নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তর করা হচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী
১৯ মার্চ ২০১৬, ১৬:৩৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, দেশে যুদ্ধজাহাজ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, “চলতি বছরে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তর করা হবে।”
শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় চীন থেকে আমদানি করা তিনটি যুদ্ধজাহাজ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি।
নৌবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে নৌবহরে যুক্ত হলো নতুন তিনটি যুদ্ধজাহাজ। শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ তিনটি জাহাজের অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন।
শনিবার সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম নৌঘাঁটি বানৌজা ঈমাখানে এসে পৌঁছান। এসময় তাকে স্বাগত জানান, নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ ও কমাণ্ডার চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চল রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আখতার হাবীব।
এ তিন যুদ্ধজাহাজের নাম, বানৌজা সমুদ্র অভিযান, বানৌজা স্বাধীনতা ও বানৌজা প্রত্যয়। জাহাজ তিনটির কমিশনিং শেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের সম্পদ ও বিশ্বশান্তি রক্ষায় এ তিন যুদ্ধজাহাজ বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এগুলো নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়ায় দেশের বিশাল জলসীমার সুরক্ষার পাশাপাশি সমুদ্রে অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান রোধ, গভীর সমুদ্রে উদ্ধার তৎপরতা বৃদ্ধি, মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ব্লকগুলোয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের ব্লু ইকোনমি উন্নয়নে সহায়ক হবে।”
তিনি আরো বলেন, “সামুদ্রিক সম্পদ রক্ষা ও দূর্যোগ মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আধুনিক নৌবাহিনীর স্বপ্ন দেখেন। সদ্য সংযোজিত তিনটি যুদ্ধজাহাজ দেশের নৌবাহিনী আরো একধাপ এগিয়ে নিল। এসব জাহাজের প্রয়োজন শুধু নৌবাহিনীর জন্য নয়, সমগ্র জাতির জন্য।”
উল্লেখ্য, সদ্য সংযোজন করা বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ যুক্তরাষ্ট্র থেকে এবং বানৌজা ‘স্বাধীনতা ও ‘প্রত্যয়’ গণচীন থেকে আনা হয়েছে। বানৌজা ‘সমুদ্র অভিযান’ ঘণ্টায় প্রায় ২৯ নটিক্যাল মাইল চলতে সক্ষম। বানৌজা ‘স্বাধীনতা ও ‘প্রত্যয়’ আধুনিক ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ দুটি বিমান বিধ্বসী কামান, জাহাস বিধ্বংসী মিসাইল ও সমুদ্র তলদেশের টার্গেটে আঘাত হানতে সক্ষম।
নৌবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বানৌজা সমুদ্র অভিযান নৌবহরের নবম ফ্রিগেট স্কোয়াড্রনের দ্বিতীয় যুদ্ধজাহাজ। এ স্কোয়াড্রনের প্রথম যুদ্ধজাহাজ বানৌজা ‘সমুদ্র জয়’ ২০১৩ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশনিং করা হয়।
তিন হাজার ৩১৩ টন ওজনের সমুদ্র অভিযান যুদ্ধজাহাজটির দৈর্ঘ্য ১১৫ মিটার। জাহাজটিতে দুটি ডিজেল ইঞ্জিন দুটি গ্যাস টারবাইন রয়েছে।
চীন থেকে আনা করভেট ক্লাসের মিসাইল ফ্রিগেট ‘স্বাধীনতা’ ও ‘প্রত্যয়’ জাহাজ দুটি দৈর্ঘ্যে ৯০ মিটার। যা সর্ব্বোচ্চ ২৫ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, “চলতি বছরে নৌবাহিনীতে সংযোজিত হতে যাচ্ছে বহু আকাঙ্ক্ষিত দুটি সাবমেরিন। এর মাধ্যমে নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে রূপান্তরিত হতে চলেছে।”
তিনি আরো বলেন, “ক্রমাগত সম্পদ আহরণের ফলে বিশ্বের স্থলভাগের সম্পদ আজ সীমিত। তাই সারা বিশ্বের নজর এখন সমুদ্র সম্পদের দিকে। বর্তমান সরকার ব্লু ইকোনমির মাধ্যমে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শক্তিশালী ও গতিশীল অর্থনীতি নিয়ে জেগে ওঠার সহায়ক পরিবেশ ও ক্ষমতা আমাদের রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমরা স্বপ্ন দেখতে চাই, ২০২১ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের।”
বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযোজিত তিনটি জাহাজ পরিদর্শন করেন।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন