প্রচ্ছদ

দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকে সিসিকের বর্জ্য আবর্জনায় দূর্গন্ধে জনস্বাস্থ্য হুমকীর সম্মুখীন

৩১ জুলাই ২০১৬, ০৯:৪৩

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

 

imageজাহাঙ্গীর আলম মুসিক: দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য দক্ষিণ সুরমা সহ বিভিন্ন এলাকার জনসাধারণের চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা এলাকার পরিবেশ দুষণের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রতিদিন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অসংখ্য ট্রাক সিটি কর্পোশেনের আবর্জনা সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে দক্ষিণ সুরমার পারাইরচক নামক স্থানে বর্জ্য আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বর্জ্য আবর্জনার দুর্গন্ধে এই এলাকার পরিবেশ দুষিত হয়ে উঠেছে। সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যানবাহনের যাত্রী সাধারণ ও চালককে নাকে রুমাল চেপে এ স্থানটি অতিক্রম করতে হচ্ছে। বর্জ্যরে দুর্গন্ধে অনেক যাত্রী শিশু ও মহিলা যাত্রী বমি করে ফেলে। শুধু তাই নয়, এই বর্জ্যগুলো পাশে থাকা বিল ও খালের পানিতে মিশে গিয়ে পানি দুষন হয়ে মাছের শরীরে পচন ধরে যায়।

এছাড়া আশপাশের কৃষি জমিতে কৃষকরা চাষ করার সময় পানি দুষণের কারণে চর্ম রোগ সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া ভাঙ্গা প্লাষ্টিক, বোতল ও পলিথিন ব্যাগগুলো কৃষি জমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়ায় এই এলাকার কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে ধান উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বাধ্য হয়ে কৃষকরা কৃষি জমির ফসল উৎপাদন থেকে বিরত থাকতে হচ্ছে। প্রতিদিন আবর্জনার স্তুপে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে আগুনের ধোয়া ও বিষাক্ত দুর্গন্ধে ৩/৪ কিলোমিটার জুড়ে জনসাধারণে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। শীত মৌসুমে ধোয়া ও কুয়াশা মিশ্রিত হয়ে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে এবং দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।

দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পারাইরচকের বর্জ্য আবর্জনা অপসারণ ও এ স্থানে আবর্জনা না ফেলার জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে এলাকাবাসী দাবী জানিয়ে আসছে। শুধু আশ্বাস বানী শুনিয়ে ২ যুগ অতিক্রম হতে চলেছে। এর স্থায়ী কোন সমস্যা সমাধান হয়নি। ফলে দিন দিন সমস্যা আরো ঘনিভূত হচ্ছে। এতে জনগণের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর ঢাক ঢোল পিটিয়ে অর্থ ব্যয় করে পরিবেশ দিবস পালন করা হলেও পারাইরচকের বর্জ্য আবর্জনার স্থায়ী সমস্যা সমাধানে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন মাথা ব্যথা নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান অফিস দক্ষিণ সুরমার আলমপুরে থাকলেও নিকটবর্তী পারাইরচকের দুষিত পরিবেশ কর্মকর্তাদের নজরে পড়ছে না। তাই বাধ্য হয়ে এলাকাবাসী দক্ষিণ সুরমার বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করে এর প্রতিকারের দাবী জানিয়ে আসছেন। এমনকি উপজেলার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বেশ কয়েকবার পারাইরচকের সভায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে বক্তারা বক্তব্য রাখেন।

সমস্যা সমাধান না হওয়ায় যে কোন সময় এলাকাবাসী ফুসে ওঠে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় পারাইরচকের ময়লা-আবর্জনা ফেলা বন্ধ ও স্থায়ী সমাধানের কথা লেখালেখি করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। সড়ক দিয়ে প্রতিদিন দিবারাত্রি দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ, রাজনগর, মৌলভীবাজার, বিয়ানীবাজার, কুলাউড়া, বালাগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকার ভারী ও হালকা যানবাহন যোগে যাত্রী সাধারণ যাতায়াত করেন। এ স্থানটি অতিক্রম করার সময় দরজা জানালা বন্ধ করে চালক স্টিয়ারিং ছেড়ে নাকে হাত দিয়ে স্থানটি অতিক্রম করেন। ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। অতীতে এলাকাবাসী সিলেট সিটি কর্পোরেশনের তিনটি ময়লা আবর্জনাবাহী ট্রাক পারাইরচক থেকে আটক করে মোগলাবাজারে নিয়ে যান। তৎকালীন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মোগলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়ে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে গাড়ীগুলো ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আজো পারাইরচকের সমস্যার সমাধান হয়নি।

গত দুই বছর পূর্বে পারাইরচকে ময়লা আবর্জনা দিয়ে জৈব সার তৈরীর প্লান্ট চালু করা হয়। প্রতিদিন এক্সরেলেটর দিয়ে ময়লা-আবজর্না নাড়াচড়ার ফলে দুর্গন্ধে জনগণের দুর্ভোগ আরো বেড়ে যায়। গত জানুয়ারী মাস থেকে সহায়তাকারী ফান্ডের কারণে এই প্লান্ট বন্ধ হয়ে যায়। জানা যায় সহায়তাকারী ফান্ডের অর্থের যোগান পেলে যে কোন সময় এই জৈব সার তৈরীর প্লান্ট চালু হবে। এতে এই এলাকার পরিবেশ আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। পারাইরচকে ময়লা আবর্জনার বিষাক্ত পানি বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন নালা, ডোবা ও পুকুরে পানিতে প্রবেশ করে পানি দুষিত হয়ে জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে। সিলেটে অসংখ্য জনশূন্য পাহাড়ী টিলা এলাকা রয়েছে। এসব স্থানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ময়রা আবর্জনা ফেলা হলে জনগণের ক্ষতির আশংকা থাকবে না।

তাই জরুরী ভিত্তিতে পারাইরচকের ময়লা আবর্জনা জনগুরুত্বপূর্ণ এ স্থানে ফেলা বন্ধ করে অন্যত্র স্থানান্তর করার জন্য ভুক্তভোগী মহল সিটি কর্পোরেশনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী এনামুল হাবিব এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখানে অতীত থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ভবিষ্যতে অন্যত্র আবর্জনা ফেলা যায় কিনা তা ভেবে দেখা হবে।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার