দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ইতিহাস গড়লো ইংল্যান্ড
১৯ মার্চ ২০১৬, ০০:১৮
১৯ মার্চ ২০১৬ঃ গত বছরের কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ (তখন পর্যন্ত) ২৩১ রান করে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ২৩৬ রান করে জয় তুলে নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ! টি-টোয়েন্টিতে ওটাই সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। তাহলে ইংল্যান্ড কেন পারবে না! মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে প্রোটিয়ারা ২২৯ রান করে ফেলার পর সেটাই সম্ভবত ভেবেছে ইংলিশরা। জো রুটের ৪৪ বলে ৬টি চার ও ৪টি চারে গড়া বীরোচিত ৮৩ রানে সেটাই করে দেখালো তারা। ইংল্যান্ড ২ বল হাতে রেখে ২ উইকেটের ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার নতুন রেকর্ড হলো। যেটি টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড। সব রেকর্ডই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে!
তিন ফিফটিতে ২৩১ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দারুণ শুরুর পর ম্যাচের সেরা রুটের ইনিংসে প্রোটিয়াদের ডুবিয়েছে ইংলিশরা। ১৯.৪ ওভারে ইতিহাস গড়েছে ইংল্যান্ড। ৮ উইকেটে করেছে ২৩০ রান। প্রথম ম্যাচে হারার পর জয়ে ফিরেছে ইংল্যান্ড। আর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই অবিশ্বাস্যভাবে হারলো দক্ষিণ আফ্রিকা।
দক্ষিণ আফ্রিকা রানের পাহাড়ে ওঠার পর ইংল্যান্ডের সুযোগ হয়তো বেশির ভাগ মানুষ দেখেননি। কিন্তু দুই ইংলিশ ওপেনার জেসন রয় ও অ্যালেক্স হেলস প্রথম বল থেকেই আক্রমণ করেছেন। তারাই গড়েছেন জয়ের ভিত। ২.৩ ওভারে ৪৮ রান এনে দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন ওপেনাররা। ৭ বলে ১৭ রান করে ফেরেন হেলস। মেরে গেছেন রয়। পঞ্চম ওভারে তাকে থামিয়েছেন কাইল অ্যাবট। ১৬ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৩ রান করে ফিরেছেন রয়। বেন স্টোকসও ৯ বলে ১৫ রান করে গেছেন। পরের ব্যাটসম্যানরা এসে ম্যাচটা ধরছিলেন। এগিয়ে নিচ্ছিলেন সাহসের সাথে।
অধিনায়ক এউইন মরগ্যান (১২) ফেরার পরই মাঝের আসল খেলাটা খেলেছে ইংল্যান্ড। জশ বাটলার ও জো রুট পঞ্চম উইকেটে ওভার প্রতি ১২.৫০ রান তুলেছেন। হয়েছে ৭৫ রানের জুটি। ২৯ বলে নিজের তৃতীয় ফিফটি করেছেন রুট। এরপর বাটলার ১৪ বলে ২১ রান করে আউট হয়ে গেলেন। তখন ২৫ বলে ৪৪ রান দরকার ইংল্যান্ডের। চাপের মুখে নিজেদের ধরে রাখতে পারছিলেন না প্রোটিয়া বোলাররা। রুট বাউন্ডারি মেরে গেছেন।
শেষ ২ ওভারে ১১ রান দরকার! এ আর এমন কি! ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রুট ফিরলেন রাবাদার শিকার হয়ে। কিন্তু এই ওভারে ১০ এলো। টাই। শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে ২ উইকেট হারালো ইংল্যান্ড। কিছুটা নাটকীয়তা। চতুর্থ বলে মঈন আলির (অপরাজিত ১২) জয়সূচক রানে লেখা হলো ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড।
