প্রচ্ছদ

শতবর্ষে শাহ আবদুল করিম : নগরীতে আজ জন্মশতবর্ষ উৎসব

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ০৭:৪৬

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

file (1)১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ঃ  আজ থেকে ঠিক একশ’ বছর আগে এইদিনে জন্মেছিলেন ভাটির সুরের জাদুঘর শাহ আবদুল করিম। ভক্ত অনুরাগীরা যাকে ভালোবেসে ‘বাউল সম্রাট’ নামে অভিহিত করে থাকেন। আর নিজের গানে করিম নিজের পরিচয় দিয়েছেন ‘বাংলা মায়ের ছেলে’ হিসেবে।

ক্ষণজন্মা এই বাউল শিল্পীর জন্মশতবার্ষিকী পালনে সিলেটে ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। আজ (সোমবার) বিকেলে সিলেট কবি নজরুল মিলনায়তনে আয়োজিত হবে শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উৎসব।

ছিলেন রাখাল বালক। স্কুলে কয়েকদিন মাত্র গিয়েছেন। সারাজীবন দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করেছেন। বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন প্রিয়তমা স্ত্রী সরলা। তবু গান ছেড়ে যান নি করিম। বরং এইসব প্রতিকূলতা তাকে আরো দৃঢ়চেতা করেছে। গানের জন্য তাকে ধর্মজীবীরা একঘরে করেছে, স্ত্রী সরলা আর শিষ্য আকবরের জানাযায় অংশ নেয় নি এলাকাবাসী।

শাহ আবদুল করিম শুধুমাত্র বাউল ছিলেন না, তিনি একাধারে গণসংগীত শিল্পীও। সারাজীবন শোষিত বঞ্চিতদের পক্ষে গান লিখেছেন। তাঁর আঘাতের লক্ষ্য ছিলো ভণ্ড রাজনীতিবিদ, শোষক, পুঁজিবাদ আর সাম্রাজ্যবাদ। ধর্মের অপব্যবহার তো অবশ্যই।

একবার এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন- ‘আমি বেহেস্ত, দোজখ চাই না। জীবিত অবস্থায় আমার ভাটি অঞ্চলের বিপন্ন মানুষের সুখ দেখতে চাই। ওই মানুষগুলোর সুখ যারা কেড়ে নিয়েছে আমার লড়াই তাদের বিরুদ্ধে। একসময় তত্ত্বের সাধনা করতাম, এখন দেখি তত্ব নয়, নিঃস্ব-বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেহতত্ত্ব, নিগূঢ়তত্ত্ব, আর সোনার বাংলা সোনার বাংলা করলে হবে না। লোভী, শোষক, পাপাত্মাদের আঘাত করতে হবে।’

আবদুল করিমকে বাউল সম্রাট উপাধি কে প্রথম প্রদান করেছিলেন তা জানা দুষ্কর। তবে তিনি আক্ষরিক অর্থেই হয়ে ওঠেছিলেন বাংলার মাটির যে গান আর গ্রামীণ যে জনপদ দেশ ও দশের পেটে প্রতিমুহূর্তে অন্ন যোগায় তাদের কষ্ট, মান অভিমান, ভালোবাসা ও বেঁচে থাকার সুরের সম্রাট।

২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান শাহ আব্দুল করিম।

শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উৎসব:
সোমবার বেলা চারটায় নগরের রিকাবিবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয়েছে ‘শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উৎসব’। এতে কলকাতার প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী মৌসুমী ভৌমিকসহ ভারত ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পী ও করিমশিষ্যরা গান পরিবেশন করবেন।

শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উদযাপন পর্ষদের উদ্যোগে এবং প্রথম আলোর সার্বিক সহযোগিতায় উৎসব শুরু হবে বেলা চারটায়। উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট লেখক ডক্টর তপোধীর ভট্টাচার্য। এরপর আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবে করিম অনুরাগীদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন ‘শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উদযাপন পর্ষদ’-এর আহ্বায়ক শুভেন্দু ইমাম ও সদস্য-সচিব সুমনকুমার দাশ।

আলোচনা পর্বে সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ডক্টর মো. সালেহ উদ্দিন, প্রথম আলোর উপসম্পাদক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, ভারতের লেখিকা ডক্টর স্বপ্না ভট্টাচার্য, করিম-তনয় শাহ নূরজালাল প্রমুখ বক্তব্য দেবেন। আলোচনা পর্বের পর কলকাতার প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মৌসুমী ভৌমিক, নাট্যকার ও অভিনেতা ফজলুল কবীর তুহিন ছাড়াও বিশিষ্ট শিল্পী ও করিমশিষ্যরা শাহ আবদুল করিমের গান পরিবেশন করবেন।

উৎসব সফল করার জন্য ২৩৩ সদস্যবিশিষ্ট ‘শাহ আবদুল করিম জন্মশতবর্ষ উদযাপন পর্ষদ’ গঠন করা হয়েছে। পর্ষদের আহ্বায়ক শুভেন্দু ইমাম জানান, উৎসবে করিমের স্নেহধন্য শিষ্যদের পাশাপাশি দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের নানা রকমের পরিবেশনা থাকবে। এ ছাড়া করিমের বই নিয়ে থাকবে বইমেলা। উৎসবটি সবার জন্য উন্মুক্ত। উৎসব উপলক্ষে ‘শাহ আবদুল করিম : জন্মশতবর্ষ স্মরণ’ শীর্ষক একটি স্মারক-সংকলন প্রকাশিত হবে।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার