সশস্ত্র বাহিনীর নতুন বেতন স্কেল চূড়ান্ত প্রকাশ
০৫ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:০৮
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্ত করে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের আলোকে চূড়ান্ত করা হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর বেতন কাঠামো। এতে তিন বাহিনী প্রধান ছাড়া সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ বেতন ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত) ও সর্বনিু ৮ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়া হলেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ‘বাংলা নববর্ষ ভাতা’। মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে এই ভাতা পাবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। জাতীয় অষ্টম বেতন কাঠামোর মতো গত পহেলা জুলাই থেকে মূল বেতন কার্যকর হবে। তবে সব ধরনের ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা আগামী পহেলা জুলাই থেকে পাবেন। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সশস্ত্র বাহিনীর বেতন কাঠামোর ভেটিং সম্পন্ন হয়েছে। প্রজ্ঞাপন জারির জন্য তা পাঠানো হয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সাধারণত জাতীয় বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার আগে ভেটিং করা হয় আইন মন্ত্রণালয় থেকে। প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু সশস্ত্র বাহিনীর বেতন কাঠামো চূড়ান্ত হওয়ার আগে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। একই বৈঠকে সশস্ত্র বাহিনীর জন্য পৃথক বেতন কাঠামোর অনুমোদন দেয়া হয়। এটি এখন প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষায়।
বিভিন্ন পদের বেতন স্কেল : তিন বাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল/অ্যাডমিরাল/এয়ার চিফ মার্শাল পদপর্যাদা হলে বেতন ৮৬ হাজার টাকা (নির্ধারিত) এবং লে. জেনারেল/ভাইস অ্যাডমিরাল/এয়ার মার্শাল পদমর্যাদার ক্ষেত্রে বেতন ৮২ হাজার টাকা (নির্ধারিত)। এছাড়া মেজর জেনারেল/রিয়ার অ্যাডমিরাল/এয়ার ভাইস মার্শাল পদের বেতন ৭৮ হাজার টাকা (নির্ধারিত)। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল/কমডোর/এয়ার কমডোর পদের বেতন ৬৩ হাজার ৫৭০ টাকা। কর্নেল/ক্যাপ্টেন (নৌ)/গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদের বেতন ৬১ হাজার টাকা। লে. কর্নেল/কমান্ডার/উইং কমান্ডারের বেতন ৫০ হাজার টাকা। মেজর/লে. কমান্ডার/স্কোয়াড্রন পদের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার টাকা। এছাড়া অনারারি ক্যাপ্টেন ও অনারারি লে. (নৌ) পদের বেতন ৪২ হাজার ৮৯০ (নির্ধারিত)। অনারারি (সেনা) ও অনারারি সাব লে. ৩৮ হাজার ৪৮০ টাকা। অন্যান্য পদের মধ্যে ক্যাপ্টেন/লেফটেন্যান্ট (নৌ) ও ফ্লাইট লে. পদের বেতন হচ্ছে ২৯ হাজার টাকা। পাশাপাশি লেফটেন্যান্ট (সেনা)/সাব লে. ও ফ্লাইং অফিসার পদের বেতন ২৫ হাজার টাকা। সেকেন্ড লে., অ্যাক্টিং সাব লে. ও পাইলট অফিসারের বেতন ২৩ হাজার ১০০ টাকা। মাস্টার চিফ পেটি অফিসার ও মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসারের বেতন ২২ হাজার ৫০০ টাকা। চিফ আর্টিফিসার অফিসারের বেতন ধরা হয়েছে ২২ হাজার ৪০০ টাকা। সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার ও সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসারের বেতন ২২ হাজার ২৫০ টাকা। চিফ পেটি অফিসার ও ওয়ারেন্ট অফিসারের বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ২২ হাজার টাকা। সার্জেন্ট ও পেটি অফিসারের বেতন ১৬ হাজার টাকা, সুবেদার মেজর পদের বেতন ১৫ হাজার ৭০০ টাকা, সুবেদারের বেতন ১৪ হাজার ১২০ টাকা, নায়েক সুবেদারের বেতন ১২ হাজার ৫০০ টাকা, কর্পোরাল, এলএস ও হাবিলদারের বেতন চূড়ান্ত করা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এছাড়া নায়েক, এলএসি ও এবি পদের বেতন ১০ হাজার ২০০ টাকা। ল্যান্স নায়েক, ওডি এবং এসি-১ রিক্রুট পদের বেতন ৯ হাজার টাকা। সিপাহি, রিক্রুট (এমওজিটি) পদের বেতন ধরা হয় ৮ হাজার ৮০০ টাকা।