এর আগের অবস্থাটা দেখুন। একেই বুঝি বলে ফুটন্ত কড়াই থেকে জলন্ত উনুনে পড়া! ক্রিস গেইলের তাণ্ডবে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচটা হারলো ইংল্যান্ড ১৮২ রান করেও। আর দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার তো ইংলিশ বোলারদের নাভিশ্বাস তুলে দিলেন! কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলার নির্মম ব্যাটিংয়ে প্রথম ৭ ওভারেই ৯৬ রান দিতে হয়েছে ইংল্যান্ডকে! ডি কক ২৪ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় করেছেন ৫২। আর আমলা ৩১ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় করেছেন ৫৮। শেষদিকে তাণ্ডব চালিয়েছেন জেপি ডুমিনি ও ডেভিড মিলার। তারা ২৭ বলে ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন। ২৮ বলে ৫৪ রানে অপরাজিত থেকেছেন ডুমিনি। ৩টি করে চার ও ছক্কা মেরেছেন তিনি। ১২ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২৮ রানে অপরাজিত ছিলেন মিলার। এই চার ঝড়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (তখন পর্যন্ত) দলগত সংগ্রহ গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। তখন এটি টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের ষষ্ঠ সর্বোচ্চ দলগত সংগ্রহ। প্রোটিয়াদের ইতিহাসের তৃতীয় দলগত সর্বোচ্চ।
অথচ ম্যাচের প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান এলো। এরপর দেখতে না দেখতে ৩০ পেরিয়ে গেলেন কুইন্টন ডি কক। হাশিম আমলা তখনো ১ রানে দাঁড়িয়ে। আমলার তান্ডব চলে তারপর। ডি কক দেখলেন, দ্রুতই তার কাছে এসে দঁড়িয়েছেন আমলা। ইংলিশ বোলাররা তখন অসহায়।
যারা ম্যাচটা দেখেননি তারা আসলে টি-টোয়েন্টির ঐতিহাসিক ব্যাটিংই মিস করেছেন। ৭.১ ওভারের সময় ডি কক ২৪ বলে ৭ বাউন্ডারি ৩ ছক্কায় ৫২ রান করে ফিরেছেন। এটা তার প্রথম ফিফটি। ডি কক ও আমলা যে গ্যাপে মেরেছেন, তাতেই চার হয়েছে। ছক্কা মারতে চাইলে ছক্কা। খুনে ব্যাটিং। রান কিভাবে ছুটেছে দেখুন!
টপলেকে দ্বিতীয় ওভারে ১টি ছক্কা ও দুটি চার মারলেন ডি কক। ওভারে ১৫ রান। উইলিকে পরের ওভারের শেষ চার বলে ৬+৪+৪+৬ মারলেন। এই ওভারে ২০। ডি কক যখন ৩৬ রানে তখন মঈন আলিকে দুটি চার মেরে ৯ এ গেলেন আমলা। এই রানেই জীবন পেলেন। ষষ্ঠ ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে ২১ বলে ফিফটি পূরণ করলেন ডি কক। পরের ওভারের প্রথম বলে ডি কক আউট। ৭.১ ওভারে ৯৬ রানে (১৩.৩৯ গড়) পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম উইকেট।
এবি ডি ভিলিয়ার্স (১৬) এসে রশিদ আলিকে পরপর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে বিদায় নিলেন। একটু স্বস্তি পেলো ইংল্যান্ড। প্রোটিয়াদের গতি একটু কমে। আমলা টি-টোয়েন্টির চতুর্থ ফিফটি করলেন ২৫ বলে, দশম ওভারের সময় ছক্কা মেরেই। ১২তম ওভারে মঈনের শিকার হয়ে ফিরেছেন আমলা।
এই ম্যাচে দলগত রেকর্ড হওয়ারই ছিল। তাতে বড় ভূমিকা ডুমিনির। অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসির (১৭) ৩৬ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি গড়েছেন। তবে শেষদিকে শুরুর মতো তাণ্ডব চালান ডুমিনি ও মিলার। পঞ্চম উইকেটে ৪.৩ ওভারে ১৩.৩৩ গড়ে ৬০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েছেন। ডুমিনি নিজের নবম ফিফটি করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংসে ১৩টি ছক্কা ও ২০টি চার মেরেছে। কিন্তু ৯ ছক্কা ২০ বাউন্ডারির ইনিংসে ইংল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকাকে আবার বানালো ‘চোকার’!
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন