প্রচ্ছদ

হারিয়ে যাচ্ছে হাছন রাজার স্মৃতি

০৪ আগস্ট ২০১৬, ০০:০১

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

file‘মরিলে হইব মাটিতে বাসা, পড়িয়া থাকিবে লক্ষণশ্রী আর রঙের রামপাশা। লোকে বলে বলেরে ঘর-বাড়ি বালানায় আমার। জানতো যদি হাছন রাজা বাঁচব কত দিন, হায়রে বাঁচবে কত দিন, বানাইত দালানকোঠা করিয়া রঙিন। মরমী কবি হাসন রাজা তার জীবদ্দশায় এমনি বেশ কয়েকটি গান রচনা করেছিলেন। ছন্দে আর গানের কলিতে এক সময়ে জেগে উঠেছিল কবি দেওয়ান হাছন রাজার মরমী সুর। হাছন রাজা তার গানের সঙ্গে মিল রেখে বিশ্বনাথের রামপাশার বাড়িতে গড়ে তুলেননি কোনো রাজপ্রাসাদ। যেটুকু ছিল বর্তমানে ততটুকুই হারিয়ে যাচ্ছে। তৎকালীন সময়ে চুন-সুড়কির তৈরি একটি দেয়াল আর ছোট্ট পাকা একটি দোতলা দালান বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তা-ও কালের বিবর্তনে ধসে পড়ছে। সেগুলোই হাছন রাজার বাড়ির একমাত্র স্মৃতি। মরমী কবি হাছন রাজার সেই স্মৃতিগুলোও সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি গানের কলিতে ফুটে উঠেছিল আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য ও নানা শ্রেণী-পেশার মানুষের সুখ-দুঃখের কথা। তবে তার বেশির ভাগ গানেই রয়েছে দেহতত্ত্বের সমাহার। মুক্তমনা মানুষের মনের কথাগুলোকে তার গানের কলি দিয়ে তুলে ধরেছিলেন সভ্যতার কাছে। কবি হাছন রাজা সত্যিই ছিলেন একজন মরমী সাধক। আধ্মাতিক রাজধানী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা বাজারের পশ্চিমে রয়েছে মরমী কবি হাসন রাজার একটি বাড়িও। ওই বাড়িতে শুধু হাছন নয়, অনেক উত্তরসূরিরাও জন্মগ্রহণ করে দেশ-বিদেশে অনেক সুনাম কুড়িয়ে এনেছেন। হাছন রাজার সেই বাড়িতে একসময়ে ছিল পর্যটকদের ভিড়। রাজার জমিদারি জীবনের সেই ইতিহাস ও রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলোকে একনজর দেখার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা সেই বাড়িতে ছুটে আসতেন। এখন আর আগের মতো সেখানকার পরিবেশ নেই। জানা যায়, মরমী কবি হাছন রাজা প্রায় পাঁচ লাখ বিশ হাজার বিঘা সম্পত্তির মালিকও ছিলেন। দুঃখ্যজনক হলেও সত্য যে, কবি হাছন রাজার কোনো উত্তরসূরি না থাকায় রেখে যাওয়া স্মৃতিগুলোর দেখার মতো আগের পরিবেশ না থাকায় আগের মতো কোনো পর্যটক সেখানে যাননি।
ওই বাড়িতে রয়েছে শুধু দুটি জরাজীর্ণ কুটির ও খাজনা আদায়ের একটি বৈঠকখানা। আর ওই বৈঠকখানাটি ১৩৫২ বাংলা সনে নির্মাণ করেছিলেন রাজার প্রথম পুত্র খান বাহাদুর একলিমুর রাজা চৌধুরী। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অবহেলা আর অযত্নে পড়ে রয়েছে হাছন রাজার সেই বাড়িটি। এমনকি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে মরমী কবি হাছন রাজার রেখে যাওয়া পুরনো স্মৃতি।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার