এসডিজি অর্জনে নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর
২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১২:১২
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ (বাসস) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সবার জন্য টেকসই উন্নয়নের সফল বাস্তবায়নের জন্য নারীর ক্ষমতায়নে তাদেরকে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় উপকরণ ও সমান সুযোগের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবর্তনের অতি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হচ্ছে নারী। এজন্য সাসটেইন্যাবল ডেভলপমেন্ট গোলসের (এসডিজি) সফল বাস্তবায়নে নারীর ক্ষমতায়নের বিকল্প নেই। সব ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বিশ্ব সবার জন্য টেকসই উন্নয়ন অর্জনে কার্যকরভাবে সফল হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বুধবার জাতিসংঘ সদর দফতরে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পর্কিত জাতিসংঘ মহাসচিবের উচ্চপর্যায়ের প্যানেলের গোলটেবিল বৈঠকে একথা বলেন।
তিনি নারীর ক্ষমতায়নের বিদ্যমান বাধা অতিক্রম করতে নারীদের বাড়তি কাজের স্বীকৃতি, তাদের জন্য আরো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা নির্মূলের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ রাজনৈতিক অঙ্গনে সরকারের নিম্ন থেকে উচ্চ সকল স্তরে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, এসডিজি অর্জনে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নারীর অর্থনৈতিক অংশগ্রহণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটে নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন কর্মকান্ডে ২৭ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকার শ্রম ও উদ্যোক্তা খাতে নারীর সম্ভাবনা কাজে লাগাতে সক্রিয় পরিবেশ গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
জাতিসংঘ মহাসচিবের উচ্চপর্যায়ের প্যানেলে সুপারিশ এগিয়ে নিতে গ্রুপ অব চ্যাম্পিয়ন্স ফর উইমেন’স ইকোনমিক এ্যাম্পাওয়ারমেন্ট এবং ইউএন উইমেন এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট রিকা লুুইস গুল্লারমো সলিস রিভেরা, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতারেস, আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টাইন লাগারদে ও ইউএন উইমেন-এর ফুমজিল ম্লামবো-গচুকা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
সফল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের সামনের সারিতে আনতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের উল্লেখ করে বলেন, বিচার বিভাগ, বেসামরিক প্রশাসন সামরিক বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাস্তবায়ন সংস্থায় নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়া সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতে কর্মরত নারীদের জন্য পূর্ণ বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের জামানত ছাড়া ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিচ্ছে। ১০ শতাংশ শিল্প প্লট ও ১০ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তহবিল নারীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ডেডিকেটেড ডেক্স রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের মাইক্রো ফিন্যান্স স্কীম ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজেস (এসএমই) দারিদ্র্য দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখছে। কমপক্ষে ১০ শতাংশ ঋণ নারী পরিচালিত এসএমই’র জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকার নারী ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে জয়িতা নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছে। এই ফাউন্ডেশন থেকে তৃণমূল পর্যায়ে ১৮ হাজার নারী উদ্যোক্তা সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, নারীদের স্বকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে তাদেরকে সেলাই, মোবাইল ফোন সার্ভিস, নার্সারী, বেসিক কম্পিউটার ও আইটি প্রশিক্ষণের মতো বিভিন্ন পেশায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। আমাদের অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৪০ লাখেরও বেশি নারী পোশাক শিল্পে কাজ করছে। ৩৫ শতাংশ নারীর ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে। জিডিপিতে নারীর অবদান হচ্ছে ৩৪ শতাংশ। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে প্রত্যেক খাতে নারীর অংশগ্রহণ ৪০ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনে যোগদানকারী রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মানে জেনারেল এ্যাসেম্বলী বিল্ডিং জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত আনুষ্ঠানিক মধ্যহ্ন ভোজে যোগ দেন।