প্রচ্ছদ

বিএনপি-জামায়াতের অপশাসনের ফলে ওয়ান-ইলেভেনের জন্ম হয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

০৮ জুন ২০১৬, ১৩:২১

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

FB_IMG_1465370206082-1প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত অপশাসনের ফলে ওয়ান-ইলেভেনের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের অব্যাহত অপশাসনের ফলে গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়। কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় আসার জন্য তাদের আজ্ঞাবহ রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে প্রধান উপদেষ্টা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে, তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলে। ওয়ান-ইলেভেনের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্ম হয়।’

তিনি আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্যে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ২০০১ থেকে ২০০৬ মেয়াদে বাংলাদেশকে পরিণত করেছিল হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন-নিপীড়ন, দুর্নীতি, পরিবারতন্ত্র ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে। বাংলাদেশ পরিচালিত হয়েছিল দুর্নীতির বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, সাংবাদিক নির্যাতন ও জঙ্গিবাদের দেশ হিসেবে।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন নির্বাচনমুখী না হয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তখনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আমার অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে ও অসুস্থ পুত্রবধূর পাশে থাকতে ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ আমেরিকা যাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকায় থাকা অবস্থায় আমার বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাঁদাবাজি ও খুনের মামলা দেয়। মামলা যখন দেয়া হয় তখন দেশে আমাকে আসতেই হবে বলে সিদ্ধান্ত নেই। ২০০৭ সালের ১৪ এপ্রিল দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সকল অপচেষ্টা ও প্রতিবন্ধকতা সাহসের সাথে মোকাবিলা করে ২০০৭ সালের ৭ মে দেশে ফিরে আসি।’

তিনি বলেন, তখন চারদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অন্যায় আর নির্মম নির্যাতনের ছোবল। সাধারণ মানুষ, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, সরকারি কর্মকর্তা সকলেই অমানুষিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমনই এক দুর্বিসহ সময়ে দেশের জনগণকে সাথে নিয়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। দ্রুত নির্বাচন দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে বলা হয়। নির্বাচনের কথা বলা মাত্র ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে সুধাসদন থেকে আমাকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, ‘প্রথম ৩ কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলা দেয়া হয়। একটা ছোট্ট ব্রিফকেসে ভরে ওই টাকা দিয়ে গেছে গণভবনে। পাঁচশত টাকার নোট তিন কোটি টাকার ওজন হয় ঊনসত্তর কেজি। তিনটা ত্রিশ ইঞ্চি সাইজের স্যামসোনাইট সুটকেস লাগে তিন কোটি টাকার পাঁচশত টাকার নোট ভরতে। কিন্তু এমন যাদু তারা জানে যে একটা ব্রিফকেসেই ভরে এনে দিল তিন কোটি টাকা! যা অবাস্তব, কল্পনাপ্রসূত।’ শেখ হাসিনা বলেন, বার বার আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যর্থ হয়ে নির্বাচনে কারচুপি করেছে। ক্ষমতায় যাবার পথ বন্ধ করেছে। আবার হত্যার জন্য গ্রেনেড মেরেছে, তারপরও বেঁচে গেছি। এক এগারোর কুশীলবরা যখন জানে মারতে পারে নাই তখন মানে মারার জন্য, রাজনীতি থেকে সরাবার জন্য একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে চলছে। জাতীয় সংসদ এলাকায় উপ-কারাগার তৈরি করে নিঃসঙ্গ কারাবাস দেয়া হয়। ‘ক্যাঙ্গারু কোর্টে’ প্রহসনের বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গ কারাবাসে আমার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। চোখের সমস্যা তীব্র হয়ে ওঠে। আমার স্বামী ড. ওযাজেদ মিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালেও আমাকে দেখতে যেতে দেয়া হয়নি। এ সময় আমি একবারেরও জন্যও মনোবল হারাইনি। সব সময় মনে রাখতাম আমার আব্বা যখন জেলে যেতেন তাঁকেও তো কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি তো তাও একটা বাসায়, একটা কামরায় আছি, যদিও ড্যাম্প পড়া স্যাঁতস্যাঁতে। আব্বাকে তো জেলখানায় সেলের ভেতরে রাখা হয়।

সারাজীবন কত কষ্ট তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে এবং বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন আর এই কষ্ট সহ্য করেছেন।’

তিনি বলেন, দেশ ও জাতি নিয়ে বাবার স্বপ্নের কথা ভেবে এই নিঃসঙ্গ সময়টিকে ব্যবহার করেছি দেশের উন্নয়ন চিন্তায়। বাংলাদেশ কীভাবে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতির শিখরে উঠতে পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা করেছি। নোট নিয়েছি। কত সালের মধ্যে এবং কীভাবে দেশকে নিরক্ষরতামুক্ত করা যাবে, দারিদ্র্য বিমোচন করা যাবে, বিদ্যুৎ দেয়া যাবে, গৃহহীনদের গৃহ দেয়া যাবে, স্বাস্থ্যসেবা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছানো যাবে, কীভাবে দেশব্যাপী ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তোলা যাবে। এসব পরিকল্পনা আমি করেছি সে সময়ে। এই পরিকল্পনা মোতাবেক ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রস্তুত করা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মামলা চলাকালে দেখেছি বিচারকদের কী অসহায় অবস্থা। সবসময় একটা চাপ যেন আদালতে রয়েছে। আমার শুধু মনে হয় এটা কী বিচার হচ্ছে? এ তো প্রহসন! বিচারের নামে প্রহসন চলছে। বিচারকরা কী তাদের বিবেক, চিন্তা, জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে বিচার করতে পারেন? বিচারকরা তো সংবিধান মোতাবেক শপথ নিয়ে থাকেন, সেই শপথ কী রক্ষা করতে পারেন? এ সময় গণআন্দোলন তীব্র হয়। শুধুমাত্র ঢাকা শহরে ২৫ লাখ গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আমার মুক্তির দাবিতে জেগে ওঠে।’

তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে বার বার আপোষের প্রস্তাব আসে। প্রতিবারই প্রত্যাখ্যান করেছি এবং বলেছি একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ ব্যতিত অন্য কোন বিষয়ে আমি আলোচনা করতে রাজি নই। গণমানুষের তীব্র আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার লেজ গোটাতে বাধ্য হয়। ২০০৮ সালের ১১ জুন আমি মুক্ত হই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আমরা সরকার গঠন করি। গণতন্ত্র, মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেই। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত নিরলসভাবে কাজ করে জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণ করি। বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলি।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার