বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গুরুত্বারোপ
১৬ জুন ২০১৬, ২০:১৮
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, দুটি ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের নিজস্ব স্বার্থেই এটি করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার নূর আশিকিন বিনতি মোহাম্মদ তাইব আজ সকালে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় সংসদ ভবনস্থ কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বৈঠকের বিষয়ে অবহিত করেন।
বৈঠকে দারিদ্র দূরীকরণে তাঁর সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘আমরা দ্রুততার সঙ্গে দেশের উন্নয়ন সাধনের চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে কানেকটিভিটি উন্নয়ন প্রসেেঙ্গ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ-ভূটান-ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন) মোটর ভিহেকেল অ্যাগ্রিমেন্ট সম্পাদন এবং বাংলাদেশ-চীন-ইন্ডিয়া-মায়ানমার (বিসিআইএম) অর্থনৈতিক করিডোর প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এসব উদোগের ফলে আমাদের সামনে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কানেকটিভিটি’র এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কানেকটিভি সম্প্রসারণের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশীয় সরকারের সহযোগিতাতেই দেশের মহেশখালিতে বর্তমানে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।
বিদ্যুৎখাতে দেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের প্রায় সাড়ে ৭ বছরের শাসনকালে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে বর্তমানে ১৪ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ মালয়েশিয়ার সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত রয়েছে বলেও হাইকমিশনারকে অবহিত করেন।
স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ায় তাঁর সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এজন্য সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ব্যয়ে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে রাজধানীর অদূরে মালয়েশিয়ার সহযোগিতায় শেখ ফজিলাতুন্নেসা কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করার কথাও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দেশে একটি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
তিনি বলেন, গত ‘৯৬-২০০১’ সালের মেয়াদে সরকারে থাকার সময় দেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু, পরবর্তিতে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেই সে সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলো বন্ধ করে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় পানিবন্টন এবং সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে বিবদমান দ্বন্দ্ব-সংঘাত শান্তিপূর্ণ নিরসনে তাঁর সরকারের সাফল্যের কথাও উল্লেখ করেন।
সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির পুনরোল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কোন দেশের বিরুদ্ধেই সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর জন্য বাংলাদেশের মাটিকে ব্যবহারের সুযোগ পাবে না।’
বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক মালয়েশিয়া সফরের স্মৃতিচারন করে বলেন, সেই সফরের মাধ্যমেই আমাদের ভাতৃপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান চমৎকার সম্পর্কের ভীত রচিত হয়। যা এখনও অটুট রয়েছে।
নবনিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার এ সময় বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সহযোগিতাকে উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মালয়েশিয় হাইকমিশনার দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের ক্ষেত্র হিসেবে জনপ্রশাসন, প্রশিক্ষণ এবং কৃষিকে চিহ্নিত করে দুটি দেশ এ বিষয়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশের সরকারের ন্যয় তাঁর সরকার ও বর্তমানে কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও তিনি জানান।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন