প্রচ্ছদ

দুশ্চিন্তায় রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা

১২ মার্চ ২০১৬, ০৯:৫৪

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

be5bd96a4e5c0ccd7e749b3d018c881b-56e339b545424পণ্যবাহী কন্টেইনার
তৈরি পোশাক ছাড়া অন্য প্রায় সব খাতেই রফতানি আয় কমেছে। এমন সময়ে যুক্তরাজ্যে সরাসরি বিমানে পণ্য পরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, যুক্তরাজ্যের এমন সিদ্ধান্ত প্রভাব ফেলতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোতেও। তা হলে, ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে পুরো রফতানি খাত।
এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ যুক্তরাজ্যে আমাদের কার্গো বিমান সরাসরি যেতে না পারলে প্রথমত, আমাদের ইমেজের জন্য বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া ২০২১ সালের মধ্যে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি ডলারে যাওয়া তো দূরে থাক, বিদ্যমান বাজার ধরে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে সরাসরি যুক্তরাজ্যে পণ্য পাঠাতে না পারলে তা সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড ও দুবাই হয়ে পাঠাতে হবে। এতে খরচ বাড়বে, সময়ও বেশি লাগবে। ফলে বিশ্ববাজারে আমাদের প্রতিযোগী সক্ষমতা কমবে।
প্রসঙ্গত, মাস দু’য়েক আগেও একই রকম ঘোষণায় পণ্য পরিবহন স্থগিত করেছে অস্ট্রেলিয়া। সে সময় সরকারিভাবে এটি সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হলেও, উন্নতি নেই খুব একটা। এমন অবস্থা দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের। তাই তাদের মতে, এখনই নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান জোরালো না হলে, নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে রফতানি খাতে। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় আসে ৬০ শতাংশের বেশি। যার বড় অংশই যায় যুক্তরাজ্যে।
ঢাকার সঙ্গে যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো বিমান চলাচলে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা জারি করায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে দেশের তৈরি পোশাক খাত। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ি, গত বছর যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। চলতি বছর যুক্তরাজ্যে রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সাড়ে ৩০০ কোটি ডলারের।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ি, ফেব্রুয়ারিতে তৈরি পোশাক রফতানি আয় বাড়লেও অন্য প্রায় সব খাতেই রফতানি আয় কমেছে। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে হিমায়িত চিংড়ি রফতানি কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। কৃষি পণ্যের মধ্যে চা রফতানি কমেছে ৪২ শতাংশ। শাকসবজি ৪০ শতাংশ, তামাক ২৪ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং ফল রফতানি ৩৩ শতাংশের বেশি কমেছে। চামড়া রফতানি কমেছে ৩০ শতাংশের বেশি। এছাড়া প্লাস্টিক কমেছে ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি কমেছে ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারকদের সংগঠন বিএফএফইএ সভাপতি এসএম আমজাদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘গেল কয়েক মাস যাবত ইউরোপে মুদ্রার অব্যমূল্যায়নের কারণে চিংড়ি ও হিমায়িত মাছ রফতানি থেকে আয় কমে গেছে। এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে সরাসরি বিমানে পণ্য পরিবহন বন্ধ হলে এই খাতে রফতানি আয় আরও কমে যাবে।’

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যের এমন সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোতে পড়লে এই খাত আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ এ খাতে প্রায় ৮৫ শতাংশ আয় আসে ইউরোপ থেকে।’

প্রসঙ্গত: গত বছরের ১৯ ডিসেম্বরের পর ঢাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সরাসরি বিমানযোগে পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হলো যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা। পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষে যুক্তরাজ্যের বিমান নিরাপত্তা বিষয়ক দফতর বিশ্বের ২০টি দেশের ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরের তালিকায় শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরও রয়েছে।
শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং সংস্থা বাংলাদেশ বিমানের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, প্রয়োজনীয় মেশিনপত্র ও দক্ষ জনবল না থাকার অজুহাতে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহনে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য সরকার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ বিমানকে দেওয়া এক চিঠিতে শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্যের সরাসরি ফ্লাইটে কার্গো পণ্য পরিবহনের ওপর এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানায়

ইপিবির তথ্য অনুযায়ি, চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রফতানি আয় বৃদ্ধির হার প্রায় ৯ শতাংশ। এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।

রফতানিকারকরা বলছেন, রফতানিমুখি খাতগুলো এখনও বহুমুখী হয়ে উঠতে পারেনি। মোট রফতানি আয়ের ৮২ শতাংশের উৎস তৈরি পোশাক। পণ্যটির রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বলেই সামগ্রিক রফতানি খাতের এর ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

ইপিবির তথ্য অনুযায়ি, অর্থবছরের ৮ মাসে তৈরি পোশাক থেকে আয় হয়েছে ১ হাজার ৮১২ কোটি ৭০ লাখ (১৮.১২ বিলিয়ন) ডলার । যা মোট রফতানির ৮২ শতাংশ।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের শুরুতেই রফতানি আয়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা দেয়; জুলাইয়ে আয় কমে যায় ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটতে থাকে।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার