ফিলিস্তিন দখলের ৬৮ বছর পূর্তিতে লাখ লাখ ফিলিস্তিনির বিক্ষোভ সমাবেশ
১৬ মে ২০১৬, ১৩:২৯
অবৈধ রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ৬৭তম বার্ষিকীতে আজ (রোববার) নাকাবা বা বিপর্যয় দিবস পালন করেছেন ফিলিস্তিনিরা। এ দিবস উপলক্ষে ফিলিস্তিন জুড়ে লাখ লাখ মানুষ মিছিল-সমাবেশ করেছে। এ সময় তারা দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দেন এবং তাদের সব অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানান। একইসঙ্গে তারা নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি জোরদারের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে ফিলিস্তিন ভূখণ্ড থেকে সাত লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে বিতাড়িত করে ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অবৈধ রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর এ দিনটিকে প্রতি বছর নাকাবা বা বিপর্যয় দিবস পালন করেন ফিলিস্তিনিরা।
অবৈধভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিরা কখনই নিরাপদে ছিল না এখনো নেই এবং সবসময় তাদেরকে ইসরাইলি ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ইসরাইল প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে যা কিনা মানবতাবোধ সম্পন্ন যে কোনো মানুষের হৃদয়কে ব্যথিত করে তোলে। বর্তমানে অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইসরাইল আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দমন পীড়ন ও সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে যা কিনা আন্তর্জাতিক সমাজকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
জাতিসংঘের নির্যাতন বিষয়ক কমিশন দখলদার ইসরাইলের এ অমানবিক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। এই কমিশন অবৈধভাবে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার বার্ষিকীর একই সময়ে ইসরাইলের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের ওপর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ১২ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ইসরাইলের অন্যায় আচরণ এবং বিশেষ আইনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফিলিস্তিনিদের আটক রাখার সমালোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বিশেষ আইনের আওতায় সম্প্রতি ৭০০ ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে ১৮ বছরের নীচে ১২টি শিশু রয়েছে।
জাতিসংঘের নির্যাতন বিষয়ক কমিশনের প্রধান ডেনমার্কের নাগরিক ইয়েন্স মোদুউইক বলেছেন, অস্থায়ী আটকাদেশের মেয়াদ কয়েক মাসও হতে পারে আবার কয়েক বছরও হতে পারে। এমনকি আটক ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কাউকে দেখা করতেও দেয়া হচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে শহীদ হয়েছে। ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যে নিজ অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করার জন্য ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অত্যাচার নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা আরো বলেছেন, ইসরাইলের এ নীতির ফলে এ পর্যন্ত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হওয়া ছাড়াও বহু ফিলিস্তিনি ইসরাইলি জেলখানাগুলোতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আট লাখ ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে। বর্তমানে প্রায় ৭০০০ ফিলিস্তিনি ইসরাইলের বিভিন্ন জেলখানায় আটক রয়েছে। এসব বন্দীদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালানো হচ্ছে এবং অত্যন্ত খারাপ পরিবেশে তাদেরকে রাখা হয়েছে। বন্দীদের ওপর নির্যাতনের কারণে এ পর্যন্ত শত শত ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছে এবং অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে গেছে অথবা দুরারোগ্য ব্যধিতে ভুগছে।
এ অবস্থায় ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্ত করার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সমাজের নীরবতার ফলে বন্দীদের অবস্থা আরো শোচনীয় হয়ে উঠতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন