‘আমি জনগণেরই একজন। আমার জন্মদিনই কি, মৃত্যুদিনই কি! ’
১৭ মার্চ ২০১৬, ১০:১৯
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
মুক্তিযুদ্ধের ঠিক নয়দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ ছিলো জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন। একাত্তরের সেই উত্তাল সময় জতির জনক বঙ্গবন্ধু তার নিজের জন্মদিনে এদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি কামনা করেছিলেন। এদিন শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়া জনতাকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু বলেন,বাংলাদেশের মানুষের জন্মদিনই কি আর মৃত্যুদিনই-কি? উপস্থিত সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু বলেন, তিনি জনগণের একজন। জনগণের জন্যই তার মৃত্যু এবং জীবন।
পরের দিন ১৮ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক, পূর্বদেশ ও আজাদ পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। মাহমুদ হাসানের ‘দিনপঞ্জি একাত্তর’ এবং ড. মোহাম্মদ হান্নানের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গ্রন্থেও একাত্তরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন সংক্রান্ত এ বিবরণ পাওয়া যায়।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, পরিষ্কারভাবে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, তিনি জন্মদিন পালন করেন না। জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালান না এবং কেকও কাটেন না। তবে একাত্তরের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্ম দিন উপলক্ষে বায়তুল মোকারম মসজিদে বাদ আছর বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘায়ু কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা শেখ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বিন সায়িদ জালালাবাদী।
মাহমুদ হাসানের ‘দিনপঞ্জি একাত্তরে’ বলা হয়, এদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সমাজের সর্বস্তরের মানুষ মিছিল করে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডস্থ বাসভবনে গিয়ে তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। এদিন বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ছাড়াও ছিল তার ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের ষোড়শ দিবস। সকাল ১০টায় তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা বৈঠক করেন। কড়া সামরিক প্রহরার মধ্যে রমনার প্রেসিডেন্ট ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে তৃতীয় কেউ উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বেরিয়ে এলে প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষামান দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরেন। তিনি এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে নিজ বাসভবনে ফিরে যান।
বাসভবনে পৌঁছানোর পর সাংবাদিকদের আনুরোধে বঙ্গবন্ধু তাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনায় মিলিত হন। এসময় জনৈক বিদেশি সাংবাদিক বাংলাদেশের নেতাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে জানতে চান ৫২তম জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় কামনা কি ?
জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, জনগণের সার্বিক মুক্তি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি জন্ম দিন পালন করেন না। আমার জন্ম দিনে মোমবাতি জ্বালাই না, কেকও কাটিনা।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন