পাঁচ ক্যাটাগরিতে ভাগ হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
০৩ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:৫২
অভিভাবকরা সন্তানের ভর্তির জন্য সব সময়ই ভালো স্কুল-কলেজের খোঁজ করেন। কিন্তু ভালো প্রতিষ্ঠানের তালিকা কারো কাছে নেই।
মূলত লোকমুখে যেই প্রতিষ্ঠানের নাম ছড়িয়ে পড়ে সেটাই ভালো বলে বিবেচিত হয়। এবার সরকারিভাবে ভালো-মন্দ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি করা হচ্ছে। দেশের ৩৬ হাজার সরকারি, এমপিওভুক্ত ও বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কলেজকে ভাগ করা হচ্ছে। অসাধারণ, অতি উত্তম, উত্তম, চলতিমান ও নিম্নমান—এই পাঁচ ভাগে ভাগ হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। ১৪টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে এই ভালো-মন্দ নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্যও পাওয়া যাবে এক ক্লিকেই। এতে অফিসে বসেই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাজিরাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আপডেট তথ্য জানতে পারবে শিক্ষা প্রশাসন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) এ লক্ষ্যে কাজ করছে। আজ মঙ্গলবার ডিআইএতে পিয়ার ইন্সপেকশন সফটওয়্যারের ডেমো প্রদর্শন করা হবে। মূলত এই সফটওয়্যারের মাধ্যমেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাটাগরি করা হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন। একই সঙ্গে ডিআইএতে নবনির্মিত শেখ রাসেল স্মৃতি সম্মেলন কেন্দ্র, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স এবং ভাষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ও ডিজিটাল বাংলাদেশের ম্যুরাল উদ্বোধন করবেন শিক্ষামন্ত্রী।
জানা যায়, দেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ৩৬ হাজার। কিন্তু ডিআইএর পক্ষে প্রতিবছর তিন হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। ফলে এক প্রতিষ্ঠান ১০ বছরের মধ্যে একবারের বেশি পরিদর্শনের সুযোগ থাকে না। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো আপডেট তথ্যও পাওয়া যায় না।
সূত্র জানায়, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিয়মিত পরিদর্শনের আওতায় আনতে পেয়ার ইনস্পেকশনের (এক প্রতিষ্ঠান আরেক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিরীক্ষণ) সূচনা করে ডিআইএ। এ লক্ষ্যে গত বছরের জুন ও অক্টোবর মাসে দুটি কর্মশালা এবং এর পর একটি সেন্ট্রাল ওয়েবসাইট করা হয়। একই সঙ্গে রাজধানীর পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাইলট প্রকল্প শুরু হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ, দক্ষিণ বনশ্রী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মদিনাতুল উলুম মডেল মহিলা কামিল মাদ্রাসা, মহানগর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মমতাজ উদ্দিন বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ। পাইলট প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করার পর আজ ডেমো প্রদর্শন করবে ডিআইএ।
জানা যায়, ডিআইএর সেন্ট্রাল সফটওয়্যারে ৩৬ হাজার প্রতিষ্ঠানের প্রতিটির জন্যই পেজ বরাদ্দ রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য আপডেট করতে হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির তথ্য, শিক্ষকদের চাকরিকালীন তথ্য ও ছবিসহ জীবনবৃত্তান্ত, ক্লাস ও শিফট অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের ছবিসহ যাবতীয় তথ্য, প্রতিদিনের হাজিরা ইত্যাদি আপলোড করতে হবে। এ ছাড়া ভালো-মন্দ প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের জন্য ১৪টি মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
১৪টি মানদণ্ড হলো—প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কার্যক্রম মূল্যায়ন, শিক্ষকদের পেশাদারিত্ব মূল্যায়ন, শিক্ষার্থী কৃতিত্ব মূল্যায়ন, শিক্ষকের গোপনীয় অনুবেদন, ক্লাস রুটিন পর্যালোচনা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সমাবেশ, শ্রেণিকক্ষ, পরিবেশ, স্যানিটেশন ও সাঁতার, শিক্ষার্থীদের আসন ব্যবস্থা, মিলনায়তন-সংক্রান্ত তথ্য, পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, শিক্ষার্থীর ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা যাচাই এবং আয়-ব্যয় বিবরণী।
ডিআইএ সূত্র জানায়, মূলত এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে উপজেলা, জেলা ও বিভাগওয়ারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে। এতে সব প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে মনিটর করা যাবে ও কাজের সর্বশেষ অবস্থা দেখে প্রতিষ্ঠানকে মেসেজ দেওয়া যাবে। কোনো প্রতিষ্ঠানকে ভয়েস মেসেজ বা নির্দেশনাও দেওয়া যাবে। একই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত শ্রেণিবিন্যাস করে সার্বিক চিত্র প্রতিবেদন আকারে পাওয়া যাবে।
ডিআইএর যুগ্ম পরিচালক বিপুল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ ও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে আমরা কাজ করছি। শিক্ষাব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের জন্যই মূলত এই উদ্যোগ। আমরা ডেমো প্রদর্শন করছি। এরপর এই কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাইব। অনুমোদন মিললে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে পুরোপুরিভাবে কাজ শুরু করতে পারব। ’
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন