সিলেট-৩ আসনে সামাদ চৌধুরীকে ঠেকাতে তিন দলের ১২ প্রার্থী
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৭:০৪

নাহিদ সুলতান পাশা ঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করবে না কি পৃথক? এ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগ বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির ১৩ জন প্রার্থী মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। বিশেষ করে টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতারা অনেকটাই আগ্রাসী। কারো জন্য কোনো ছাড় দিতে রাজি নন তাঁরা। দলের ভেতর থেকে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে বিদ্রোহ।
সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের আগেই সিলেট-৩ আসনের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে তুমুল লড়াই শুরু হয়েছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ চার নেতা এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার দাবিদার। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ৪ জন। সেক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও। আওয়ামী লীগ থেকে ৪, বিএনপি থেকে ৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন চাইবেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। অবশ্য মনোনয়ন চাওয়ার দিকে এগিয়ে আছে জাপা। এ আসন থেকে জাপার মনোনয়ন চাইবেন ৫ প্রার্থী। মূলত সিলেট-৩ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী। আসনটিতে আওয়ামী লীগে দ্বিধাবিভক্তি থাকার কারণে অন্য দলের প্রার্থীরা সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছেন।
বিশেষ করে বর্তমান এমপি মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস এমপি হওয়ার পর থেকেই নানা কারণে আলোচিত। তাঁর বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের পাত্তা না দেওয়ার অভিযোগ যেমন আছে। তেমনি নিজ দলের বড় একটি অংশ কিছুদিন আগে তাঁর বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে নানা অভিযোগও তুলেন। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চান ১২ প্রার্থী। বলা যায়, সামাদ চৌধুরীকেই ঠেকাতে নিজ দল আওয়ামী লীগসহ, বিএনপি ও জাপার প্রার্থীরা এখন মরিয়া। তবে এ আসন থেকে টানা দুবার নির্বাচিত হয়েছেন সামাদ চৌধুরী। এবার তাঁর সঙ্গে পাল¬া দিয়ে মনোনয়ন লড়াইয়ে নেমেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাবীবুর রহমান হাবীব।
দক্ষিণ সুরমার, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনে বিএনপিতেও বিদ্রোহের কমতি নেই। দলীয় মনোনয়ন চান অন্তত চারজন। তাঁরা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল গফ্ফার, বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতা ব্যারিস্টার এমএ সালাম।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুর রহমান আতিক এ আসন থেকে আগে একবার নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি এবারও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন। তাঁর সাথে পাল্লা দিয়ে মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে আছেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও জেলা জাপার সদস্য সচিব উছমান আলী চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় সদস্য ও যুক্তরাজ্য জাপার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা এবং যুক্তরাজ্য প্রবাসী জাপা নেতা ব্যারিস্টার ইম্মানুল হামিদ এনাম ও মুহিদুর রহমান।
সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী বলেন, আমি এবারও মনোনয়ন চাইব। দল এবং নেত্রী যদি আমাকে প্রার্থী করেন তাহলে আমি নির্বাচনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি। তিনি বলেন, গত দুবারে একজন নির্বাচিত এমপি হিসেবে সিলেট-৩ আসনে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ
করেছি। জনগণ তা জানেন এবং উন্নয়নের ফল ভোগ করছেন। জনগণের ভালোবাসা আর দলের জন্য কাজ করার কারণে আগামীতে দল আমাকে মূল্যায়ণ করবে বলে আমি আশাবাদী।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে সিলেট-৩ আসনের সাধারণ মানুষ এবং তৃণমূল নেতাকর্মীরা আমাকে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আমি দেশরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকেই অগ্রাধিকার দেব। তিনি আমাকে যে আসনে মনোনয়ন দেবেন সেই আসন থেকেই নির্বাচন করব।’
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আহমদ আলী জানান, ‘মনোনয়ন চাওয়ার এখতিয়ার নেতাদের আছে। রাজনীতি করে একজন জনপ্রতিনিধি হতে চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’ সিলেট-৩-এ একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চাইতে পারেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মনোনয়ন চাওয়া একটা ব্যাপার আর দল থেকে মনোনয়ন পাওয়াটা হলো ভিন্ন ব্যাপার। বিএনপির হাইকমান্ড মনোনয়ন দেয়ার ব্যাপারে সবসময়ই যোগ্য নেতাদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সিলেট-৩ আসনের ক্ষেত্রে শফি আহমদ চৌধুরী একজন যোগ্য নেতা। তিনি সাবেক দু’বারের এমপি ছিলেন। এখনো মানুষের পাশে থেকে কাজ করছেন। সেক্ষেত্রে আমি মনে করি, এ আসনে দলের চেয়ারপার্সনের আস্থাভাজন নেতা শফি চৌধুরীই মনোনয়ন পাবেন।’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাবীবুর রহমান হাবীব জানান, ‘গত ১০ বছর থেকে সিলেট-৩ আসনের মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। জনপ্রতিনিধি না হয়েও অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করিয়েছি।’ মনোনয়ন চাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নেত্রী আমাকে এলাকায় কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী লীগের সব শ্রেণির নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতারাও চান আমিশ্র মনোনয়ন চাই। সবার প্রত্যাশা পূরণে মনোনয়ন চাইব। আগামীতে মানুষের পাশে থেকে সেবামূলক ও উন্নয়ন কাজ করে দেশের অগ্রযাত্রায় একজন কর্মী হিসেবে স্থান পেতেই আমি পথ চলছি।’
জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব উছমান আলী জানান, ‘দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব অনেক আগেই আমাকে সিলেট-৩ আসনে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। গত নির্বাচনেও আসাকে এ আসন থেকে পার্টির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের কারণে আমি মানোনয়ন প্রত্যাহার করি। এবারও দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আশাবাদী। কারণ পল্লিবন্ধু হুসেইস মুহম্মদ এরশাদ আমাকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন।’