যতবার আওয়ামী লীগ ভাঙ্গার চেষ্টা হয়েছে ততবারই এটি স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
২৩ জুন ২০১৬, ২০:০৫
আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে নিজের সবকিছু
আত্মত্যাগ করে দেশ ও জাতির কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ হওয়ার আহ্বান
”সততা সবচেয়ে বড় শক্তি। সততা দিয়েই যেকোনো দুর্যোগ ও দুর্বিপাক মোকাবিলা করা যায়। যে সততা দিয়ে উঁচু গলা কথা বলার সাহস জোগায়, সততার এই শক্তি বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই শিখেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সংগঠনের প্রাণভোমরা অভিহিত করে বলেছেন, এসব ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কারণেই যতবার আওয়ামী লীগকে ভাঙ্গার চেষ্টা হয়েছে ততবার আওয়ামী লীগ আরও উজ্জ্বল এবং স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আমি এই আহবান জানাব- একজন রাজনৈতিক নেতা যদি সততার সাথে কাজ করতে পারে, তবে সেই সততাই হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো শক্তি। যে শক্তি দিয়ে যেকোন দুর্যোগ বা দুর্বিপাক মোকাবেলা করা যায়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও অধ্যাপক ড. অনুপম সেন, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও জাহাঙ্গীর কবীর নানক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগর প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
শত ষড়যন্ত্র-নির্যাতনেও আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে না পরার কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের শেকড় অত্যন্ত গভীরে প্রোথিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের যে তৃণমূলের নেতা-কর্মী, এই নেতা-কর্মীরাই সবসময় যেকোন ক্রান্তিকালে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘উপরের নেতারা কখনো কখনো ভুল করেছেন। কিন্তু, তৃণমূলের নেতারা কখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল করেন নাই। যে নির্দেশনা জাতির পিতা দিয়েছেন সেই নিদের্শনা সঠিকভাবে মেনেই কিন্তু এই সংগঠন এগিয়ে চলেছে। যতবার আঘাত এসেছে যতবার এই দলভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে ততবরাই এই দল আরও উজ্জ্বল হয়ে জনগণের সামনে আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হয়েছে এবং আরও শক্তিশালী হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, দলটির প্রতি আঘাত একবার আসেনি, বার বার এসেছে। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতিই যখন পার্টি ভেঙ্গে চলে যায় তখন সে পার্টি টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়। সে সময় বঙ্গবন্ধুর মতো ত্যাগী স্বাধীনচেতা এতো বলিষ্ঠ নেতা এই পার্টিতে ছিলেন বলেই এই দল যেমন টিকে গেছে, তেমনি শক্তিশালীও হয়েছে।
আজও আমরা বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আঘাত আমাদের ওপর বার বার এসেছে। প্রতিঘাতে সে আঘাত ফেরত দিয়ে আমরা বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আমি এই আহবান জানাব, একজন রাজনৈতিক নেতা যদি সততার সাথে কাজ করতে পারে, তবে সেই সততাই হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো শক্তি। যে শক্তি দিয়ে যেকোন দুর্যোগ বা দুর্বিপাক মোকাবেলা করা যায়। যে সততা উঁচু গলায় কথা বলার সাহস যোগায়, সেই সততার শিক্ষা আমরা বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই পেয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে যারা রাজনীতি করেন, তারা হয়তো নিজেদের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন, কিন্তু দেশকে কখনও কিছু দিতে পারেন না। আমাদের একটাই লক্ষ্য, জনগণের কল্যাণ। আওয়ামী লীগ সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছে। সেভাবেই আগামীতে কাজ করে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার অঙ্গীকারই হচ্ছে বাংলার মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেয়া, উন্নত জীবন দেয়াÑ যেটা বঙ্গবন্ধু সবসময় বলতেন যে, বাংলার মানষু যেন অণœ পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবন পায়Ñ এটাই তাঁর কামনা। আর তাঁর এই কামনা পূরণ করাই আমাদের লক্ষ্য, অন্তত অণœ, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা এই মৌলিক অধিকারগুলোর সংস্থান করা।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক সামসুল হক এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
এ ছাড়াও শেখ হাসিনা জাতীয় চার-নেতাসহ দলের পূর্বসূরি নেতা-কর্মীদের-যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা ও ত্যাগের বিনিময়ে আওয়ামী লীগ গণমানুষের এক বিশাল সংগঠনে পরিণত হয়েছেÑ তাদের স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, ঢাকার কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ ভূখন্ডে যা কিছু বিশাল অর্জন তা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের ইতিহাসের সঙ্গে এ দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫২’র ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৬২’র আইয়ুবের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৪’র দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ১৯৬৬’র ৬-দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানÑ সবই পরিচালিত হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইফতার পার্টিতে বসে অজস্র মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের প্রহসনের নির্বাচনে খুনি রশীদ ও হুদাকে সংসদ সদস্য করেন। এরপরেও তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন তখন যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাদের এখন ফাঁসি হয়েছে তাদের মন্ত্রী করেছিলেন। তার আগে জেনারেল এরশাদও কম যাননি। ঠিক তারও আগে খুনিদের, দেশ বিরোধীদের বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দেশে আনেন ও রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন। যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তাদেরই জিয়া-খালেদা ক্ষমতায় বসান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া সরকারে থাকার সময় বিভিন্ন অপকর্ম করেছেন, তার অপশাসন থেকে দেশকে মুক্ত করতে আওয়ামী লীগ সংগ্রাম করেছে। সংগ্রাম করে করেই আওয়ামী লীগকে যুগে যুগে টিকে থাকতে হয়েছে। বাঙালির প্রতিটি অর্জনেই আওয়ামী লীগের অবদান রয়েছেÑ সেই ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু। দেশের প্রতিটি শহীদের তালিকায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর নাম রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের খন্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, গত সাড়ে সাত বছরে আমাদের সরকার দেশের কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ উন্নয়ন, পররাষ্ট্র নীতি ও কৌশলসহ প্রতিটি সেক্টরে নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ব্যাপক উন্নয়ন বাস্তবায়ন করেছে। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ শতাংশে উন্নীত এবং দারিদ্র্যের হার ২২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। রিজার্ভ ২৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ কোটি মানুষ নিন্ম-আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ববর্তী অসহযোগ আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের ভূমিকা তুলে ধরেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর কন্ঠে বাংলার স্বাধীনতার অনুষ্ঠানিক ঘোষণার ও স্মৃতিচারণ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি জাতির প্রতিটি মহৎ এবং শুভ অর্জনে আওয়ামী লীগের সংগ্রামী ও ত্যাগী ভূমিকা রয়েছে। ভবিষ্যতেও আওয়ামী লীগ এ দেশের জনগণের পাশে থাকবে। দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করবে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দেশের প্রতিটি নাগরিককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত করেছে। রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ ও রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
সংবাদটি ভাল লাগলে শেয়ার করুন