প্রচ্ছদ

গুপ্তহত্যা করে কেউ পার পাবে না: প্রধানমন্ত্রী

০৯ জুন ২০১৬, ০৩:৪৬

ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার

imageপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীদের হাতে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার ঘটনা তুলে ধরে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, গুপ্তহত্যা করে কেউ পার পাবে না। এভাবে পরিবারের ওপর হাত দিতে শুরু করলে কারও হাতই থেমে থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হত্যাকারী এবং তাদের প্রভু যে-ই হোক, তাদের আমরা রেহাই দেব না। যারা পরিবারের ক্ষতি করছে, তাদের হিসাব পাই পাই করে নেব।’
গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ ফজিলাতুন নেসার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
জাতীয় সংসদে বক্তব্যের পর গতকাল দুপুরে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার ঘটনায় দুটি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন কথা বলি, মনে রাখবেন অমূলক কথা বলি না। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমি হেড অব দ্য গভর্নমেন্ট (সরকারপ্রধান)।
সব তথ্য নিশ্চয়ই আমার কাছে আছে। সরকার বসে নেই। গোয়েন্দা সংস্থাও বসে নেই। তদন্তের স্বার্থে হয়তো সব কথা, সব তথ্য প্রকাশ করা যাবে না, কিন্তু সূত্রটা জানা যায়। আর সেই সূত্র ধরেই আমরা কথা বলি।’
জাপান, বুলগেরিয়া ও সৌদি আরব সফর নিয়ে গতকাল দুপুরে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী ৩ থেকে ৭ জুন পর্যন্ত সৌদি আরব, ২৬ থেকে ২৯ মে জাপান এবং ১৮ থেকে ২২ মে বুলগেরিয়া সফর করেন।
জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী: জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যাঁরা গুপ্তহত্যায় জড়িত, তাঁরা যদি মনে করেন গুপ্তহত্যা করে পার পেয়ে যাবেন, ইনশা আল্লাহ তাঁরা পার পাবেন না। তাঁদের বিচার এই বাংলার মাটিতে হবেই হবে।’ তিনি বলেন, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত, গির্জার ফাদারকে আক্রমণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে শিক্ষককে হত্যা করা হচ্ছে। এমনকি এর আগে যেটা কখনো দেখা যায়নি, পুলিশ অফিসার, যিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁর স্ত্রীকে কুপিয়ে আর গুলি করে দিবালোকে হত্যা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি কথা হলো, আজ যারা পরিবারের ওপর হাত দিয়েছে, তারা কি ভুলে যায় তাদেরও পরিবার আছে? তাদেরও বাপ-মা, ভাইবোন আছে? তাদেরও স্ত্রী আছে? একবার একদিক থেকে যদি আঘাত আসে, তাহলে অন্যদিক থেকেও আঘাত যেতে পারে। এটা কি তারা ভুলে যাচ্ছে? কাজেই যারা এ ধরনের সন্ত্রাসী ও গুপ্তহত্যার সঙ্গে জড়িত, তাদের পরিবার, বাবা-মা, ভাইবোন ও স্ত্রীকে বলব, এর থেকে যেন তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরত থাকতে বলেন।’
হত্যাকারীরা সর্বোচ্চ সাজা পাবে—এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা করে যদি কেউ মনে করে দেশ একেবারে উল্টে দেবে, তা কিন্তু তারা পারবে না। হত্যাকারী ঠিকই ধরা পড়বে।’
গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে: গতকাল দুপুরে গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রামে এসপির স্ত্রীসহ গুপ্তহত্যাগুলোর ঘটনায় রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার কারণে মূল অপরাধীরা আড়ালে চলে যায়, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি আপনারা মনে করেন আমরা শুধু রাজনৈতিক কারণে বলছি, তাতে জঙ্গিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে সেই পার পেয়ে যাওয়া জঙ্গিরা কারা? তাদের পরিচয়, নাম-ঠিকানা পেয়ে থাকলে আমাদের জানান। জঙ্গি জঙ্গিই। সে যে দলেরই হোক, তারা রেহাই পাবে না।’
সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।
সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যার ঘটনায় দুটি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন নাম নিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করলেও এদের হত্যার প্রক্রিয়া একই রকম। বাংলাদেশে এ ধরনের জঙ্গি তৎপরতা আমরা আগেও দেখেছি। এখন যারা ওই দুটি রাজনৈতিক দলকে বাঁচাতে চায়, যারা তাদের রক্ষা করতে চায়, তাদের অপকর্মগুলো ঢাকতে চায়, তারাই এ ধরনের প্রশ্ন ওঠায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একসময় তারা বাংলা ভাইকে মিডিয়ার সৃষ্টি বলেছে। কারা ওই সময় পুলিশ প্রহরা দিয়ে জঙ্গিদের দিয়ে মিছিল করিয়েছে, সেগুলো কি আপনারা এত তাড়াতাড়ি ভুলে যান? তাদের সম্পর্কে এত ভালো কথা বলার কী যৌক্তিকতা আছে আমি বুঝি না। আবার অনেকে ওই দলগুলোকে বাঁচাতে চায়।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার ছেলে জয় কী অপরাধ করেছে? আমেরিকায় তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, কারা এফবিআই কর্মকর্তাকে টাকা দিয়ে কিনেছে। ওই ঘটনায় জড়িত এক বিএনপি নেতার নাম বেরিয়ে আসে। এর মধ্যে দুই স্বনামধন্য সাংবাদিকও রয়েছেন। এর মধ্যে একজন আছেন লাল গোলাপের শুভেচ্ছা নিয়ে যিনি সব সময় থাকেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর আপনাদের অনেকে আকুল-ব্যাকুল হয়ে তাঁর সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে দিয়েছেন। তার মানে, জয় হত্যাচেষ্টার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গেও আপনারা একাত্মতা প্রকাশ করতে পারেন। জয়কে শেষ করে দেওয়ার জন্য আমেরিকায় গিয়েও ষড়যন্ত্র করছে তারা। তাই এই গুপ্তহত্যার সঙ্গে যদি তাদের যোগসূত্র পাই, তাহলে কি তা মিথ্যা? যারা ঘোষণা দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে, তারা এর সঙ্গে জড়িত হবে না—এ ধারণা আপনাদের কোত্থেকে আসে? তার মানে, এ ধরনের একটি সন্ত্রাসী দলকে জীবিত রেখেই দিতে হবে!
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুটি রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে জনরোষে পড়ে কৌশল পাল্টেছে। তারা এখন ‘সফট টার্গেট’ ধরে গুপ্তহত্যা শুরু করেছে। ধোঁকা দিয়ে সরকার তাদের বিরুদ্ধে করণীয় ঠিক করছে। তিনি বলেন, দেশবাসীর প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, গুপ্তহত্যাকারীদের খুঁজে বের করুন। তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিন। সবাই সচেষ্ট হলে এদের প্রতিরোধ সম্ভব।
সৌদিসহ অন্য প্রসঙ্গে: অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরবে ২০ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। এখন তাঁরা আকামা পরিবর্তনের (নিয়োগকর্তা ও শহর পরিবর্তন) সুযোগ পান। এ ছাড়া এবার সৌদি সরকার নারী শ্রমিকদের সঙ্গে স্বামী বা পিতাকে নিতে অনুমতি দিয়েছে। আর বাংলাদেশেও এখন কর্মী প্রয়োজন। তাই শ্রমিক পাঠানোর চেয়ে দেশে সৌদি বিনিয়োগের ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৌদি আরব সফরের সময়ে সৌদি বাদশাহ বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
সৌদি আরবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসবাদী সামরিক জোটে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী যেকোনো উদ্যোগে বাংলাদেশ সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবের দুটি পবিত্র মসজিদের নিরাপত্তার জন্য আমরা সকল প্রকার এমনকি সামরিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি।’
দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের কারণে এবারের ইউপি নির্বাচন এত সহিংসতাপূর্ণ কি না—এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূলত মেম্বার পদপ্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটেছে। দেশে অতীতেও এ ধরনের নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন
0Shares

সর্বশেষ সংবাদ শিরোনাম

ফেসবুকে ফেঞ্চুগঞ্জ সমাচার