামাজিক ব্যাধি দূরীকরণে এটুকুই যথেষ্ট নয়, আমাদের এই দুই অপক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী চেতনাকে জাগ্রত করে এ বিষয়ে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন করে তুলতে হবে ।
তিনি গুলশানের একটি রেস্তোরাঁ এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে জঙ্গি হামলার পাশাপাশি সম্প্রতিকালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত গুপ্তহত্যার জন্য যুদ্ধাপরাধী এবং দেশের উন্নয়নবিরোধী অপশক্তি জড়িত বলে অভিযোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন. ‘আমি মনে করি- এসব ঘটনার ষড়যন্ত্রকারীরা কোনভাবেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বাঙালি জাতির উন্নয়ন প্রত্যাশী নয় এবং তারা কোনভাবেই বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্বের অন্যদেশের প্রশংসাবাক্য শুনতেও আগ্রহী নয়, যে কারণে তারা এই জঘন্য হামলা সংঘটিত করেছে।’
তাছাড়া, বিশ্ব সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদও এ সময় একইসাথে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
ইসলামকে কেউ যেন কলুষিত করতে না পারে তা প্রতিরোধে তাঁর সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসব নৃশংস কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থাই গ্রহণ করবে। পাশাপাশি এজন্য আন্তর্জাতিক মহলের আরও সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে।
ইসলামকে শান্তির ধর্ম উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ আজ এই ধর্মকে বিভিন্নভাবে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এটা ইসলামের মূল চেতনায় বিশ্বাসী জনগণের জন্য অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখজনক।
সন্তান-সন্ততিকে বখে যাওয়ার হাত থেকে তাদের রক্ষার জন্য পিতা-মাতা, অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের সন্তানরা কি করে, কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে- এসব বিষয়ের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখা প্রত্যেক পিতা-মাতা ও অভিভাবকের দায়িত্ব, যাতে করে তারা কোন ভুল পথে পা না বাড়াতে পারে।
সচ্ছল পরিবারের সন্তানদের একাংশ যাদের পরিবার তাদের কোনই অভাব-অভিযোগ অপূরণীয় রাখেনি -তারাই এই পথে পা বাড়াচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেখা যাচ্ছে তাদের কোন একটা চাওয়া-পাওয়ার অপূর্ণতাও তাদের মানসিক যন্ত্রনায় কারণ হচ্ছে।
সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী তাদের জন্য পিতা-মাতাকে আলাদা সময় বের করা এবং সন্তানদের জন্য ব্যয় করার আহবান জানিয়ে বলেন,‘আপনারা আপনাদের সন্তানের সবরকম ভাল-মন্দের দিকে নজর রাখবেন এবং ধর্মের প্রকৃত শিক্ষায় যেন তারা শিক্ষিত হতে পারে- সেই ব্যবস্থা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী গত ১৫ জুলাই থেকে মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোরে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যপী ১১তম এশিয়া-ইউরো সম্মেলনে (আসেম) প্রদত্ত বক্তৃতাতেও সন্ত্রাস এবং উগ্র চরমপন্থার শেকড় খুঁজে বের করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বলে জানান।
তিনি বলেন, ‘এদেরকে অর্থের যোগান দেয়, অস্ত্র দেয়, প্রশিক্ষণ দেয় এবং কারা এই যুবকদের মন্ত্রনা দিয়ে মানসিকভাবে তাদেরকে বিপর্যস্ত করে ধর্মীয় উগ্রবাদের বীজ রোপন করছে- তা খুঁজে বের করার জন্যও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়েছি।’
এসএসএফ সদস্যদের কর্মকান্ডের ভুয়শী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ফোর্স তাদের অন্তর্ভুক্তিকাল থেকেই উচ্চ মানসিক শক্তি, সর্বোচ্চ আনুগত্য এবং সর্ব্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছে।
তিনি বলেন, আমি মনে করি এসএসএফ কর্মকর্তারা যেভাবে তাদের ওপর ন্যস্ত দায়িত্ব বিগত ৩০ বছর যাবত অত্যন্ত আস্থার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছেন সেভাবেই আগামীর দিনগুলোতেও তাঁরা দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
এই বাহিনীর উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকান্ড সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য সরকার এর প্রযুক্তিগত উন্নয়নের যেসব পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে সেগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার জন্যও তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় এসএসএফ সদস্যদের নিজেদের ও পরিবার-পরিজন থাকার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আপনাদেরও সামাজিক ও পারিবারিক দায়বদ্ধতা রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে পেশাগত দায়বদ্ধতা। কাজেই পরিবারের সদস্যদের প্রতিও যত্নবান হবেন বলেই আশা করি।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার