ইউপি নির্বাচন থেকে সরছে না বিএনপি
০৫ এপ্রিল ২০১৬, ০০:৩৪
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। রবিবার দীর্ঘ দুই ঘণ্টা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকার ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সুষ্ঠু নির্বাচনে ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে বিষয়টি গণমাধ্যমে তুলে ধরারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডেকে দলের এ অবস্থান জানিয়ে দেবেন খালেদা জিয়া। বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ নেতাই নির্বাচন থেকে সরে না যাওয়ার বিষয়ে যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করায় বিএনপি চেয়ারপারসনও নির্বাচনি মাঠে লড়াই করার পক্ষে অবস্থান নেন। এরই আলোকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় জনসংযোগ করতে সিনিয়র নেতাদের দ্রুত নিজ-নিজ এলাকায় যাওয়ার ফেরার নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া। রবিবার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে গুলশান-২-এ বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক শেষে অংশ নেওয়া ৬ জন সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি মনে করে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ বিগত দিনের সবগুলো নির্বাচনে আবদুর রকিব কমিশন ও সরকারের আচরণ একমুখী ছিল। ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল, প্রার্থী হয়রানি, হত্যা, হুমকিসহ নানা কারণে সরকারের নির্বাচনি চেহারা প্রকাশ হয়েছে। এটি নির্বাচনে না গেলে হতো না।
গুলশানের বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেওয়া ২২জন নেতার মধ্যে বেশিরভাগের মত ছিল, এসব কারণে নির্বাচন থেকে সরে আসা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, এর আগে পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হতে না পারলেও দলীয় ও সাংগঠনিক কাঠামো মজবুত হয়েছে। ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারির পর থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিএনপি পিছিয়ে পড়লেও স্থানীয় নির্বাচনের কারণে স্থানীয় পর্যায়ে ধানের শীষের মিছিল হয়েছে। নেতাকর্মীরা একে-অন্যের সঙ্গে কথা বলছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেত সম্পৃক্তা-ব্যস্ততা বেড়েছে। নির্বাচন থেকে সরে আসলে সাংগঠনিক দিক দিয়ে এতটা লাভ হতো না বিএনপির।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, বৈঠকে বেশিরভাগ নেতা নির্বাচনে থাকার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। নেত্রীও ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তবে, এ নিয়ে চূড়ূান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন নেত্রী জোটের বৈঠকের পর।
আরেক উপদেষ্টা সামসুজ্জামান দুদু জানান, বৈঠকে দেশের সাম্প্রতিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সোমবার ২০ দলীয় জোটের বৈঠকের পর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির একজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, বৈঠকের একমাত্র এজেন্ডা ছিল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। রাত ৯টা ২০ মিনিটে বৈঠকের প্রারম্ভিক বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানান। এরপরই বক্তব্য দেন দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন।
সূত্র জানায়, ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বৈঠকে দীর্ঘ সময় বক্তব্য দেন। ইউপি নির্বাচনে থাকার পক্ষে তিনি নানা ধরনের যুক্তি তুলে ধরেন। তবে, দুয়েকজন নেতা নির্বাচনে না থাকার পক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি নির্বাচনের পক্ষে থাকার কথা বলেন। তার ভাষ্য ছিল, নির্বাচন থেকে সরে এলে স্থানীয় পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকরা ঘরে বসে থাকবে না। হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী না হয় বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে স্লোগান ধরবে। এছাড়া, যত নির্বাচন হচ্ছে, সরকারের একমুখী চেহারা আরও প্রকট আকারে প্রকাশ পাচ্ছে বলেও তিনি বৈঠকে বলেন।
জানতে চাইলে ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বলেন, বৈঠকের বিষয়ে কথা বলার অনুমতি নেই। জোটের বৈঠকের পর আপনারা জানতে পারবেন সিদ্ধান্ত।
বৈঠক সূত্র জানায়, নির্বাচন থেকে সরে না আসার যুক্তির পাশাপাশি নেতারা সংগঠন গোছানোর প্রতি জোর দিয়েছেন। এছাড়া, খালেদা জিয়ার মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পনের বিষয়ে টুকটাক কথা হয়েছে।
যুগ্ম-মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান সংগঠন গোছানোর প্রতি জোর দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। আদালতে খালেদা জিয়ার হাজিরার দিনে নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছায় কারাবরণ করার প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভাইস-চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।
বৈঠক সূত্র দাবি করে, বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনে থাকার বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি সিনিয়র নেতাদের নিজ-নিজ এলাকায় যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনারা ঢাকায় বসে কমিটির জন্য খোঁজ নেন। এটা করা লাগবে না। কর্মীরা আপনাদের পায় না। আপনারা নিজ-নিজ এলাকায় যান, আমি খুঁজে বের করে আপনাদের পদ দেব।
এ সময় কয়েকজন নেতা খালেদা জিয়াকে বিষয়টি মনিটরিং করার অনুরোধ করেন। তারা বলেন, নেত্রী, বিষয়টি আপনি মনিটরিং করেন। তাহলে দেখবেন কেউ ঘরে বসে থাকবে না।
সূত্র এ-ও জানায়, রবিবারের বৈঠকে চলমান ইউপি নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফার খতিয়ান দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। এ পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু হলো, কতজন আহত হলেন, ঘর-বাড়ি ধ্বংসসহ নানাবিধ সমস্যার হিসাব তুলে ধরা হয় বৈঠকে। একই সঙ্গে বলা হয়, পরবর্তী সময়ে এসব খতিয়ান গণমাধ্যম ও বিদেশি দেশগুলোর প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেবে বিএনপি। এছাড়া, বৈঠকে আগামী দিনের রাজনৈতিক পরিকল্পনা আগে থেকেই গ্রহণ করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা আহমেদ আযম খান বলেন, বলার মতো কিছু নেই। তবে, নির্বাচনের বিষয়ে অনেকেই ইতিবাচক চিলেন। এখন ব্যাপারটা ম্যাডামের হাতে। কাছাকাছি মন্তব্য করেন ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান।
রবিবার রাতে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। ভাইস চেয়ারম্যানদের মধ্যে ছিলেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী ও আবদুল্লাহ আল নোমান। উপদেষ্টাদের মধ্যে ওসমান ফরুক, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল আওয়াল মিন্টু, আহমেদ আযম খান, শামসুজ্জামান দুদু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও এম আবদুল হালিম। যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে ছিলেন রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, শাহজাহান মিয়া ও আমান উল্লাহ আমান। সাংগঠনিক সম্পাদকদের মধ্যে ছিলেন ফজলুল হক মিলন, মশিউর রহমান, গোলাম আকবর খন্দকার ও ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন