প্রচ্ছদ

আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

১৭ মার্চ ২০১৭, ১২:১৭

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

আজ ১৭ মার্চ, বাঙালি জাতির জীবনের এক আনন্দের দিন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মবার্ষিকী। জাতীয় শিশু দিবসও আজ। ১৯২০ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তত্কালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শেখ লুত্ফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। পিতা-মাতার চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয়। খোকা নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালির ত্রাতা ও মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ এবং জনগণের প্রতি মমত্ববোধের কারণে পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। এক রাজনৈতিক সংগ্রামবহুল জীবনের অধিকারী এই নেতা বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নেন স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার হিসাবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস পালিত হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধুর যখন জন্ম হয় তখন ছিল বৃটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। গ্রামের স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তত্কালীন বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় তার বিপ্লবী জীবন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামীয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে অর্থাত্ দেশবিভাগের বছর এ কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। পাকিস্তান-ভারত পৃথক হয়ে যাওয়ার পর শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যার মাধ্যমে তিনি উক্ত প্রদেশের অন্যতম প্রধান ছাত্রনেতায় পরিণত হন।
৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। তার নির্দেশনা মোতাবেক ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ৭৫’র ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
রাষ্ট্রপতির বাণী
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যত্ এবং সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দলমতনির্বিশেষে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত হূদয়বান ও মানবদরদি কিন্তু অধিকার আদায়ে ছিলেন আপোষহীন। রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
বাণীতে জাতির পিতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাল্যকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্ভীক, দয়ালু এবং পরোপকারী। স্কুলে পড়ার সময়েই নেতৃত্বের গুণাবলী ফুটে উঠে তাঁর মধ্যে। দেশের সকল শিশুসহ দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই বিশ্বনেতার সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙালি জাতিকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, শিশুদের কল্যাণে আমাদের বর্তমানকে উত্সর্গ করি। সবাই মিলে জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলি। আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
ব্যক্তি মুজিব শাহাদাত্বরণ করেছেন কিন্তু
মুজিব আদর্শ মৃত্যুঞ্জয়ী:জেপি
জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলাম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও বিনম্র ভালোবাসা জানিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছেন, যে নেতার জন্ম না হলে বাঙালির জাতিসত্ত্বার বিকাশ ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতো না। সেই নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিনে আমরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধাভরে ও বিনম্র ভালোবাসায় স্মরণ করছি।
জেপি নেতৃদ্বয় বলেন, সুমহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে আমরা তাঁর মৃত্যুঞ্জয়ী আদর্শ নিজেদের মাঝে ধারণ করব। তাঁর কাছ থেকে দেশপ্রেম, ত্যাগের দীক্ষা নিব এবং তাঁর আবাল্য লালিত স্বপ্ন সুখি সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলাদেশ গড়ার শপথগ্রহণ করব। আমরা আজকের এই দিনে মরহুম নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করি এবং বলতে চাই ব্যক্তি মুজিব শাহাদাত্বরণ করেছেন কিন্তু মুজিব আদর্শ মৃত্যুঞ্জয়ী।
কর্মসূচি
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে জাতির পিতার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়াতেও প্রতিবারের মতো বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার সকাল দশটায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণসহ বাদ জুম্মা দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা, সেলাই মেশিন বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং একই স্থানে অনুষ্ঠিত ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে আলোকচিত্র পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলো বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং পরের দিন ১৮ মার্চ বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সস্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকাল সাড়ে দশটায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদসহ আবাসিক হলের মসজিদ ও উপাসনালয়ে দোয়া-প্রার্থনা, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চারুকলা অনুষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
জেপির কর্মসূচি
জাতির পিতার জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যদায় পালনের জন্য জাতীয় পার্টির (জেপি) কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টায় জেপির সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ, সকাল সাড়ে ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন, সকাল ৯টায় টুঙ্গিপাড়াস্থ জাতির পিতার মাজার জিয়ারত এবং ফাতেহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত।
‘পিতা’র ত্রিমাত্রিক ভিডিও প্রদর্শনী
বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার রাজধানীর পান্থপথে স্টার সিনেপ্লেক্সে বিনামূল্যে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণের ত্রিমাত্রিক ভিডিওচিত্র ‘পিতা’র প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দেড় হাজার শিশু-কিশোরসহ আগ্রহীরা এ প্রদর্শনী উপভোগ করতে পারবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বিজ্ঞাপনী সংস্থা ‘মাত্রা’ প্রদর্শনীটির আয়োজন করেছে।
সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে
চিকিত্সা সেবা
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে সকল সরকারি হাসপাতালে আজ শুক্রবার রোগীদের বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের নির্দেশে আজ সারাদেশে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সব সরকারি হাসপাতালে এই চিকিত্সা সেবা দেওয়া হবে। এ সময় রোগীদের কাছ থেকে হাসপাতালের নির্ধারিত ফি নেওয়া হবে না। এছাড়া সকল সরকারি হাসপাতালে রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সূত্র : ইত্তেফাক

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার