অবৈধ অভিবাসীরা ফিরলে পুনর্বাসনে সাহায্য দেবে ইইউ
০৬ এপ্রিল ২০১৬, ১১:১১
ইউরোপ থেকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনতে এবং পরবর্তীতে তাঁদের পুনর্বাসনে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় অভিবাসন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাংলাদেশ-ইইউ প্রথম সংলাপে ইইউর পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় দেশগুলোতে অবস্থানরত ‘অনিয়মিত’ অভিবাসীদের ‘ফিরে আসা ও পুনর্বাসন প্যাকেজ’ চেয়েছে। ওই প্যাকেজে ইইউর সহায়তায় প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরুর বিষয়ে সহযোগিতা করার কথা বলছে বাংলাদেশ যাতে ওই অভিবাসীরা দেশে ফিরে সমাজে সম্মানজনকভাবে বাঁচতে পারেন।
এর আগে গত সোমবার ঢাকায় ইইউ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর জানা যায়, ইউরোপে প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছে। ইইউ চায়, অন্যদের মতো বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীরাও দেশে ফিরে আসুক। সেদিনই গ্রিস থেকে তুরস্কে ফেরত আসা অবৈধ অভিবাসীদের প্রথম দলটিতে তিনজন বাংলাদেশি ছিল বলে বিভিন্ন পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গতকাল ইইউ প্রতিনিধিদলের সংলাপের পর কোনো পক্ষই সাংবাদিকদের কাছে ইউরোপে অবস্থানরত ‘অনিয়মিত’ বাংলাদেশির সংখ্যা উল্লেখ করেনি। সংলাপে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। এরপর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা, তাদের প্রশিক্ষণ এবং পুনর্বাসনে কিভাবে সহায়তা দেওয়া যায়, সেসব বিষয় ইইউ খতিয়ে দেখছে। এ ক্ষেত্রে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
তিনি বলেন, যেসব বাংলাদেশি অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে আছে, তাদের ফিরিয়ে আনা এ দেশের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। এটি কতটা নিরাপদে ও ভালোভাবে করা যায় এবং তাদের ফিরিয়ে আনার পর জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে দেওয়ার উপায় দেখতেও ইইউ রাজি হয়েছে।
এর পাশাপাশি বাংলাদেশিরা যাতে আইনি পথে নিয়মিতভাবে ইউরোপে যেতে পারে, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে যেসব বাধা আছে সেগুলো দূর করার বিষয়টি ইইউ দেখার আশ্বাস দিয়েছে বলেও পররাষ্ট্রসচিব জানান।
সংলাপে ১০ সদস্যের ইইউ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন ইউরোপীয় এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের বৈশ্বিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ক উপমহাসচিব ক্রিস্টিয়ান লেফলার। সংলাপ শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটি পুরোপুরি একটি বিকাশমান পরিস্থিতি। আমরা কোনো সংখ্যা (অনিয়মিত বাংলাদেশির সংখ্যা) দিতে পারি না। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষের একসঙ্গে কাজ করা এবং স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠুভাবে বিষয়টিকে এগিয়ে নেওয়া এখানে গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ৮০ হাজার অনিয়মিত বাংলাদেশির যে সংখ্যাটি বলা হচ্ছে তা যে গণমাধ্যম তাঁর কাছ থেকে পায়নি এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। তবে এটি ঠিক যে অন্য বিদেশিদের মতো ইউরোপে অনিয়মিত বাংলাদেশিও আছে।
এদিকে গতকালের সংলাপের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত ‘অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় ইইউ-বাংলাদেশ প্রথম সংলাপবিষয়ক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’তে বলা হয়েছে, সংলাপে বৈশ্বিক অভিবাসন পরিস্থিতি, উন্নয়ন ও অভিবাসন বিষয়ক বৈশ্বিক ফোরাম এবং পাচার, অনিয়মিত অভিবাসন ও অভিবাসন সম্পর্কিত ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন এজেন্ডাসহ অভিবাসন ও চলাচলবিষয়ক সব কিছুই গুরুত্ব পেয়েছে। এ ছাড়া সম্ভাব্য একটি সমন্বিত রাজনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে অভিবাসন ও চলাচল বিষয়ে ব্যাপক পরিসরে সহযোগিতার সম্ভাবনার বিষয়টিও সংলাপে আলোচিত হয়েছে। উভয় পক্ষ ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশিদের অনিয়মিত পরিস্থিতি এবং তাদের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবৈধ অভিবাসনের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তথ্যসমৃদ্ধ প্রচারণার পাশাপাশি ফেরত আসা ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের বিশেষ কর্মসূচিতে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে ইইউ। বাংলাদেশ পক্ষ অনিয়মিত পরিস্থিতিতে থাকা সব ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনতে সরকারের নীতির পাশাপাশি নিরাপদ, বৈধ ও নিয়মিত অভিবাসনের সুযোগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। অভিবাসন ও চলাচল ইস্যু মোকাবিলায় আরো বিশদ পরিসরে উদ্যোগ নিতে উভয় পক্ষ আগামীতেও সংলাপ অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছে।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন