প্রচ্ছদ

ধৈর্য বাড়াবেন যেভাবে

২৩ আগস্ট ২০১৬, ১৯:২৪

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

1436888001লিফটে ওঠার জন্য অনেকেই হয়তো লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। লিফট আসার পর একজনের পর আরেকজন উঠছেন। এই লাইন দেখে হয়তো বিরক্তি লাগতে শুরু করল আপনার। আর হুড়মুড়িয়ে অন্যদের পাশ কাটিয়ে ঢুকে পড়লেন ভিতরে। পাশের লোকটি হয়তো খুব বিরক্ত হয়ে কিছু কথা শুনিয়ে দিল আপনাকে।

আবার ধরুন কোনো কারণে হয়তো বিরক্ত আছেন আপনি। অধঃস্তন কর্মীকে হয়তো খুব ছোটখাটো বিষয় নিয়ে বকাঝকা শুরু করলেন। কিছুদিন পর দেখলেন আপনার এমন আচরণের কারণে কর্মীদের কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এতে বদনাম হচ্ছে আপনারই। নিজের প্রতিও হয়তো কখনো কখনো বিরক্ত হচ্ছেন এ রকম আচরণ করার জন্য।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অনেকেরই এমন ধৈর্যচুত্যির ঘটনা ঘটে। ছোটখাটো বিষয়ে রেগে যাওয়া, বেশির ভাগ সময় বিরক্তি বা অস্বস্তিবোধ এগুলো ধৈর্য হারানোর কিছু লক্ষণ।

কীভাবে বুঝবেন ধৈর্যহারা হচ্ছেন? এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক শাহীনুর রহমান বলেন, ‘অনেকে ছোটবেলা থেকেই ধৈর্যশীল বা সহনশীল হন। যাঁরা সহনশীল তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন যেকোনো পরিস্থিতিতে। আবার অনেকের বাল্যকাল থেকেই ধৈর্য কম থাকে। আসলে ধৈর্যশীল হতে চাইলে, আগে থেকেই ব্যক্তিকে বুঝতে হবে তাঁর ধৈর্যচ্যুতি ঘটে কি না। কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো দেখলে বোঝা যায় খুব অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন। যেমন :

• অনেক ক্ষেত্রে কথা বলার সময় হয়তো ছোট শ্বাসপ্রশ্বাস হয়।
• কথা বলার সময় অস্থিরতা কাজ করে।
• অল্পতে রাগ লাগে।
• হুড়োহুড়ি করার প্রবণতা।
• অস্বস্তিবোধ হওয়া।
• কোনো ঘটনা ভালোভাবে বিশ্লেষণ না করে দ্রুত বিচার করা।
• দাঁত কটমট করা।
• বিরক্ত লাগলে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ রাখা।
• অধৈর্য লাগতে থাকলে শরীরের পেশি ফুলে যাওয়া।

এসব বিষয় নিজের মধ্যে হচ্ছে দেখলে ধৈর্য বাড়ানোর জন্য কিছু বিষয় প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ বিষয়ে শাহীনুর রহমান বলেন,

• আসলে অল্প সময়ে ধৈর্য আনা মুশকিল। ছোটবেলা থেকেই এর অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। ধৈর্য বাড়ানোর বিষয়টি আসলে প্রতিদিনের চর্চার বিষয়।
• কোন কোন বিষয়ে ধৈর্যহারা হয়ে পড়ছেন বা ধৈর্য হারিয়ে যাচ্ছে বলে বোধ করছেন সেগুলো বের করে একটি তালিকা তৈরি করুন।
• বিষয়গুলোকে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করার চেষ্টা করুন। আর সবই আপনার মতো হবে না- এটাও ভাবুন। বিষয়গুলোর সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। এর আগে এই রকম অবস্থায় কী করেছেন সেটা মনে করে ওই একই পরিস্থিতিতে এ রকম করা যাবে না এটি ভাবুন। ধৈর্য হারা হলে ক্ষতি কিন্তু আপনারই।
• অনেকে ধৈর্যহীন এই বিষয়টি বুঝতে পারেন না। এই ক্ষেত্রে বন্ধুবান্ধব বা সহকর্মীদের বলা যেতে পারে তাঁর সমস্যাটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য।
• ধৈর্য হারাচ্ছে মনে হলে শিথিল থাকার চেষ্টা করুন, স্থির হওয়ার চেষ্টা করুন।
• আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন।
• উল্টো দিক থেকে গণনা করতে পারেন। ১০, ৯, ৮, ৭….এভাবে।
• কোনো কিছু পাওয়ার জন্য হয়তো অধৈর্য লাগছে। সেটা ভালোর জন্য হলে চাহিদাটি পূরণ করুন।
• নিজে কম বলে অন্যের কথা শোনার ক্ষমতা বাড়ান। শোনার বিষয়টি দুই ভাবে হতে পারে। এক, একটিভ (মনোযোগ দিয়ে শোনা)। দুই, ইমপ্যাথিটিক (অনুভব করে শোনা)।
• যদি কোনো বিষয়ে খুব অধৈর্য বা বিরক্ত লাগতে থাকে তাহলে একটু থেমে আবার শুরু করুন।
• ধৈর্য হারিয়ে যাচ্ছে মনে হলে বেশি বেশি করে হাসতে পারেন। এটাও কিন্তু কাজে দেবে পরিস্থিতিকে সামলাতে।
• ধৈর্য হারা হয়ে কারো সাথে অযথা খারাপ ব্যবহার হয়তো করছেন। পরে নিজের কাছে খারাপও লাগছে। ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে নিজের- এই ক্ষেত্রে নিজেকে প্রবোধ দেওয়া যেতে পারে এই কাজটি থেকে বিরত থাকার জন্য বা পুনরায় না করার জন্য।
• ঘৃণার জায়গায় থেকে বেরিয়ে ভালোবাসা দিয়ে অবস্থা অনুধাবনের চেষ্টা করুন।
• সামাজিক শিক্ষাও প্রয়োজন ধৈর্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে। যেমন : লাইনে দাঁড়নো, হুড়োহুড়ি না করে ধীরে সুস্থে সম্মিলিত কাজ করা –এগুলোর ধৈর্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক শিক্ষার অংশ।
• দৃশ্য কল্পনা করতে পারেন। যে পরিস্থিতিতে আপনার এ রকম অবস্থা হয়, সেই পরিস্থিতি কল্পনা করে কীভাবে পরিস্থিতিটি আবার হলে সামলাবেন সেটা চিন্তা করুন।
• অন্যের সীমাবদ্ধতা বোঝার চেষ্টা করুন।
• আবার হয়তো এমনও হতে পারে অনেকদিন ধরে ধৈর্য ধরছেন। তবে অপর মানুষটি বিষয়টির গুরুত্বই দিচ্ছে না। এতে একসময় ধৈর্য হারা হতে পারেন আপনি। এই ক্ষেত্রে এমনভাবে বিষয়টিকে তার কাছে আবার উপস্থাপন করুন যেন সে উপলদ্ধি করতে পারে। তবে সেটা রেগে নয়। বলিষ্ঠ তবে বিনয়ী ভঙ্গীতে। বারবার একই বার্তা পেলে উনি কিছুটা সচেতন হবে।

 

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার