বালাগঞ্জের বড়ভাঙ্গা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের নক্সা সম্পন্ন
১০ আগস্ট ২০১৭, ২১:০০
এসএম হেলাল, বালাগঞ্জ থেকে: সিলেট সুলতানপুর বালাগঞ্জ সড়ক’র শেষ প্রান্তে বালাগঞ্জ সদরস্থ বড়ভাঙ্গা নদীতে ব্রিজ নির্মাণের মাধ্যমেই লক্ষ লক্ষ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। এ ব্রিজটি স্থাপন হলেই যেমন সিলেট শহরের সাথে বালাগঞ্জবাসীর যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনেক অর্থ ও সময় সাশ্রয় হবে। অন্যদিকে বালাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সরাসরি যাতায়াত বিচ্ছিন্ন দেওয়ানবাজার, পশ্চিম গৌরীপুর এবং বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন’র লাখো মানুষের দীর্ঘদিনের দূভোর্গ লাঘব হবে। শুধু তাই নয়, বালাগঞ্জ’র ৩টি ইউনিয়নের সুবিধা বঞ্জিত জনসাধারণের পাশাপাশি উপকৃত হবেন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাজার যাত্রী সাধারণ।
জানা গেছে, বালাগঞ্জ সদরস্থ বড়ভাঙ্গা নদীতে আরসিসি ব্রিজ নির্মানের লক্ষ্যে বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে ২ কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট নির্ধারণ করে আরসিসি ব্রিজ নির্মানের নক্সা প্রস্তুত করা হয়েছে। নক্সাটি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস ও উপজেলা এলজিইডি অফিসের সমন্বয়ে অংপবহঃ উবংরমহ ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়। প্রস্তুতকৃত নক্সাটি পর্যালোচনা করার লক্ষে ৬ আগস্ট শনিবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রদীপ সিংহের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবদাল মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা সৈয়দ আলী আছগর,
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মোছা. রেফা বেগম, উপজেলা পরিষদের সদস্য বোয়ালজুড় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনহার মিয়া, পূর্ব গৌরীপুর ইউপি চেয়ারম্যান হিমাংশু রঞ্জন দাস, বালাগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মুনিম, দেওয়ান বাজার ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল আলম নজম, উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদ হাসান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। এছাড়ারও সুধীজনের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন, সিলেট কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংকের সাবেক পরিচালক মো. জুনেদ মিয়া, বালাগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. মাখন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মো. মকবুল মিয়া, সাপ্তাহিক কুশিয়ারার কূল পত্রিকার প্রকাশ হুসাইন আহমদ প্রমূখ। সভায় প্রস্তুতকৃত নক্সার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী মো. তাহমিদুল ইসলাম তানভীর, হামিদুল কবির বাপ্পি, নিয়াজ মুর্শেদ এর সাথে উপস্থি সভায় আলোচনা করে প্রাথমিক ভাবে নক্সাটির উপর সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
সভা শেষে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দাল মিয়া সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রস্তাবিত ব্রিজের দু‘পাড় দুটি প্রতিষ্ঠানের আওতায় আছে, একটি সওজ এবং একটি এলজিইডি‘র আওতাধীন। তাই প্রস্তুতকৃত নক্সাটির অনুমোদন দুটি জায়গা থেকেই নিতে হবে, আশা করি চলতি মাসের ১০ তারিখে উপজেলা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করতে পারবো। নক্সাটি সওজ এবং এলজিইডি থেকে অনুমোদন পেয়ে আসার সাথে সাথে আমরা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় চলে যাব। আমাদের বিশ^াস, চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই ব্রিজটি দৃশ্যমান করতে আমরা স্বক্ষম হব।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বোয়ালজুড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনহার মিয়া বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতু নির্মানের উদ্যোগকে অনুসরণ করে উপজেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে বড় ভাঙ্গা নদীতে আরসিসি ব্রিজ নির্মানের সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। এই পর্যন্ত আমরা যতটুকু এগিয়েছি, আশা করি প্রকৃতি আমাদের অনুকূলে থাকলে বছরখানিকের মধ্যে বালাগঞ্জবাসীর স্বপ্নের বড়ভাঙ্গা সেতু দৃশ্যমান হবে। তিনি আরও বলেন, এই ব্রিজ নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহনে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছেন এবং সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের সকল সদস্যবৃন্দ তথা সংশ্লিষ্ট ৬টি ইউনিয়নের সম্মানিত চেয়ারম্যানবৃন্দ। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বালাগঞ্জবাসীর পক্ষ থেকে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট সুলতানপুর বালাগঞ্জ সড়ক দিয়ে সিলেট’র দক্ষিণ সুরমা ও বালাগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করেন। কিন্তু সড়ক’র শেষ প্রান্তে বালাগঞ্জ সদরস্থ বড়ভাঙ্গা নদীতে একটি সেতু না থাকায় তীরে এতে তরী ডুবার মত এসব যাত্রী পথচারীকে খেয়া নৌকায় করে নদী পারাপার’র ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এতে বিশেষ করে নারী, শিশুদের দূর্ভোগ বেড়ে যায়। পাশাপাশি এ সেতু না থাকার কারণে বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার, পশ্চিম গৌরীপুর ও বালাগঞ্জ সদর ৩টি ইউনিয়ন’র লাখো মানুষ উপজেলা সদর’র সাথে সরাসরি সড়ক যাতায়াত সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এর মধ্যে বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন’র বাসিন্দা হয়েও কমপক্ষে ১০টি গ্রামের হাজার হাজার অধিবাসী ‘ভিনগ্রহ’র বাসিন্দা’র মত অবহেলিত পড়ে রয়েছে। সেতু না থাকার কারণে এসব গ্রাম এবং ইউনিয়ন’র জনগণকে উপজেলা সদর’র প্রশাসনিক কার্যক্রম’র পাশাপাশি থানা পুলিশ ও স্বাস্থ্য সেবা পেতে মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এসব এলাকার বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীরা উপজেলা সদর এ অবস্থিত বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসায় পড়ালেখা করছে। এসব শিক্ষার্থীরা বছর’র পর বছর খেয়া নৌকায় করে পারাপার হতে গিয়ে বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারছে না। এছাড়া ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবীসহ সাধারণ লোকজন’র ভোগান্তির সীমা নেই।
এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের এ দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে সিলেট ৩-আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, ২ আসনের এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া, বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দাল মিয়ার, সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানগন ও উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানবৃন্দ তাদের স্বস্ব অবস্থান থেকে আপ্রান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সড়ক জনপথ বিভাগ ও এলজিইডির সাথে অনুমোদন বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করে উপজেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে ব্রিজ নির্মানের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। সিদ্ধান্ত গ্রহনের পর মন্ত্রনালয় থেকে অনুমোদন নেওয়াও হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন