প্রচ্ছদ

আজ বিএনপির কাউন্সিল

১৯ মার্চ ২০১৬, ০৮:২৩

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

015852BNp-1বিএনপির বহু প্রত্যাশার কাউন্সিল আজ ১৯ মার্চ। নানা প্রতিকূলতা, দমন-পীড়নে জর্জরিত দলটির জন্য এ যেন এক মহামিলনমেলা। পঞ্চম কাউন্সিলের পর কেটে গেছে ছয়টি বছর। একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েও জাতীয় কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। এবারও নানা অনিশ্চয়তা ভর করেছিল, তবে সবকিছু পেছনে ফেলে ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রত্যয়ে’ ষষ্ঠ কাউন্সিলের পতাকা আজ উড়ছেই। এ উপলক্ষে রাজধানীতে নেমেছে দলীয় নেতাকর্মীদের ঢল। প্রস্তুত কাউন্সিল ভেন্যু ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এলকাজুড়ে সাজসাজ রব। আজ সকাল ১০টায় কাউন্সিল উদ্বোধন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

 

কোরআন তেলাওয়াত, জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হবে উদ্বোধনী পর্ব। কাউন্সিলর, ডেলিগেট, আমন্ত্রিত অতিথি ও উত্সুক নেতাকর্মী মিলিয়ে উপস্থিতির সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বিএনপি নেতাদের ধারণা। কাউন্সিলর ও আমন্ত্রিত অতিথিরা বসবেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের ভেতরে। ডেলিগেটরা থাকবেন ইনস্টিটিউশনের পাশ ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার বক্তব্য ছাড়াও লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেবেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মধ্যাহ্ন ভোজ শেষে বিকেল ৩টায় হবে রুদ্ধদ্বার দ্বিতীয় অধিবেশন। এতে আলোচ্যসূচিতে রয়েছে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন, দলের চেয়ারম্যান ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির রিপোর্ট পেশ, মহাসচিবের সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা, দলের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র সংশোধন।

 

কলেবর বাড়ছে কেন্দ্রীয় কমিটির : কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের কাঠামো ও নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও তরুণদের সাহসী কর্মতৎপরতা কাজে লাগাতে এবার নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ে গঠন করা হচ্ছে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে আসবে অনেক নতুন মুখ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

 

দলের দায়িত্বশীল পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, জাতীয় নির্বাহী কমিটি ৪৩৯ সদস্যের পরিবর্তে ৩৫১ সদস্যের হবে। তবে একই মর্যাদার ১৭ থেকে ২০টি বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিতে রাখা হবে আরো দুই শতাধিক নেতা। স্থায়ী কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৯ থাকছে। একটি অতিরিক্ত মহাসচিব পদ সৃষ্টির প্রস্তাব থাকলেও এখনো তা চূড়ান্ত হয়নি। তবে অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদে সদস্যসংখ্যা বাড়ছে। ভাইস চেয়ারম্যান পদ ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৫০ জনেরও বেশি হবে। উপদেষ্টা পরিষদকে রাজনৈতিক ও বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ভাগে বিভক্ত করা হচ্ছে। যুগ্ম মহাসচিব সাত থেকে বাড়িয়ে ৯, সাংগঠনিক সম্পাদকের সংখ্যা সাত থেকে বাড়িয়ে ১১ করা হতে পারে। সহসাংগঠনিক সম্পাদক প্রতিটি বিভাগে একজনের পরিবর্তে দুজন করে মোট ২২ জন করা হতে পারে। এ ছাড়া ১৭ থেকে ২০টি উপকমিটি করা হবে। এসব উপকমিটির আহ্বায়ক জাতীয় নির্বাহী কমিটির সম্পাদক মর্যাদার হবেন। উপকমিটির সদস্যরা নির্বাহী কমিটির সদস্য পদমর্যাদার হবেন। উপকমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যরা দলের জাতীয় কাউন্সিলে নির্বাচিত হবেন। তাঁদের কার্যপদ্ধতি, কর্মপরিধিও জাতীয় কাউন্সিলে নির্ধারণ করা হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আদলে দলের মেধাসম্পন্ন নেতাকর্মী-সমর্থক ও শুভানুধ্যায়ীদের সমন্বয়ে এই উপকমিটিগুলো গঠন করা হবে। এ ছাড়া দলের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদকের পরিবর্তে প্রশিক্ষণের জন্য একটি ইনস্টিটিউট খোলাসহ চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মর্যাদায় একজন প্রিন্সিপাল নিয়োগ, প্রশিক্ষণবিষয়ক একাধিক সহসম্পাদক রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদ স্থানভিত্তিক করা হবে। এ ছাড়া সদস্যদের চাঁদার হার পাঁচ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা করা এবং প্রতিটি ইউনিটে বছরে ১০ শতাংশ নতুন সদস্য সংগ্রহ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষণাপত্রে কিছু পরিবর্তন আসছে। সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান এবং জঙ্গিবাদ দমনে দলের সুস্পষ্ট বক্তব্য থাকছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, আজকের কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে রুদ্বদ্ধার বৈঠকে নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা কত হবে তা নির্ধারণ করবেন কাউন্সিলরা। তাই এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠনের বিষয় গঠনতন্ত্রে আছে।

