প্রচ্ছদ

মেয়ে পথশিশুদের গল্পগুলো নির্মম

০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৫:০৬

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

রুমেল আহমদ: সিলেট সহ বিভিন্ন শহরের ট্রাফিক সিগন্যালে কয়েক মুহূর্তের জন্য দাঁড়ালেই দেখা মিলবে এদের। একদল ছেলেমেয়ে গাড়ি থামা মাত্রই দৌঁড়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের কারো হাতে ফুল, কারও হাতে বই, কারো হাতে পত্রিকা, আবার কারও হাতে চকলেট। গাড়ির আরোহীদের কাছে তারা এগুলো বিক্রি করে।

শহরাঞ্চলের খুব পরিচিত দৃশ্য এটা। পরিচিত দৃশ্যের এই ছেলেমেয়েরা পথশিশু। পথই তাদের জীবন জীবিকার সবকিছু।

শহরাঞ্চলের পথশিশুদের কয়েকটি ভাগ রয়েছে। ১. কিছু শিশু যারা ২৪ ঘণ্টাই রাস্তায় থাকে। তাদের থাকার কোন জায়গা নেই। এ ধরনের পথশিশুদের বেশিরভাগ হয় এতিম নয় বাবা-মা তাদের ফেলে রেখে গেছে। ২. কিছু পথশিশুর পরিবার আছে। তারা দিনের বেলায় রাস্তায় থাকলেও রাতে পরিবারের সঙ্গে বাসায় বা অন্য কোথাও থাকে। ৩. কিছু পথ শিশু যারা পরিবারসহ রাস্তাতেই থাকেন।

যেসব মেয়েরা রাস্তায় তাকে তাদের জীবন বড়ই কষ্টের। তারা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়। সিলেট রেলস্টেশনের সামনে চোখে পড়ল এক পথশিশু। এই মেয়েটার বয়স হবে ৮-৯ বছর। শীতের সন্ধ্যায় মেয়েটি জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।

মেয়েটির মা তাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। মা বাসায় গেলেই খুব মারধর করে। তার বাবার কোন খোঁজ খবর নাই। এই মেয়েটি রাতে রাস্তায় থাকে।

মেয়েটি বলল, বিভিন্ন দুষ্ট লোকেরা তাকে নানা রকম খারাপ কথা বলে। রাতে রাস্তায় থাকতে তার কষ্ট হয়। যে বয়সে তার স্কুলে থাকার কথা সেখানে তার জীবন কত কষ্টের। এমনও দিন যায় এই ছোট মেয়েটির পেটে কোন খাবার পড়ে না।

এই শিশুটিও যৌন অত্যাচার থেকে বাদ যায় না। রাতে যখন নির্জন হয়ে যায় এলাকা, তখন সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে মানুষ। যৌন সন্ত্রাস ছিন্নভিন্ন হতে হয় এদেরকে।

সিলেট রেলস্টেশন, কদমতলী টার্মিনালে দেখা যায় অনেক পথশিশু। মেয়ে পথশিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। এক শিশু বলল ‘আমার বাপ মা নাই। আমি ছোট্টকাল থেইক্যা এইহানে থাহি। রাতে কেলাবে থাহি।’

এই শিশুটিও জানালো তার জীবনের দুঃসহ নানা স্মৃতি। এগুলো এতটাই করুণ যে লিখে বোঝানো কঠিন। মারধর, আধপেটা খাওয়া তার কাছে কিছুই না। আর শৈশবে মানুষের ধর্ষকামের যে দিকটি সে দেখেছে, তাতে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে সে গড়ে উঠতে পারবে কি না, তার সন্দেহ আছে। সবগুলো একই রকম।কদমতলী এলাকায় পাওয়া গেলো আরও একটি মেয়েকে। সে বলল ‘আমার বাড়ি নাই রাস্তাঘাটে ঘুমাই। মার বিয়া অইছে। আমি মার লগে থাহি না।’

এই পথশিশুরা পেটের দায়ে কাজ করছে দিনরাত। তাদের বাবা মার খবর জানে না। মেয়ে পথশিশুরা নানা বাজে কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তারা যৌনপল্লীতেও ঢুকে পড়ছে। সমাজ, রাষ্ট্র তাদের জন্য তেমন কিছু করতে পারছে না।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার