জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে-প্রধানমন্ত্রী
২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ০৯:৫২
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর যারা তরুণ সমাজকে বিভ্রান্ত করে বিপথে চালিত করছে তাদের কেউই বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবে না। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ ও মাদকাসক্তের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারীদের যারা মদদ দেয়, লাখো শহীদের রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা যারা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিল- বাংলার মাটিতে তাদেরও বিচার হতেই হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা মানুষকে সর্বনাশের পথের ঠেলে দেয় মাদক। মাদক শুধু একজন মানুষকে নয় একটা পরিবারকে ধ্বংসের দিকেও ঠেলে দেয়। আর জঙ্গিবাদ নতুনভাবে আবির্ভূত হয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশ নয় এটা বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। এই সমস্যার উত্সটা কি? আমরা ধর্মে বিশ্বাস করি। ইসলাম ধর্মে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের স্থান নেই। মানুষ খুন করে কেউ বেহেশতে যেতে পারে না। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে প্রলুব্ধ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একটা ভাল ও অর্থশালী পরিবারের সন্তান হয়েও তারা কিভাবে জঙ্গিবাদের পথে যেতে পারে? কিসের আশায়, জঙ্গিবাদের পথে গেলেই বেহেশেতে যাবে? যারা গেছে তারা কি তাদের খবর পাঠিয়েছে তারা বেহেশতে গেছে? সেই খবর তো কেউ দিতে পারেনি। তাই এদের যারা বিভ্রান্ত করছে তাদের ব্যাপারেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ একটা ছেলে-মেয়ের জীবন অনেক মূল্যবান। তারা নিজেকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেবে এটা কখনো হয় না।
প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাজনীতির পাশাপাশি তোমাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকবে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের গড়ে তোলা। কারণ তোমাদেরই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দিতে হবে। আদর্শ-নীতি নিয়ে দেশ সেবার ব্রত নিয়ে নিজেদের গড়ে তুলবে।
প্রধানমন্ত্রী রূপকল্প ২০২১ ঘোষণার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, এখন বাংলাদেশ নিম্ম মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে আছে। বাংলাদেশ নিম্মে থাকবে না, উর্ধ্বে উঠবে। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা অবশ্যই মধ্যম আয়ের দেশ হতে পারবো। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় উন্নত সদৃদ্ধ দেশ হবে। জাতির পিতা বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে সুইজারল্যান্ড অফ দ্য ইস্ট। অর্থ্যাত্ প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড হিসেবে তিনি বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। আমাদের এই সুযোগ আছে। আজকে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। এ সময় মঞ্চে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত জীবিত থাকা ছাত্রলীগের অধিকাংশ সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই উপস্থিত ছিলেন। দলের এসব সাবেক নেতাদেরও ক্রেস্ট ও উত্তরীয় পরিয়ে দিয়ে সম্মান জানায় ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব।
খারাপ সংবাদের শিরোনাম না হওয়ার শপথ
আর কখনো খারাপ সংবাদের শিরোনাম না হওয়ার শপথ নিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাদের এ শপথ পড়ান। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগকে উদ্দেশ্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা আজকে শপথ নেব, আর কখনও খারাপ সংবাদের শিরোনাম হবো না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্জনকে ম্লান হতে দেবো না।’ তিনি আরো বলেন, ‘খারাপ শিরোনাম নেত্রীর অর্জনকে স্লান করে দেয়। আর শেখ হাসিনার ১০/১২টা উন্নয়ন দুইটা খারাপ কাজের মধ্য দিয়ে ম্লান হয়ে যায়। আমরা শেখ হাসিনার অর্জনকে ম্লান হতে দেব না।’ বক্তৃতায় ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেত্রী বলেছেন, রাস্তা বন্ধ করে কোনো শোভাযাত্রা করা যাবে না। আমরা রাজনীতি করি মানুষের জন্য। তাই জনভোগান্তি যেন না হয়, সেটা দেখতে হবে। আজকের দিনের জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’
বন্ধের দিন ছাড়া রাজধানীতে সমাবেশ নয়
জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এখন থেকে কেবলমাত্র শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে রাজধানীতে কোনও সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করবে না ছাত্রলীগ। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের পরপরই ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন এ ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘আমরা শুক্র ও শনিবার বন্ধের দিন ছাড়া অন্য কোনোদিন রাজধানীতে সমাবেশ কিংবা শোভাযাত্রা করবো না।’
পুলিশের জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। আর জনগণের শক্তিই আমাদের মূল শক্তি। সুতরাং আপনাদের ওপর জনগণের আস্থাকে বাড়াতে হবে এবং যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশেষ করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরো অধিক জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭’ উপলক্ষে উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত্কালে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘জনগণ চাইলেই দেখাতে পারে কে কি কাজ করে এবং তাদের কাছ থেকেই সঠিক তথ্যটা পাওয়া যায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে বহিঃবিশ্বে এবং দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র চলছে। এই ষড়যন্ত্র ্মোকাবেলায় পুলিশ বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় সহযোগী সংস্থাগুলোর সার্বিক উন্নয়নে তার সরকার কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার জঙ্গিবাদ বিরোধী জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করে বলেন, জঙ্গিবাদ যেন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য পুলিশের জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান চালিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের মাঝে একটা সচেতনতা সৃষ্টি করতে পেরেছি। জনগণকে এসব কাজের সঙ্গে আরো সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, জঙ্গিরা মিথ্যা কথা বলে, ধর্মের অপব্যাখা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। কোমলমতি শিশুদের এখান থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আইন শৃঙ্খলা যেন সুন্দর থাকে সেটা দেখতে হবে। বিএনপি-জমায়াতের শাসনামলে দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিজেরাই একটু স্মরণ করে দেখেন, এই জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের তারা (বিএনপি-জামায়াত) মদদ দিত, উস্কে দিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কোন এক দেশের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য ছিলো এই ঘটনা বাংলাদেশ সামাল দিতে পারবে না। এই বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সে একটি স্টেটাস দিয়েছিলো। কিন্তু আমরা সেটা পারলাম কয়েক ঘন্টার মধ্যে। তাতে মনে হলো কেউ কেউ খুশি হতে পারলো না। তিনি বলেন, এরকম হবে আমরা তাদের কাছে আকুতি করবো, অমুকের কাছে চাইবো, এটা চাইবো, সেটা চাইব। কিন্তু আমরা বাঙালিরা যে পারি, এখনো তারা চিনতে পারেনি। হলি আর্টিজানের জঙ্গি হামলা মোকাবেলায় পুলিশের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুই জন পুলিশ জীবন দিয়ে গেছেন, কিন্তু তারা অনেকগুলো মানুষকে বাঁচিয়ে গেছেন, দেশের সম্মান বাঁচিয়ে গেছেন।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, আইজিপি একেএম শহীদুল হক, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) মো. মোখলেসুর রহমান, মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান এবং গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুনুর রশীদ বক্তব্য রাখেন।