যৌথ বাহিনীর নির্দেশাবলীর বেতন নির্ধারণ : সশস্ত্র বাহিনীর নতুন বেতন কাঠামোতে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনীর কমিশন্ড অফিসার, এএফএনএস অফিসার, ক্যাডেট, মিডশিপম্যান্ট, ফ্লাইট ক্যাডেট, এএফএনএস ক্যাডেট, আইএসএসবি প্রতিযোগীবৃন্দ, অনারারি কমিশন্ড অফিসার, জেসিও, জুনিয়র কমিশন্ড পদবির নিুের ব্যক্তিবর্গ, রিক্রুট, এনসি (ই), ধর্মীয় শিক্ষক এবং এমওডিসির জন্য এই বেতন কাঠামো কার্যকর হবে। তবে এর মধ্যে আহরিত মহার্ঘ্য ভাতা প্রাপ্য বকেয়ার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে।
প্রথম নিয়োগে বেতন : ২০১৫ সালের পহেলা জুলাই থেকে প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো অফিসারের বেতন জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর আলোকে প্রণীত যৌথবাহিনী নির্দেশাবলী-০১/২০১৬ সংশ্লিষ্ট স্কেলের সর্বনিম্ন ধাপে নির্ধারিত হবে। সেখানে আরও বলা হয়, গত পহেলা জুলাই থেকে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫-এর আলোকে বেতন পাবেন। সব ভাতা আগামী পহেলা জুলাই থেকে পাবেন।
পদোন্নতির বেতন নির্ধারণ : বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং মেজর জেনারেল ও সমতুল্য পদবিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে অফিসাররা সংশ্লিষ্ট পদের জন্য নির্ধারিত বেতন পাবেন। এছাড়া সর্বনিু পদবি অফিসার থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পর্যন্ত পদে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অফিসারের বেতন পদোন্নতির তারিখে পদবি এবং কমিশন চাকরির দৈর্ঘ্যর ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। এরপর প্রচলিত বিধি অনুসারে বার্ষিক বর্ধিত বেতন নিয়ন্ত্রণ হবে। সেনাবাহিনীর সাধারণ তালিকাভুক্ত অফিসারদের বেতন প্রচলিত বিধি অনুসারে নির্ধারিত হবে।
টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্ত : ২০১৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর হতে টাইম স্কেল বা কোনো স্কেলে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছানোর এক বছর পর পরবর্তীতে উচ্চতর বা টাইম স্কেল বিধান বিলুপ্ত হবে। নতুন বেতন স্কেলে বাংলা নববর্ষের ভাতা চালু করা হয়েছে। মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে নববর্ষের ভাতা পাবেন সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা।
উচ্চতর গ্রেডপ্রাপ্ত : কোনো অফিসার পদোন্নতি ছাড়া একই পদে ১০ বছর পূর্তি হলে এবং চাকরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১তম বছরে পরবর্তী গ্রেডে বেতন পাবেন। কোনো অফিসার চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডে বেতন পাওয়ার পর পরবর্তী ৬ বছরে পদোন্নতি না পেলে ১৭ বছরের স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী গ্রেডের বেতন পাবেন। এক্ষেত্রেও চাকরি সন্তোষজনক হতে হবে। তবে এই সুবিধা লে. কর্নেল (চতুর্থ গ্রেড) পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। তবে লে. কর্নেল বা সমতুল্যের ওপরের কোনো অফিসার এই সুবিধা পাবেন না। এছাড়া কোনো অফিসার দুই বা তার বেশি সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেল পাওয়ার এক বছর পর পরবর্তী উচ্চতর স্কেলপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি এই সুবিধা পাবেন না।