 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে প্রস্তাব ছিল সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ বিলুপ্ত করার। কিন্তু তা আমলে নেয়নি কমিটি। অতিরিক্ত মহাসচিব পদ সৃষ্টির প্রস্তাব থাকলেও তা নাকচ করা হয়। এর বাইরে ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক একটি সম্পাদক বা একটি উপকমিটি সৃষ্টি করা হবে। গবেষণার জন্যও গঠন করা হবে আলাদা উপকমিটি।

 

ড. আর এ গনি, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুর কারণে স্থায়ী কমিটিতে তিনটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এর বাইরে স্থায়ী কমিটির সদস্য এম শামসুল ইসলাম ও বেগম সারোয়ারী রহমান দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছেন। তালিকা থেকে বাদ যেতে পারেন আরো একাধিক সদস্য। ফলে এসব জায়গায় যুক্ত হতে যাচ্ছে নতুন মুখ। ষষ্ঠ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব পাচ্ছে বিএনপি। ২০১১ সালে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘স্বচ্ছ ইমেজধারী’ হিসেবেই মূলত এই গুরুদায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল মির্জা ফখরুলের কাঁধে। তিনিই পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে আলোচনায় আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামও।

 

পরিবর্তনের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, বিশেষ করে পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ে একটি ‘আশা জাগানো’ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৈরির ওপর জোর দিচ্ছে হাইকমান্ড।

 

মূল প্রতিপাদ্য ‘মুক্ত করবোই গণতন্ত্র’ : বিএনপির এবারের মূল প্রতিপাদ্য ‘মুক্ত করবোই গণতন্ত্র’। স্লোগান হলো ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবেই শেষ, গণতন্ত্রের বাংলাদেশ।’ কাউন্সিল উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তৈরি করা হয়েছে লোগো, ওয়েবসাইট ও থিম সং। বিএনপির ১১টি সহযোগী সংগঠনও ভিন্ন ভিন্ন স্লোগানে পোস্টার তৈরি করেছে।

 

কাউন্সিল উপলক্ষে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকালও নেতাকর্মীদের প্রচণ্ড ভিড় দেখা গেছে। বরাদ্দের চেয়ে বেশি ডেলিগেট কার্ড সংগ্রহের জন্য রাত পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা এবং বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা হন্যে হয়ে দৌড়ঝাঁপ করেছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের দৃশ্যও পাল্টে গেছে। পোস্টার-ব্যানারে ছেয়ে গেছে কার্যালয়ের আশপাশ।

 

কারাবন্দি ও সিনিয়র নেতারা ছবি দিয়ে কাউন্সিলকে স্বাগত জানিয়ে বিশাল ব্যানার টানিয়েছেন। বিশাল ব্যানারে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছোট প্রতিকৃতিও স্থান পেয়েছে।

 

রিজভীর দাবি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন বেগবান হবে : কাউন্সিল ঘিরে সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী। গতকাল দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই কাউন্সিল ঘিরে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। রিজভী বলেন, ‘শঙ্কিত ছিলাম শুধু ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে স্থান সংকুলান হবে কি না। কাউন্সিলের জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অনুমতি দেওয়ায় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এই কাউন্সিল সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়ে আগামী দিনের গণতান্ত্রিক আন্দোলন আরো বেগবান হবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশা করি।’

 

গয়েশ্বর ও ফখরুলের মঞ্চ পরিদর্শন : বিকেলে কাউন্সিলের মঞ্চ ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম দেখতে যান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।

 

বিএনপির প্রথম কাউন্সিল হয় ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার রমনা বটমূলের খোলা চত্বরে। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী হন প্রতিষ্ঠাকালীন মহাসচিব। দ্বিতীয় কাউন্সিল হয় ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি। সেই কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব হন যথাক্রমে বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ও ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ১৯৮৯ সালের ৮ ও ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় দলটির তৃতীয় কাউন্সিল। সেই কাউন্সিলে খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন এবং সালাম তালুকদার মহাসচিব হন। ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বরে চতুর্থ কাউন্সিলে খালেদা জিয়া চেয়ারপারসন এবং আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া মহাসচিব হন। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম কাউন্সিল হয়।

 

 

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার