প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সাতকরায় রাঁধা গরুর মাংস
২০ জানুয়ারি ২০১৬, ২২:২৭
‘সিলেটে গিয়েছি, কিন্তু গরুর মাংস আর সাতকরা খাইনি’- অবশেষে এমন আফসোস থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিলেটে আসবেন। সিলেট পৌঁছানোর পর তিনি হজরত শাহজালাল ও শাহপরান (রহ.) মাজার জিয়ারত করবেন। এর পর তাকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ফল সাতকরা দিয়ে রান্না গরুর মাংস খাওয়ানো হবে।
গেল বছরের ৮ অক্টোবর দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কাজিরবাজার সেতু উদ্বোধন ও সিলেটের বিমানবন্দর-ভোলাগঞ্জ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘গত ৩ অক্টোবর সিলেটে গিয়েছিলাম। তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দলীয় কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তাই আজ আর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য শুনব না।’
ওই সময় তিনি আরও বলেছিলেন, ‘সিলেটে গিয়েছি। কিন্তু গরুর মাংস আর সাতকরা খাওয়া হয়নি। এজন্য আমার আফসোস আছে। আমি আগামীতে সিলেট গেলে গরুর মাংস দিয়ে সাতকরা খেতে চাই।’
এ সময় সিলেট জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সাংসদ ইমরান আহমদ, মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী কয়েস, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফুর রহমান, সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিসিকের সাবেক মেয়র ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিলেট সিটি করপোরশেনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেছেন, গত ৮ অক্টোবর সাতকরা আর গরুর মাংস খাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এবার সিলেটে আসার পর উনাকে সাতকরা আর গরুর মাংস দিয়ে আপ্যায়ন করানো হবে।
বিগত সাত বছরের ক্ষমতায় থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিনবার সিলেট এসেছেন। ওই তিনবারই তিনি লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে সিলেটে যাত্রাবিরতি করেছেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর, ২০১৫ সালের ১৫ জুন ও একই বছর ৩ অক্টোবর লন্ডন থেকে দেশে ফেরার পথে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রবিরতি করেন। তিনবারই তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
এবার জেনে যাওয়া যাক, সাতকরা কী? জাম্বুরার চেয়ে একটু ছোট সাইজের টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফল সাতকরা। স্থানীয়রা একে ‘হাতকরা’ নামে ডাকে। সমগ্র সিলেট তো বটেই, বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বহির্বিশ্বেও রয়েছে এই ফলটির কদর।
ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের সাতকরা সিলেটের বাজারগুলোতে পাওয়া যায়। গরুর মাংসের পাশাপাশি ছোট মাছ ও কচু শাক দিয়েও সাতকরা খাওয়া যায়। বর্তমানে সিলেটের বাজারে কাচের বোতলে সাতকরার আচার পাওয়া যাচ্ছে। অন্য জেলা থেকে সিলেটে বেড়াতে আসা লোকজনের কাছে কাঁচা সাতকরার চেয়ে বোতলের আচারের কদরই বেশি।
বর্তমানে সিলেটের জৈন্তাপুর, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, ছাতক, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও টিলা এলাকায় সাতকরার গাছ দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি সাতকরা চাষ হয় সিলেটের পাহাড়ি এলাকায়। জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট এলাকার মাটি সবচেয়ে উর্বর এই ফল চাষের জন্য।
সাতকরার রেসিপি
সাতকরা দিয়ে কীভাবে গরুর মাংস রান্না করতে হয় সে-ব্যাপারে জানতে কথা হয় বেশ কয়েকজন রাঁধুনির সঙ্গে। তারা জানান-
উপকরণ
গরুর মাংস ১ কেজি, সাতকরা ফালি করা ৪/৫ টুকরো, লবণ আন্দাজ মতো, আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামচ, পেঁয়াজকুচি ২ কাপ, হলুদের গুঁড়া ১/২ চা-চামচ, মরিচের গুঁড়া (প্রয়োজন মতো), জিরার গুঁড়া ১/২ চা-চামচ, তেজপাতা ২টি, গরম মশলা (এলাচ, দারুচিনি) ৩/৪টি, সয়াবিন তেল ৩/৪ কাপ, গোলমরিচ ৭/৮টি, কাঁচামরিচ ৪/৫টি।
প্রণালী
প্রথমে মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। তার পর সাতকরা, কাঁচামরিচ ও গোলমরিচ বাদে সব উপকরণ দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এর পর মাখানো মাংস চুলায় বসিয়ে দিন কড়া আঁচে। মাংস থেকে পানি বের হলে ঢাকনা দিয়ে কম আঁচে রাখুন, যাতে সেদ্ধ হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে নেড়ে দিন। এবার একটি সাতকরা ফালি ফালি করে কেটে নিন। মাংস ৭০ ভাগ সিদ্ধ হয়ে এলে সাতকরা দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে কাঁচামরিচ ও গোলমরিচ দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে নামিয়ে ফেলুন। ভাত, পোলাও বা খিচুড়ি দিয়েও খেতে পারেন।
খেয়াল রাখবেন
সাতকরা কেনার সময় পাতলা দেখে কিনবেন। পাতলা সাতকরা তেতো হয় না। আর তেতো সাতকরা হলে ডেকচিতে পানি ফুটিয়ে সাতকরা দিয়ে ২/১ টা বলক উঠলে পানি ঝরিয়ে নেবেন। রান্নার আগে সাতকরা সেদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। সেদ্ধ করলে এর স্বাদ আর ঘ্রাণ থাকে না। আকারে গোল আর হালকা ওজনের সাতকরা সবচেয়ে সুস্বাদু।