চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং তিন দিনের সরকারি সফরে বড় অঙ্কের চুক্তি সইয়ের প্রস্তুতি
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১০:৪৫
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং তিন দিনের সরকারি সফরে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশে আসছেন। তাঁর সফর ঘিরে পররাষ্ট্র, অর্থ, বাণিজ্যসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে চলছে জোর প্রস্তুতি। সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে প্রত্যাশার পারদ ক্রমেই বাড়ছে। তাঁরা আশা করছেন, চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে। মধ্য আয়ের দেশে যাওয়ার পথে চীনের সঙ্গে বড় অঙ্কের ঋণ চুক্তি সই হবে বাংলাদেশের। বড় আকারের ঋণের প্রতিশ্রুতিও পাওয়া যাবে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চীনা প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ, ছয়টি জাহাজ কেনা, আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পে ঋণ চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারকও সই হওয়ার কথা রয়েছে।
আগামী ১৪ ও ১৫ অক্টোবর চিনপিংয়ের বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শি চিনপিংয়ের সফরে দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের কাছে অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিনিয়োগ, গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন ও সামরিক সহযোগিতার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতা বাড়ানো, বিদ্যমান সুদের হার কমানো, ঢাকা-সিলেট চার লেন সড়কসহ বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থায়নের জন্য চীনের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ জানানো হবে। চীনের পক্ষ থেকে পায়রা বন্দরে বিনিয়োগ, বিসিআইএম নিয়ে আলোচনা এগিয়ে নেওয়া, ভারত ও মিয়ানমার থেকে পাওয়া এক লাখ ১৮ হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন সমুদ্র এলাকায় বিনিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ দেখানো হবে।
অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশাবাদী, দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের আলোচনা শেষে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। পাশাপাশি চীনের পক্ষ থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আসতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, শি চিনপিং সর্বশেষ ২০১০ সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও শেষ পর্যন্ত তা হয়ে ওঠেনি। এবার তিনি তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন, তা ইতিমধ্যে নিশ্চিত করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের কয়েকজন নীতিনির্ধারক।
সূত্রগুলো বলছে, গতবারের মতো এবারও সফরকালে চীনা প্রেসিডেন্ট পাঁচ থেকে ১০ কোটি ডলার অনুদান ঘোষণা করতে পারেন। এ অনুদান যেকোনো খাতে খরচ করার সুযোগ থাকে। দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন জোরদারের অংশ হিসেবে তিনটি নতুন বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেরও কথা রয়েছে। ২০১০ সালে সফরকালে পাঁচ কোটি ডলার অনুদান ঘোষণা করেছিলেন শি চিনপিং।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, চীনে বর্তমানে সাড়ে চার হাজার পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। আরো ১৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা নিশ্চিত করতে গত বছর চীন সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। গত এক বছরে এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে অনেক চিঠি চালাচালি হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্টের সফরে ফের ওই ১৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে। এ ব্যাপারে চীনা কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক সাড়া দেবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশের মানুষ প্রথমবারের মতো নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের স্বপ্ন দেখছে। আট হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি ইতিমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি ও ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে অনুপোদন পেয়েছে। চীন সরকার এ প্রকল্পে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কর্মকর্তারা আশাবাদী যে চীনা প্রেসিডেন্টের সফরকালে টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি নিয়ে ঋণ চুক্তি সই হবে। পাশাপাশি ঢাকা থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীনকে দেওয়া একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলেরও ঋণ চুক্তি সই হওয়ার কথা রয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ প্রতিবছর যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে, তাতে জাহাজ ভাড়া বাবদই খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের নিজস্ব জাহাজের সংখ্যা কম হওয়ায় প্রতিবছর বড় অঙ্কের টাকা ভাড়া দিতে হয়। তাই নতুন ছয়টি জাহাজ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে চীন সরকার ঋণ দিচ্ছে দেড় হাজার কোটি টাকা। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরে এ প্রকল্পের ঋণ চুক্তি সই হবে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন