স্থায়ী হচ্ছে সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক
১০ মার্চ ২০১৬, ১৪:৫১
প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠকে উঠছে আজ
স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপ নিতে যাচ্ছে দেশের সাড়ে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক। গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা দিতে গঠন করা হচ্ছে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা ট্রাস্ট’। প্রস্তাবিত এ ট্রাস্ট সার্বিকভাবে কমিউনিটি ক্লিনিক দেখভাল করবে। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকে সহায়তা করতে পারবেন সরকারি-বেসরকারি যে কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। উল্লিখিত বিধান রেখে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা ট্রাস্ট আইন-২০১৬’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদনের জন্য আজ সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ‘প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি’র বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। এছাড়া বৈঠকে ‘মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও এর সংযুক্ত অধিদফতর, পরিদফতর, দফতর এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থা ও কর্পোরেশনের কমন পদের নিয়োগ বিধিমালা-২০১৬’ এবং ‘সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা-২০১৬’ উপস্থাপন করা হতে পারে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এ প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রস্তাবিত আইনের আওতায় গঠিত হবে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা ট্রাস্ট’ নামে একটি ট্রাস্ট। ট্রাস্টিবোর্ডের সভাপতি হবেন প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত কোনো একজন ব্যক্তি। এছাড়া স্বাস্থ্যসচিব, অর্থবিভাগের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য মহাপরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক, এসেনসিয়াল ড্রাগ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির সভাপতি, সরকার মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট ব্যক্তি (একজন চিকিৎসক হতে হবে) সদস্য থাকবেন। আর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব থাকবেন কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়, ক্লিনিক পরিচালনায় ব্যয় নির্বাহে ট্রাস্টের নামে তহবিল থাকবে। তহবিলের দুই অংশের মধ্যে একটি স্থায়ী তহবিল এবং অপরটি চলতি তহবিল হিসেবে পরিচালিত হবে। স্থায়ী তহবিল সরকারের এককালীন দেয়া অর্থ, যা ব্যাংকে জমা থাকবে। এর লভ্যাংশের সমুদয় বা আংশিক অর্থ স্থায়ী তহবিল হিসাবে জমা থাকবে। আর সরকারের জাতীয় বাজেট থেকে বরাদ্দ দেয়া অর্থ যাবে চলতি তহবিলে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে দেয়া কোনো কর্তৃপক্ষের অনুদান, অর্থলগ্নীকারী ব্যাংক-বীমার স্বেচ্ছাধীন অনুদান, প্রবাসীদের অর্থিক সহায়তা, সরকার অনুমোদিত দেশী-বিদেশী উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ, সমাজের বিত্তবান, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও অন্যান্য সংগঠন থেকে স্বেচ্ছাধীন পাওয়া অর্থ চলতি তহবিল হিসাবে পরিচালিত হবে। চলতি তহবিলের অর্থও ব্যাংক হিসাবে জমা রাখতে হবে এবং ট্রাস্টের যে কোনো কাজে তা ব্যয় করা যাবে। ট্রাস্টি বোর্ড প্রতি বছর ৩০ জুনের পর আগের অর্থবছরের সম্পাদিত কার্যাবলীর একটি প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করবে। যে প্রকল্পের আওতায় কমিউনিটি ক্লিনিক চলছে ওই প্রকল্পের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ট্রাস্টে ন্যস্ত হবে। ট্রাস্টের একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। উপদেষ্টা পরিষদ সরকারি গেজেট বা প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত হবে। এছাড়া ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালনায় একাধিক কমিটি গঠন করতে পারবে ট্রাস্টি বোর্ড।
ট্রাস্টি বোর্ডের দায়িত্ব ও কার্যাবলী প্রসঙ্গে খসড়ায় বলা হয়েছে, কমিউনিটি ক্লিনিক এলাকায় গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের নিরবচ্ছিন্ন সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য প্রশাসনিক, আর্থিক ও অন্যান্য ব্যবস্থাপনা সম্পাদন। পাশাপাশি ট্রাস্টের তহবিলের অর্থ সংগ্রহ ও ব্যবহার, ট্রাস্টের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে তারা। এছাড়া সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও কর্মসূচির সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পৃক্তকরণ, কমিউনিটি গ্রুপ ও কমিউনিটি সপোর্ট গ্রুপ সক্রিয় ও গতিশীল করা এবং সরকার বা উপদেষ্টা পরিষদ নির্দেশিত অন্যান্য কাজ সম্পাদন করাও ট্রাস্টি বোর্ডের দায়িত্ব বলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, গ্রামের গরিব-দুঃখী মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেন কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠার। ১৯৯৬ সালে এ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৯৮ সালের ২৮ জুন একনেক সভায় এটি অনুমোদন লাভ করে। বর্তমানে সাড়ে ১৩ হাজারের মতো কমিউনিটি ক্লিনিক চলছে। এ পর্যন্ত সুবিধাবঞ্চিত ৩৫ কোটির বেশি মানুষ সেবা পেয়েছে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন