প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের শুভেচ্ছা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬, ১১:৩৯
ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর শ্রেষ্ঠ কন্যা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, তিনি যত না প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, তার চেয়েও বেশি জাতির কাছে একজন মা হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন।
বুধবার সারাদেশে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উদযাপিত হবে। তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, মঠসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭১তম সাধান সভায় যোগ দিতে নিউইয়র্কে সফর শেষে বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন।
জন্মদিন উপলক্ষে শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, লেখক, চিকিৎসক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্ট নাগরিকরা শেখ হাসিনার সুস্থাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তারা বাসসকে বলেন, শেখ হাসিনা দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি সম্প্রতি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বিশ্বসভায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন।
সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে দৃঢ় অবস্থান এবং আগস্ট হত্যাকান্ডের কলঙ্ক থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনায় তাঁর প্রতি তারা কৃতজ্ঞতা জানান।
তারা শেখ হাসিনাকে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে আখ্যা দিয়ে এবং নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিকূলতা মোকাবেলায় গৃহিত বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর সাহিত্য, ক্রীড়া এবং সঙ্গীতানুরাগেরও প্রশংসা করেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করে তাঁকে জনবন্ধু আখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার যোগ্য ও দৃঢ় নেতৃত্বে দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সামাজিক রূপান্তর ঘটেছে এবং দারিদ্র নির্মূল হচ্ছে। এজন্য সারা পৃথিবী তাঁকে ধন্য ধন্য বলছে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্ণর প্রধানমন্ত্রীকে একজন সৃজনশীল রাষ্ট্রনায়ক আখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে, পৃথিবীর রাজনৈতিক মিথস্ক্রিয়া এবং আমাদের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। তিনি তাঁর মেধা ও নিষ্ঠা দিয়ে দেশকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে বিশ্বে পরিচয় করিয়েছেন।
সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট প্রকৌশলী অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ও উন্নয়নমুখী নেতৃত্বের প্রশংসা করে তাঁর শুভ জন্মদিন কামনা করেন। তিনি আরো বলেন, ‘একজন প্রকৌশলী হিসেবে আমি মনে করি, যোগাযোগ খাতে অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পদ্মা সেতু এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে। যা দেশের বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জনগণের কল্যাণে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাও সেই অঙ্গীকার ও দৃঢ়তা নিয়েই দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
জাতিসংঘের ৭১তম সাধারণ সভায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর মানবতার আহ্বানের উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর এই আহ্বান কেবল এদেশের মানুষকে নয়, বিশ্ববাসীকে আশান্বিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় তাঁর দেয়া ভাষণে বিশ্ব মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে প্রধানমন্ত্রী যে আহ্বান জানিয়েছেন জাতি এবং বিশ্ববাসী সেই আহ্বানে সাড়া দেবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের বিভিন্ন শাখায় অসাধারণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। যা বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
তিনি বলেন, ‘তাঁর সাধারণ জীবন যাপন ও বিনয়ের জন্য ইতিমধ্যেই তিনি দেশের মানুষের হৃদয় ও মন জয় করেছেন। আমি তাঁর সুস্থ্য ও দীর্ঘ জীবন কামনা করি।’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনা এদেশের মানুষের একমাত্র আশ্রয় এবং উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি। তিনি বলেন, ‘তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকার না থাকলে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কোনদিনই সম্ভব হতো না।’ তিনি আরো বলেন, তাঁর যেমন প্রশাসনিক দক্ষতা আছে, অন্যদিকে তিনি দেশের মানুষকে ভালোবাসেন বাবার মতই দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য কাজ করেন।
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন দেশের বিপুল কর্মযজ্ঞে প্রধানমন্ত্রীর নিষ্ঠা ও শ্রমের জন্য জন্মদিনে তাঁকে অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব ও মানবাধিকারের প্রতি নিষ্ঠা বিশেষ করে শিশু অধিকার সুরক্ষায় তাঁর দৃঢ় অবস্থানের কারণে বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন ব্যক্তি মাত্র নন। শুধুই পরিবারের একজন সদস্য মাত্র নন। তিনি দেশের মানুষের সুখ-দুঃখের সঙ্গী, তিনি ব্যক্তির উর্ধ্বে। মানবিক চেতনার বিষয় তাঁর দর্শন। জন্মদিনের শুভ কামনায় এই প্রার্থনা করি, যে সবার চিন্তাকে স্পর্শ করুক শেখ হাসিনার মানবিকতার দর্শন।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জন অনেক। কিন্তু একজন চিকিৎসক হিসেবে আমার মনে যেটি বেশি দাগ কেটেছে সেটি হলো, কমিউনিটি ক্লিনিক। তিনি বলেন, ‘এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে একজন গর্ভবতী মা তার গর্ভাবস্থার প্রথম দিন থেকে সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। পৃথিবীর কোন দেশে এরকম অবকাঠামো নাই।’
ডা. দত্ত অটিস্টিক শিশুদের পূনর্বাসন, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাসহ সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। তিনি শেখ হাসিনার নিরোগ ও দীর্ঘ জীবন কামনা করেন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘সাম্প্রদায়িকতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় অবস্থানকে আমি শ্রদ্ধা করি।’ তিনি বলেন, তাঁর এই অনন্য মানবিক গুণাবলী এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম লেখা থাকবে।
জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একজন মায়ের মতো, একজন বোনের মতো। তিনি এমন মমতাপূর্ণ আচরণ করেন, মনে হয় না যে তিনি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ কন্যা।’
তিনি বলেন, যখনই তাঁর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়েছি, দেখেছি তিনি সবসময় অতিথিদের কাছে আসেন। টেবিলে টেবিলে গিয়ে খোঁজ খবর নেন, সবাই ঠিকমত খেয়েছে কিনা এবং দেয়া হয়েছে কিনা।
আনিসুল হক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে বিশেষভাবে যত্নবান।’
ক্রীড়া, শিল্প ও সাহিত্যের প্রতি শেখ হাসিনার অনুরাগের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি একজন লেখক হিসেবে বলবো যে, আমরা একজন সাহিত্যপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি, এটা আমাদের লেখকদের জন্য বিশেষভাবে গৌরবের বিষয়।’ – বাসস